মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, ঢাকা যদি তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনে, তবেই দুইজনকে ফেরত দেওয়া যেতে পারে।
দুই ব্যবসায়ীকে ফেরাতে বাংলাদেশ যে আবেদন করেছে, ঢাকার কাছে তার কারণ জানতে চেয়েছে মালয়েশিয়া সরকার।
মালয়েশিয়ার সংবাদপত্র ফ্রি মালয়েশিয়া টুডের এক খবরে এই তথ্য জানানো হয়েছে।
এই দুই ব্যবসায়ীর একজন হচ্ছেন বেস্টিনেট এসডিএন বিএইচডির প্রতিষ্ঠাতা আমিনুল ইসলাম বিন আমিন নূর, যিনি বাংলাদেশি বংশোদ্ভুত মালয়েশিয় নাগরিক।
আরেকজন হচ্ছেন আমিনুলের ব্যবসায়িক সহযোগী রুহুল আমিন স্বপন। ঢাকায় ক্যাথারসিস ইন্টারন্যাশনাল নামের একটি রিক্রুটিং এজিন্সের মালিক তিনি। এই প্রতিষ্ঠান ১৯৯৭ সাল থেকে বিদেশে জনশক্তি রপ্তানি করে আসছে।
তাদের দুজনের বিরুদ্ধে সিন্ডিকেট করে জনশক্তি রপ্তানির মাধ্যমে বিপুল অর্থ হাতিয়ে নেওয়াসহ বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে বাংলাদেশে।
অর্থপাচার, অভিবাসী শ্রমিকদের কাছ থেকে জোর করে অর্থ আদায় ও মানবপাচারের অভিযোগের তদন্তের অংশ হিসেবে দুই ব্যবসায়ীকে গ্রেপ্তার করে বাংলাদেশে ফেরত পাঠাতে মালয়েশিয়া কর্তৃপক্ষকে গত ২৪ অক্টোবর চিঠি দেয় বাংলাদেশ পুলিশ।
এ বিষয়ে এক অনুষ্ঠানের ফাঁকে ফ্রি মালয়েশিয়া টুডে’কে দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাইফুদ্দিন নাসুশন বলেন, “আমিনুল ও রুহুলকে শুধু তদন্তের অংশ হিসেবে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে নাকি আদালতে তাদেরকে অভিযুক্ত করা হবে, ঢাকার উচিত সেটি পরিষ্কার করা।”
ঢাকার প্রত্যর্পণের আবেদনে কোনো কারণ উল্লেখ করা হয়নি বলেও জানান তিনি।
সাইফুদ্দিন বলেন, “(প্রত্যর্পণের) উদ্দেশ্য আগে আমাদেরকে নিশ্চিত করতে হবে। যদি ঢাকার উদ্দশ্য হয় তদন্ত সংশ্লিষ্ট, তাহলে সেজন্য তাদের উচিত পারস্পরিক আইনি পথ অনুসরণ করা। যদি ঢাকার উদ্দেশ্য হয় এই দুই ব্যক্তিকে আদালতে অভিযুক্ত করা, তাহলে তাদের বলা উচিত যে, এটিই প্রত্যর্পণের উদ্দেশ্য।
মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, ঢাকা যদি তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনে, তবেই দুইজনকে ফেরত দেওয়া যেতে পারে।
বাংলাদেশের প্রত্যর্পণ আবেদন নিয়ে মতামত জানতে অ্যাটর্নি জেনারেল এবং আইজিপির সঙ্গে আলোচনাও করেছেন বলে জানান তিনি।
“আমার মনে হয়, আইজিপি বিষয়টি দেখবেন এবং বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করবেন।”
ব্লুমবার্গের এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, এই দুই ব্যাবসায়ীর বিরুদ্ধে ওঠা মুদ্রাপাচার, চাঁদাবাজি এবং অভিবাসী শ্রমিক পাচারের অভিযোগ তদন্তের অংশ হিসেবে দুইজনকে গ্রেপ্তার করে প্রত্যর্পণ করতে পুত্রজায়াকে লিখিতভাবে অনুরোধ জানিয়েছে বাংলাদেশের পুলিশ।
দুইজনের বিষয়ে ২৪ অক্টোবর ইন্টারপোলের মাধ্যমে পাঠানো ওই চিঠিতে বলা হয়েছে, একটি ব্যবস্থার মাধ্যমে ভুক্তভোগীদের কাছ থেকে জালিয়াতির মাধ্যমে অর্থ আদায় করে তাদের ‘শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের’ সুযোগ করে দিয়েছেন তারা।
যদিও আমিনুল এবং রুহুল আমিন এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
বাংলাদেশ পুলিশের পক্ষ থেকে আমিনুলের বেস্টিনেট থেকে সরবরাহ করা কমপিউটার সফটওয়্যার সাময়িকভাবে বন্ধ রাখারও অনুরোধ করেছে।
বেস্টিনেট সম্প্রতি মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে ফরেন ওয়ার্কার্স সেন্ট্রালাইজড ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমের (এফডব্লিউসিএমএস) উন্নয়ন ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য ছয় বছরের জন্য চুক্তিবদ্ধ হয়েছে।
এফডব্লিউসিএমএসে বেস্টিনেটের ২৪ জন অননুমোদিত ব্যবহারকারী বিদেশি শ্রমিক নেওয়ার আবেদন অনুমোদনে জড়িত বলে গত জুলাইয়ে অভিযোগ করেছিল মালয়েশিয়ার পাবলিক অ্যাকাউন্টস কমিটি।
তাছাড়া ২০২২ সালের অডিটর-জেনারেলের প্রতিবেদনেও দেখা গেছে, বিদেশি কর্মী নিতে সরকার ও বেস্টিনেটের মধ্যে কোনো আনুষ্ঠানিক চুক্তি ছিল না।
অন্যদিকে ঢাকার রিক্রুটিং এজেন্সি ক্যাথারসিস ইন্টারন্যাশনালের মালিক রুহুল আমিন স্বপনের বিরুদ্ধে সরকারের উচ্চপর্যায়ে আঁতাত করে মালয়েশিয়ায় শ্রমিক পাঠানোর সিন্ডিকেট গড়ে তোলার অভিযোগ বেশ পুরনো।
তার বিরুদ্ধে ওঠা বিভিন্ন অভিযোগ অনুসন্ধানও করছে এনবিআরের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সেল-সিআইসি।
এনবিআরের গোয়েন্দাদের ভাষ্য, এই কাজে মালয়েশিয়ায় তার বড় সহযোগী আনিমুল ইসলাম বিন আমিন নূর।
আমিনুলের সঙ্গে ‘সিন্ডিকেট’ করে সরকারি খরচের চেয়ে কয়েক গুণ বাড়তি টাকা নেওয়া, সঠিক কাজ না দেওয়াসহ মালয়েশিয়ায় শ্রমিক পাঠিয়ে অর্থপাচারের নানা অভিযোগে বিভিন্ন সময়ে গণমাধ্যমের শিরোনামও হয়েছেন তিনি।
মালয়েশিয়ায় শ্রমিক পাঠাতে আমিনুলের সঙ্গে কারসাজি করে ১০০টি এজেন্সির একটি চক্র বা সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছিলেন তিনি।
গোয়েন্দারা বলছেন, শ্রমিক পাঠানোর ক্ষেত্রে এই চক্রের জাল-জালিয়াতি, সঠিক কাজ না দেওয়া, নিবন্ধন ও মেডিকেলের নামে বাড়তি অর্থ নেওয়া এবং অর্থপাচারের মত অভিযোগের কারণে বাংলাদেশের জন্য মালয়েশিয়ায় শ্রমবাজারের দরজা বারবার বন্ধ হওয়ার ঘটনাও ঘটেছে। সর্বশেষ গত মে মাসে মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠানো বন্ধ হয় তাদের জন্য।
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post