কার নির্দেশে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বিমান বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে তা লিখিত আকারে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) কাছে জানতে চেয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। একইসঙ্গে ‘ইন এইড টু সিভিল পাওয়ার অ্যাক্টে’ বেবিচকের বিধিমালা অনুযায়ী বিমানবন্দরে বিমান বাহিনীর সদস্যের মোতায়েন করার সুযোগ আছে কিনা তাও জানতে চাওয়া হয়।
গত ২৯ অক্টোবর অর্থ মন্ত্রণালয়ের উপসচিব সৈয়দ আলী বিন হাসান স্বাক্ষরিত এক চিঠি বেবিচক চেয়ারম্যান বরাবর দেওয়া হয়েছে। ৩০ অক্টোবর এই চিঠি বেবিচক গ্রহণ করে।
এদিকে বিমানবন্দরে নিরাপত্তায় নিয়োজিত জনবল বৃদ্ধির বিষয়েও ব্যাখ্যা চেয়েছে বেসামরিক বিমান পরিবহণ ও পর্যটন মন্ত্রণালয়। গত ৩ নভেম্বর পৃথক এই পত্রটি পত্র বেবিচকে পাঠানো হয়।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের উপসচিব সৈয়দ আলী বিন হাসান স্বাক্ষরিত চিঠিতে প্রথমেই জানতে চাওয়া হয়েছে, বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর ১৪৫০ জন সদস্যদের ইন এইড টু সিভিল পাওয়ার অ্যাক্টের এর আওতাভুক্ত হওয়ার বিষয়ে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব প্রাপ্ত উপদেষ্টা, প্রধান উপদেষ্টা-এর সম্মতি গ্রহণ করা হয়েছে কিনা? বেবিচক-এর বিধিমালা বা প্রবিধানমালা অনুযায়ী ইন এইড টু সিভিল পাওয়ার অ্যাক্টে বিমান বাহিনীর সদস্যদের নিয়োজিত করার সুযোগ আছে কিনা? ইন এইড টু সিভিল পাওয়ার অ্যাক্টে নিয়োজিত বিমান বাহিনীর সদস্যদের ভাতা প্রদানের ক্ষেত্রে বেবিচকের সংশ্লিষ্ট আইন ও বিধি কী রয়েছে? এবং বেবিচকের নিজস্ব তহবিল থেকে ভাতা দিতে কী পরিমাণ আর্থিক সংশ্লেষ হবে, এ পরিমাণ অর্থ বেবিচকের অর্থ বছরভিত্তিক আয়-ব্যয়ের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ কিনা তার তথ্যচিত্র।
অন্যদিকে বেসামরকি বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব (রুটিন দায়িত্বে) রুমান ইয়াসমিন স্বাক্ষরিত চিঠিতে বিমানবন্দরগুলোর নিরাপত্তায় নিয়োজিত জনবল বৃদ্ধির বিষয়ে বেবিচক চেয়ারম্যানকে ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়েছে। এতে বলা হয়, বিমানবন্দরে নিরাপত্তায় নিয়োজিত বিমানবাহিনীর সদস্যা সংখ্যা ২০২১ সালের অনুমোদিত সংখ্যা হতে ধাপে ধাপে কোন প্রক্রিয়ায় এবং কোন কর্তৃপক্ষের অনুমোদনে বৃদ্ধি করা হয়েছে তার তথ্যসহ ব্যাখ্যা প্রদানের জন্য নির্দেশ দেওয়া হলো।
এই দুই চিঠির বিষয় ফাঁস হওয়া পর শাহজালাল জুড়ে চলছে নানা আলোচনা। বেবিচকের কর্মকর্তাদের সাম্প্রতিক সময়ের কিছু সিদ্ধান্তের কারণে মন্ত্রণালয়ের এমন সিদ্ধান্ত বলে মনে করছেন অনেকেই।
অভিযোগ আছে, সিভিল এভিয়েশনের নিয়ন্ত্রণাধীন এভিয়েশন সিকিউরিটি ফোর্সের (এভসেক) যে জনবল রয়েছে তা মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের বাইরে। মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন ছাড়াই বিমান বাহিনী থেকে ৫০০ এর বেশি জনবল নিয়োগ দিয়েছে সিভিল এভিয়েশন কর্তৃপক্ষ।
অনুসন্ধানে জানা যায়, হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নিরাপত্তা জোরদার করার লক্ষ্যে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) এক আবেদনের পর মন্ত্রণালয় জানায়, সরকারি চাকরিরত কোনও ডিসিপ্লিনড ফোর্সের সদস্যদের আইনসম্মতভাবে বছরের পর বছর অন্য কোথাও সংযুক্ত রাখা সম্ভব নয়।
বেবিচকের অনুমোদিত জনবল কাঠামোভুক্ত পদগুলোর মধ্যে এভিয়েশন সিকিউরিটি বিভাগের ৪৮৯টি শূন্যপদে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে জনবল নিয়োগ ও প্রশিক্ষণ প্রদান এবং প্রশিক্ষণ শেষে শাহজালাল বিমানবন্দরে পদায়নের সুযোগ রয়েছে। সেক্ষেত্রে প্রতিরক্ষা বাহিনীর সদস্যদের তাদের নির্ধারিত দায়িত্বের বাইরে বিমানবন্দরে আনার আবশ্যকতা থাকবে না।
২০২১ সালের ৩১ ডিসেম্বর থেকে মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন ছাড়াই বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর ১৬০ জন, বাংলাদেশ পুলিশের ৭৯ জন শাহজালালে কর্মরত আছেন। তাদের মধ্যে বিমানবাহিনীর সদস্যদের দৈনিক ভাতা ও পোশাকভাতা প্রদানে সরকার স্বীকৃত কোনও আইন বা বিধি বা নিয়ম অনুসরণ করা হয়নি, জানায় মন্ত্রণালয়।
এরপর চলতি বছরের গত ৩ অক্টোবর আবারও মন্ত্রণালয়ে আবেদন করে বেবিচক। সেখানে ৩২৮ জনসহ আরও প্রায় ১ হাজার জনের নিয়োগের অনুমোদন চাওয়া হয়। এই অনুমোদন হওয়ার আগেই বর্তমানে প্রায় ৮৫০ জন বিমান বাহিনীর সদস্য কাজ শুরু করছেন।
সিভিল এভিয়শনের চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মঞ্জুর কবীর ভুঁইয়া এই দুই চিঠির সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, এটা রুটিন ওয়ার্ক। আমাদের কাছে যে বিষয়গুলো জানতে চাওয়া হয়েছে তার উত্তর দিয়েছি।
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post