খেলনা ড্রোন ছাড়া বাকি সব ধরনের ড্রোন প্রতিবার ওড়াতে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) লাইসেন্স বাধ্যতামূলক করা হচ্ছে। এমন ড্রোন আমদানির জন্য প্রতিরক্ষা ও জননিরাপত্তা বিভাগের অনুমতি নিতে হবে। এ ছাড়া ড্রোন ওড়ানোর এলাকাও নির্দিষ্ট করে দেওয়া হচ্ছে।
‘ড্রোন বিধিমালা ২০২৪’-এর খসড়ায় এসব বিধান রয়েছে। এই বিধিমালা প্রণয়ন করেছে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়। ইতিমধ্যে বিধিমালার খসড়া তৈরি করা হয়েছে। খসড়ায় ড্রোন আমদানি, নিবন্ধন, চালকের যোগ্যতা নির্ধারণের পাশাপাশি নিয়ম লঙ্ঘনে শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে।
দেশে স্থির ও ভিডিওচিত্র ধারণ, গবেষণা, জরিপ, চলচ্চিত্র নির্মাণ, উন্নয়ন প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাইসহ বিভিন্ন কাজ ছাড়াও বিনোদনের জন্য ড্রোনের ব্যবহার বাড়ছে। এতে ড্রোনের অপব্যবহারের মাধ্যমে নাশকতা ও অনৈতিক কর্মকাণ্ড ঘটানোরও শঙ্কা বাড়ছে। এ অবস্থায় ড্রোনের আমদানি, ব্যবহার ও পরিচালনার বিষয়ে এ বিধিমালা করা হচ্ছে। সূত্র বলেছে, খসড়ায় ড্রোনকে তিনটি শ্রেণিতে ভাগ করা হয়েছে। এগুলো হলো খেলনাজাতীয়, খেলনাজাতীয় ছাড়া অন্য সব ড্রোন এবং মানুষ ও পণ্যবাহী ড্রোন। দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণির ড্রোন ওড়ানো এবং ব্যবহারের ক্ষেত্রে সনদ, অনুমতি নেওয়াসহ বিধিমালা করা হচ্ছে।
জানতে চাইলে বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব আব্দুন নাসের খান বলেন, বিভিন্ন কাজে ড্রোনের ব্যবহার প্রতিনিয়ত বাড়ছে। এটিকে নিয়মের মধ্যে আনতে ড্রোন বিধিমালা, ২০২৪ প্রণয়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে বিধিমালার খসড়া প্রস্তুত করা হয়েছে। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের মতামত দিতে ৬ নভেম্বর থেকে ২১ দিনের সময় দেওয়া হয়েছে। মতামত আসছে। প্রয়োজন সাপেক্ষে সংযোজন-বিয়োজন করে ড্রোন বিধিমালা প্রণয়ন করা হবে।
মন্ত্রণালয়ের সূত্রে জানা গেছে, ড্রোন বিধিমালার খসড়ায় অডিও বা ভিডিও রেকর্ডিং সুবিধা না থাকা এবং ২৫০ গ্রাম ওজনের বেশি নয়, এমন ড্রোনকে খেলনা বলা হয়েছে। বাকি সব ধরনের ড্রোন উড্ডয়নের এলাকা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। এসব ড্রোন আমদানি করতে হলে প্রতিরক্ষা ও জননিরাপত্তা বিভাগের অনুমতি নিতে হবে। এমন ড্রোন ওড়াতে ১৬ বছরের বেশি বয়সী ব্যক্তির ড্রোন ওড়ানোর ক্ষেত্রে বেবিচক নির্ধারিত প্রশিক্ষণ, যোগ্যতা লাইসেন্স থাকতে হবে এবং আকাশসীমা সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা থাকতে হবে।
খসড়ায় বলা হয়েছে, প্রতিবার ওড়ানোর আগে বেবিচকের মাধ্যমে আকাশ প্রতিরক্ষা পরিচালন কেন্দ্র, প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা মহাপরিদপ্তর (ডিজিএফআই), জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থা (এনএসআই), বিমান গোয়েন্দা পরিদপ্তর, পুলিশ অধিদপ্তর, বাংলাদেশ বর্ডার গার্ড (বিজিবি) সদর দপ্তর এবং অন্য কোনো নিরাপত্তা বিভাগ, সংস্থা বা বাহিনী থেকে অনুমতি নিতে হবে। অনুমতি ছাড়া ড্রোন ব্যবহার করলে তা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা-গোপনীয়তা, জননিরাপত্তা, বিমান চলাচলের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হলে প্রচলিত আইন ও বিধানাবলি সাপেক্ষে শাস্তিযোগ্য বিবেচিত হবে। এ জন্য দণ্ডবিধি, ১৮৬০ এবং বেবিচক আইন, ২০১৭ অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া যাবে।
খসড়ায় আরও বলা হয়েছে, খেলনাজাতীয় ড্রোন ১০০ মিটার পর্যন্ত নিয়ন্ত্রণযন্ত্রের (রিমোট কন্ট্রোল) মাধ্যমে ওড়ানো যাবে। এ ধরনের ড্রোনে কোনো অডিও বা ভিডিও রেকর্ডিং সুবিধা থাকতে পারবে না।
খসড়ায় তিন শ্রেণির ড্রোনের জন্য অঞ্চলও নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়েছে। খেলনা ড্রোন অনুমতি ছাড়াই গ্রিন জোনে অর্থাৎ ৬০ মিটার বা ২০০ ফুট পর্যন্ত উড়তে পারবে। ইয়েলো জোন অর্থাৎ বিমানবন্দরের ৩ থেকে ৫ কিলোমিটার পর্যন্ত এলাকা, কেপিআই ও তৎসংলগ্ন চারদিকের ৫০০ মিটার, ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা, জনসমাগম, সভা-সমাবেশ ও উৎসবস্থল ইত্যাদি ক্ষেত্রে ড্রোন ওড়াতে বেবিচকের অনুমতি নিতে হবে। বিমানবন্দরের ৩ কিলোমিটার, নিষিদ্ধ এলাকা, সংরক্ষিত এলাকা, সামরিক এলাকা, বিপজ্জনক এলাকা, বিশেষ কেপিআই ও তৎসংলগ্ন চারদিকের ১ কিলোমিটার, আন্তর্জাতিক সীমানা থেকে দেশের অভ্যন্তরে ৫ কিলোমিটার পর্যন্ত এলাকা রেড জোন। রেড জোনে ড্রোন ওড়াতে এলাকাভেদে পুলিশ, ডিজিএফআই, এনএসআই, বিজিবি অথবা সংশ্লিষ্ট বাহিনীর অনাপত্তি সাপেক্ষে বেবিচকের বিশেষ অনুমতি নিতে হবে। তবে খেলনাজাতীয় ড্রোন ছাড়া অন্য সব ড্রোন এবং মানুষ ও পণ্য বহনকারী ড্রোন রাতে ওড়াতে বেবিচকের অনুমতি নিতে হবে।
খসড়ায় বলা হয়েছে, ড্রোন ও এর যন্ত্রাংশ আমদানির জন্য জননিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষা বিভাগের অনাপত্তি নিতে হবে। এ দুই বিভাগের অনাপত্তি ও শিল্প মন্ত্রণালয়ের নির্ধারিত পদ্ধতি অনুসরণ করে ড্রোন ও যন্ত্রাংশ তৈরি এবং সংযোজন কারখানা স্থাপন করারও সুযোগ রয়েছে। প্রতিরক্ষা ও জননিরাপত্তা বিভাগ অনাপত্তিপত্র দেওয়ার এক বছরের মধ্যে অনুমোদিত স্পেসিফিকেশন মোতাবেক ড্রোন বা যন্ত্রাংশ সরকারের আমদানি বা রপ্তানি নীতিমালা অনুসরণ করে আমদানি করা যাবে।
খসড়া বিধিমালায় ড্রোনের নিবন্ধন বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। ড্রোনের নিবন্ধন ও পরিচিতি নম্বর দেবে বেবিচক। এ জন্য ব্যবহারের উদ্দেশ্য, স্পেসিফিকেশনের কপি, ক্রয় বা আমদানির কাগজপত্র, প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের অনাপত্তি এবং বেবিচকের চাহিদা মোতাবেক অন্যান্য নথিপত্র জমা দিতে হবে।
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post