গাজীপুরের শ্রীপুরের গোসিঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. ছাইদুর রহমান ওরফে শাহীন মোড়লের বিরুদ্ধে সরকারি খাস খতিয়ানের জমি দখল করে বহুতল ভবন নির্মাণের অভিযোগ উঠেছে। নির্মাণের সময় দলীয় প্রভাবের কারণে কাজ বন্ধ করতে না পারলেও এখন স্থানীয় ভূমি অফিস সরকারি জমি দখলমুক্ত করতে ও অবৈধ ভবন উচ্ছেদে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন জমা দিয়েছে বলে জানা গেছে।
মো. ছাইদুর রহমান ওরফে শাহীন মোড়ল গোসিঙ্গা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। সাবেক আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য মুহাম্মদ ইকবাল হোসেন সবুজের ঘনিষ্ঠজন হিসেবে নৌকা প্রতীকে ২০২১ সালে প্রথমবারের মতো চেয়ারম্যান পদে দায়িত্ব পান।
ভূমি অফিস সূত্রে জানা যায়, গোসিঙ্গা বাজারে গোসিঙ্গা মৌজার সরকারি ১নং খাস খতিয়ানভুক্ত আর.এস- ৪৭৫৭ দাগের ৫৮ শতাংশ জমিটি সরকারের মালিকানাধীন। বর্তমানে এ জমির মূল্য কয়েক কোটি টাকা। ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগের প্রভাব বিস্তার করে এ জায়গার দখল নিয়ে বহুতল ভবন নির্মাণ করেন। স্থানীয় ভূমি অফিস বেশ কয়েকবার বাধা দিয়েও ভবন নির্মাণে তাকে থামানো যায়নি। উল্টো ভূমি কর্মকর্তাদের হুমকি দিয়ে বহুতল ভবনের দ্বিতীয় তলা পর্যন্ত কাজ শেষ করেন। এমনকি বহুতল ভবনে বিভিন্ন ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে জামানত গ্রহণ করে থেকে বছরে লাখ টাকা ভাড়াও আদায় করেছেন।
এ ভবনের সব নিয়ন্ত্রণ চেয়ারম্যানের হাতে থাকলেও তার সঙ্গে অংশীদার হিসেবে আছেন গোসিঙ্গা উচ্চ বিদ্যালয়ের অফিস সহকারী আসাদুজ্জামান ও আওয়ামী লীগ নেতা আলাউদ্দিন বাচ্চু।
স্থানীয়রা জানান, মো. ছাইদুর রহমান চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়ে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই বানার নদের বালু মহালের নিয়ন্ত্রণ, গোসিঙ্গা বাজার এলাকায় বানার নদের পাড় ভরাট করে বাজার সম্প্রারণ, নদের জায়গায় সরকারি প্রকল্প দিয়ে রাস্তা তৈরিসহ বনের জায়গা দখলের সহযোগিতার অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে। এছাড়া শিল্প কারখানাকে (সিমেন্ট উৎপাদক) নদীর ঘাট ব্যবহারের অনুমতি দেওয়ার নামে লাখ লাখ টাকা নেওয়ার অভিযোগ ছিল তার বিরুদ্ধে। সাবেক সংসদ সদস্যের কাছের হওয়ায় সব জায়গায় প্রভাব বিস্তার করতেন তিনি। যদিও ৫ আগস্টের পর গা ঢাকা দিয়েছেন আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী এ চেয়ারম্যান।
এসব বিষয়ে বক্তব্যের জন্য চেয়ারম্যান মো. ছাইদুর রহমানকে পাওয়া যায়নি। তার ব্যবহৃত ব্যক্তিগত মোবাইলে কল দিলেও তা বন্ধ পাওয়া যায়।
ভবনের অপর অংশীদার আলাউদ্দিন বাচ্চু বর্তমানে কারাগারে আছে। তবে অপরজন আসাদুজ্জামান বলেন, আর.এস রেকর্ডে এ জায়গা সরকারের নামে ভুলবশত রেকর্ড হয়েছে, আমরা মামলা করেছি। ভবন নির্মাণের বিষয়ে তিনি বলেন, আসলে আমি তো এত কিছু বুঝি না, আপনারা চেয়ারম্যান সাহেবের সঙ্গে যোগাযোগ করেন।
গোসিঙ্গা ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা আব্দুল হাই বলেন, আমার যোগদানের অনেক আগেই ভবন নির্মাণ করেছিল। অফিসে থাকা ফাইল ঘেঁটে দেখেছি, আমার আগে যেসব ভূমি কর্মকর্তা দায়িত্বে ছিলেন তারা সরকারি জমি দখলের বিষয়টি চিঠির মাধ্যমে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেছেন। তারা মূলত রাতের আধারে, সরকারি ছুটির দিনে ভবন নির্মাণ করেছে। অনেক প্রচেষ্টা করেও সরকারি জমিতে কাজ বন্ধ করা যায়নি। উচ্ছেদ প্রস্তাব সহকারী কমিশনার ভূমি কার্যালয়ে পাঠানো হয়েছে।
শ্রীপুর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) আতাহার শাকিল বলেন, জেলা প্রশাসনের কাছে আমরা এ ভূমিটি অবৈধ দখলমুক্ত করতে উচ্ছেদ প্রস্তাব দিয়েছি।
গাজীপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মোহাম্মদ কায়সার খসরু বলেন, সরকারি জমি অবৈধ দখল মুক্ত করতে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post