টাঙ্গাইলের সখীপুরে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এক শিক্ষককে ‘কুকুর’ সম্বোধন করে তাঁর ছবি দিয়ে যৌন হয়রানির অভিযোগ তুলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে একটি পোস্ট করেন এক শিক্ষার্থী। গতকাল সোমবার ফেসবুকে পোস্ট করার পর বিকেলে বাজারে সবার সামনে ওই শিক্ষককে অপমানও করেন।
ওই ঘটনার পর মঙ্গলবার বেলা ১১টার দিকে বাড়ি থেকে ওই শিক্ষকের ‘ঝুলন্ত’ লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। পরে লাশ ময়নাতদন্তের জন্য টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়। স্বজনদের দাবি, অপমান সইতে না পেরে ওই শিক্ষক আত্মহত্যা করতে বাধ্য হয়েছেন।
মৃত ব্যক্তি উপজেলার একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ছিলেন। ফেসবুকে পোস্টদাতা খাইরুল ইসলাম (২৬) ময়মনসিংহ পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট থেকে পড়াশোনা করে চাকরি খুঁজছেন। তিনি ওই শিক্ষকের সরাসরি ছাত্র ছিলেন।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র জানায়, কয়েক বছর আগে ছাত্রীদের যৌন হয়রানি করেছেন, এমন অভিযোগ তুলে গত ২৮ আগস্ট খাইরুল ইসলামের নেতৃত্বে ওই শিক্ষকের শাস্তি দাবি করে মানববন্ধন করা হয়। ওই দিন বিকেলে খাইরুল উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ দেন। ওই অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কার্যালয় দেলদুয়ার উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা গৌর চন্দ্রকে তদন্তের দায়িত্ব দেন। তদন্তের জন্য তাঁর ঘটনাস্থলে যাওয়ার কথা ছিল।
গতকাল দুপুরে ওই শিক্ষকের ছবি দিয়ে ফেসবুকে পোস্ট করেন খাইরুল এবং বিকেলে দাড়িপাকা বাজারে লোকজনের সামনে তাঁকে অপমান করেন। ফেসবুক পোস্টে খাইরুল লেখেন, ‘এই কুকুরকে চিনে রাখেন। শিক্ষকতার নামে প্রাইমারি শিক্ষার্থীদের সাথে পড়ানোর নামে বিকৃত যৌনাচার করত। এর শাস্তি অবধারিত। এর আগে পেছনে যারা সাহায্য করতেছে। তাঁদের লিস্ট করা হচ্ছে।’
নাম প্রকাশ না করে দাড়িপাকা গ্রামের এক বাসিন্দা বলেন, গতকাল বিকেলে দাড়িপাকা বাজারে খাইরুল সবার সামনে ওই শিক্ষককে নানা বকাঝকা দেন এবং অপমান করেন।
ওই ঘটনার পর আজ সকালে বাড়ি থেকে ওই শিক্ষকের ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করা হয়। ওই শিক্ষকের স্ত্রী কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, খাইরুল তাঁর স্বামীর বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করে শিক্ষকসমাজে তাঁকে কলুষিত করেছেন। তাঁর স্বামী তাঁকে বলেছিলেন, ‘এই মুখ আমি কাউরে দেখাব না।
ওই শিক্ষকের মেয়ে বলেন, ‘বাবাকে আত্মহত্যা করতে বাধ্য করেছে ওরা। ওরা বাবার নামে মিথ্যা অপবাদ দিয়েছে। এটা আত্মহত্যা নয়, হত্যা। আমি এই হত্যার বিচার চাই।’ তাঁর পরিবার মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে তিনি জানান।
এ বিষয়ে খাইরুল ইসলাম বলেন, এখন তিনি মারা গেছেন। ওনার বিরুদ্ধে এখন আমার কোনো অভিযোগ নেই। তিনি যে আত্মহত্যা করবেন, তা আমার জানা ছিল না। আমি তাঁর কাছে ক্ষমাপ্রার্থী।
জানতে চাইলে টাঙ্গাইলের দেলদুয়ার উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা গৌর চন্দ্র দে দুপুরে প্রথম আলোকে বলেন, একটি লিখিত অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে আজ তদন্ত হওয়ার কথা ছিল। সকালে ওই শিক্ষকের মৃত্যুর খবর পেয়ে আর যাওয়া হয়নি। কারণ, মৃত ব্যক্তির বিরুদ্ধে কোনো তদন্ত হয় না।
সখীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাকির হোসেন বলেন, ওই শিক্ষকের লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। তদন্তপূর্বক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post