কিশোরগঞ্জের বাজিতপুরে কৃষক নিবু মিয়াকে গলা কেটে হত্যার পর হাত, পা ও মুখ বেঁধে লাশ সেচের ড্রেনে ফেলে দেয়ার চাঞ্চল্যকর ঘটনার রহস্য উদ্ঘাটন করেছে পুলিশ। সম্পত্তির ভাগ পেতে কসাই দিয়ে গলা কেটে বাবাকে হত্যা করায় প্রবাস ফেরত ছেলে মো. সোহেল মিয়া (২৪)। এ ঘটনার মূলহোতা সোহেলসহ হত্যাকাণ্ডে সরাসরি জড়িত চারজনকেই গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বাজিতপুর উপজেলার দক্ষিণ পিরিজপুর বাজারের একটি রেস্টুরেন্ট থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের মধ্যে মো. বাবুল মিয়া শুক্রবার আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। জবানবন্দি গ্রহণ শেষে তাকে কিশোরগঞ্জ জেলা কারাগারে পাঠানো হয়।
জানা যায়, এই কিলিং মিশনে সোহেল ও তার তিন সহযোগী মো. বাবুল মিয়া (৩২), মো. সুমন মিয়া (২৬) ও কসাই মো. নজরুল ইসলাম (৪৫) অংশ নেয়। হত্যার পর তার সঙ্গে থাকা ৭০ হাজার টাকা তারা মিলে ভাগবাটোয়ারা করে নিয়ে যায়। পরে তার লাশ বিএডিসি সেচ প্রকল্প হাউজে ড্রেনের মধ্যে ফেলে রেখে যায়। পরদিন ২০শে অক্টোবর সকালে এলাকাবাসীর খবরের ভিত্তিতে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে লাশ উদ্ধার করে।
এ ব্যাপারে শনিবার দুপুরে পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে চাঞ্চল্যকর এ হত্যাকাণ্ড নিয়ে প্রেস ব্রিফিং করে পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হাছান চৌধুরী বিপিএম-সেবা জানান, নিহতের চার ছেলে ও দুই মেয়ে। সোহেল সবার ছোট। বছর দেড়েক আগে তার বাবা ৬ লাখ টাকায় তাকে মধ্যপ্রাচ্যের একটি দেশে পাঠায়। তখন তিনি ২১ লাখ টাকার জমি বিক্রি করেন। কিন্তু তিন মাস পরই সোহেল দেশে ফিরে আসে।
এ নিয়ে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সোহেলের কলহ তৈরি হয়। এ রকম পরিস্থিতিতে তাকে বিয়ে করানো হয়। বিয়ের পর এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে সোহেলকে একটি অটোরিকশা কিনে দেয়া হয়। কিন্তু সোহেল টাকার জন্য বাবাকে চাপ দিতো। এ নিয়ে পারিবারিক কলহ আরও বাড়তে থাকে। সম্প্রতি জমি বিক্রির এক লাখ টাকা পেলে সোহেল টাকা চাইলে তিনি তাকে টাকা দেননি। ভবিষ্যতে জমি বিক্রি করে সে টাকাও পাবে না-এ রকম আশঙ্কা পেয়ে বসে তাকে। এতেই তার বাবাকে পরিকল্পনা অনুযায়ী গলা কেটে হত্যা করা হয়।
এ ঘটনায় পরদিন ২০শে অক্টোবর সকালে তার মরদেহ উদ্ধারের পর এ ঘটনায় নিহতের ছেলে আব্দুর রহমান হৃদয় বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে বাজিতপুর থানায় মামলা করেন।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ভাগলপুর তদন্ত কেন্দ্রের এসআই বিএম তমিকুল ইসলামের তদন্তে এ হত্যা রহস্যের জট খুলে। প্রেস ব্রিফিংয়ে মামলার দিকনির্দেশনা প্রদানকারী অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস্) মো. আল আমিন হোসাইন এবং গ্রেপ্তার অভিযানে নেতৃত্ব প্রদানকারী বাজিতপুর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সত্যজিৎ কুমার ঘোষ ও বাজিতপুর থানার ওসি মো. মুরাদ হোসেন উপস্থিত ছিলেন।
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post