চাহিদার অতিরিক্ত আবেদনের প্রেক্ষিতে বিদেশ প্রত্যাগত প্রবাসীদের আর্থিক সহযোগিতার রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়া বন্ধ হয়ে গেছে। গত জুলাই মাস থেকে আবেদন গ্রহণ বন্ধ করে দেয় চট্টগ্রামসহ সারাদেশের ৩১ জেলার ওয়েলফেয়ার সেন্টারগুলো।
করোনায় ‘প্রত্যাগত অভিবাসী কর্মীদের পুনঃএকত্রীকরণের জন্য অনানুষ্ঠানিক খাতে কর্মসংস্থান সৃজনে সহায়ক’ শীর্ষক প্রকল্পের অধীনে সহযোগিতা পেতে সারাদেশে রেজিস্ট্রেশন করেছেন দুই লাখ ৫ হাজার ৭১৩ প্রবাসী। এর মধ্যে পুরুষ এক লাখ ৮৯ হাজার ৬২ জন এবং নারী ১৬ হাজার ৬৫১ জন। আবেদনকারীদের মধ্যে থেকে ইতোমধ্যে জনপ্রতি ১৩ হাজার ৫০০ টাকা করে এককালীন আর্থিক সহযোগিতা পান এক লাখ ২৭ হাজার ৫৪৭ প্রবাসী। সবমিলে টাকার অংকে আর্থিক পরিমাণ হচ্ছে ১৭২ কোটি ১৮ লাখ ৮৪ হাজার টাকা। আলোচ্য প্রকল্পের অধীনে চট্টগ্রাম থেকে রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন করেছেন ৯ হাজার ১৭৩ জন প্রবাসী। এর মধ্যে ১৩ হাজার ৫০০ টাকা করে জনপ্রতি আর্থিক সহযোগিতা পেয়েছেন ৫ হাজার ৯৪৪ জন প্রবাসী। তারা সর্বমোট প্রণোদনা পান ৮ কোটি ২ লাখ ৪৪ হাজার টাকা। করোনা মহামারিতে দেশে ফেরত অভিবাসী কর্মীদের পুনর্বাসনের জন্য প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ধীন ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ড প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে। অবশিষ্টরা পর্যায়ক্রমে আর্থিক সহযোগিতা পাবেন বলে জানিয়েছেন প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা।
প্রকল্প সূত্র জানায়, বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়নে ২০২১ সালের জানুয়ারিতে শুরু হওয়া প্রকল্পের অধীনে দুই লাখ প্রবাসীকে এককালীন আর্থিক সহযোগিতা এবং এদের মধ্যে থেকে বাছাইকৃত ২০ হাজার প্রবাসীকে কারিগরি প্রশিক্ষণ ও দেশে-বিদেশে বিকল্প কর্মসংস্থানের উদ্যোগ নেওয়া হয়। এজন্য সারাদেশে ৮টি এনজিও সংস্থার মাধ্যমে দুই লাখ প্রবাসীর রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়া শুরু করা হয়। কিন্তু গত জুন পর্যন্ত সারাদেশে দুই লাখের বেশি প্রবাসী এ প্রকল্পে রেজিস্ট্রেশন করেন। এমন কী প্রকল্পের অধীনে চট্টগ্রামের জন্য টার্গেট দেওয়া হয় ১০ হাজার প্রবাসী। কিন্তু চট্টগ্রাম থেকে নির্ধারিত টার্গেট ছাড়িয়ে রেজিস্ট্রেশনের পরিমাণ অতিরিক্ত আরও তিন হাজার বেড়ে যায়। তাতে সর্বমোট ১৩ হাজার জন রেজিস্ট্রেশনের জন্য আবেদন করেন। এর মধ্যে ৯ হাজার ১৭৩ জনের রেজিস্ট্রেশনের প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে। বাকিদের রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। তাতে গত জুলাই মাসে রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়া বন্ধ করে দেয় জেলা ওয়েলফেয়ার সেন্টার। ৪ বছর মেয়াদী প্রকল্পটির কাজ ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে শেষ হওয়ার সিদ্ধান্ত থাকলেও যথাসময়ে কাজ শেষ না হওয়ায় সময় বাড়িয়ে ২০২৫ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত বর্ধিত করা হয়।
মন্ত্রণালয়ের তথ্য মতে, বিশ্বের ১৭৫টি দেশে প্রায় এক কোটি ২৫ লাখের বেশি বাংলাদেশি কর্মী কাজ করছেন। করোনার মহামারির কারণে প্রায় ৬ লাখ প্রবাসী কাজ হারিয়ে দেশে ফেরত আসেন। তাদের মধ্যে অনেকে কর্মস্থলে পুনরায় ফিরে যান। কিন্তু কাজ হারিয়ে বিশাল একটি অংশ আর কর্মস্থলে ফিরতে পারেননি, দেশে থেকে যেতে বাধ্য হন। কাজ হারিয়ে ফেরত আসা এসব প্রবাসী বেকার এবং পরিবার-পরিজন নিয়ে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েন। এ অবস্থায় সরকার তাদের মধ্যে থেকে রেজিস্টেশনকৃত দুই লাখ প্রবাসীকে প্রকল্পের আওতায় নগদ অর্থ সহায়তা দিচ্ছে। তবে রেজিস্ট্রেশনের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় তাদেরও প্রকল্পের অধীনে সহযোগিতা করবেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বিশে^র বিভিন্ন দেশ হতে করোনার কারণে ফেরত অভিবাসী কর্মীদের পুনঃএকত্রীকরণের লক্ষ্যে রেইস প্রকল্পের আওতায় দেশের ৩১টি জেলার ওয়েলফেয়ার সেন্টারের মাধ্যমে নিবন্ধন কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়। ২০২০ সালের জানুয়ারিতে করোনার কারণে বিদেশ ফেরত অভিবাসী কর্মীগণ বিনামূল্যে এ প্রকল্পে নিবন্ধন করেন।
জানতে চাইলে ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের ওয়েলফেয়ার সেন্টার, চট্টগ্রামের সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ এনায়েত উল্লাহ পূর্বকোণকে বলেন, ‘প্রকল্পের অধীনে রেজিস্ট্রেশনকৃত প্রত্যেকে সাড়ে ১৩ হাজার টাকা সহযোগিতা ছাড়াও এদের মধ্যে থেকে বাছাইকৃত ২৩ হাজার ৫০০ জনকে দেশে-বিদেশে বিকল্প কর্মসংস্থানের লক্ষ্যে দেওয়া হবে প্রশিক্ষণ ও কারিগরি সহায়তা। মূলত করোনাভাইরাস সংক্রমণ পরিস্থিতিতেই বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কর্মরত প্রবাসীরা কাজ হারিয়েছেন। তাদের বড় একটি অংশ দেশে ফিরে আসেন। তাদের অনেকেই আর কর্মস্থলে ফিরে যেতে পারেনি। এসব প্রবাসীর পাশে থাকতেই সরকার এ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে।
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post