চট্টগ্রাম-৬ আসনের (রাউজান) সাবেক সংসদ সদস্য এ বি এম ফজলে করিম চৌধুরীকে কারাগার থেকে আদালতে হাজির না করে ভার্চ্যুয়াল মাধ্যমে মামলার শুনানির আদেশ বাতিলের দাবিতে বিক্ষোভ করেছে ছাত্র-জনতা। অবিলম্বে এ আদেশ বাতিল না করলে বৃহত্তর কর্মসূচি ঘোষণার হুঁশিয়ারিও দেয়া হয়।
রোববার (২৭ অক্টোবর) সকাল ১০টার দিকে আদালত ভবনসংলগ্ন চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে ‘বৈষম্যবিরোধী সাধারণ ছাত্র ও চট্টগ্রামের সর্বস্তরের জনগণের’ ব্যানারে এক বিক্ষোভ কর্মসূচিতে এই দাবি করা হয়।
এ সময় তার (ফজলে করিম চৌধুরী) ফাঁসি, তার স্ত্রী রিজোয়ানা ইউসুফ এবং ছেলে ফারাজ করিম চৌধুরীকে গ্রেফতারের দাবি জানানো হয়।
ছাত্র-জনতা ‘অনলাইনে কিসের কোর্ট, প্রশাসন জবাব চাই’, ‘ফজলে করিমের টাকার গোলাম, প্রশাসন তোমায় সালাম’, ‘বিচার বিচার বিচার চাই, জুইন্নার বিচার চাই’ এমন নানা স্লোগান দেন।
এছাড়া ফজলে করিমের ছবিযুক্ত ব্যানার পদদলিত করে এবং জুতো নিক্ষেপ করে ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তারা বলেন, গত ২১ জুলাই স্থানীয় দৈনিকে ফজলে করিম ঘোষণা দিয়েছিল চট্টগ্রামকে পাহারা দিতে রাউজানবাসী যথেষ্ট। তার গুন্ডাবাহিনী দিয়ে আমাদের মতো ছাত্রদের ওপর নির্বিচারে গুলি চালানোর পরোক্ষ হুমকি দিয়েছে। যখন আন্দোলনে ছাত্রলীগের সাথে যুদ্ধরত অবস্থায় ছিলাম তখন রাউজানের গুন্ডারা আমাদের ওপর হামলা করেছিল। ফজলে করিমের পাথরঘাটার বাসা থেকে আমাদের ওপর অস্ত্রবাজির মদদ দিয়েছিল। আজ যখন ফজলে করিমকে গ্রেফতার করা হয়েছে সেই সবের বিচার না করে তাকে আলাদা সুবিধা দেয়া হয়েছে। তাকে ডিভিশন দেয়া হচ্ছে। তাকে অনলাইন শুনানির ব্যবস্থা করা হচ্ছে, কেন?
বক্তারা বলেন, প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে যখন মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো হয়েছিল তখন তাকে সরাসরি আদালতে এসে হাজিরা দেয়া লাগতো। ফজলে করিম কোন ভিআইপি হয়েছেন? আমরা প্রশাসনের কাছে দাবি রাখতে চাই, জানতে চাই, তাকে কেন ডিভিশন দেয়া হচ্ছে? ফজলে করিমের নামে ২৪টি মামলা রয়েছে। যার মধ্যে ৯টি হত্যা মামলা। এসবের বিচার কি আমরা পাবো না?
ছাত্র-জনতার বিক্ষোভ সমাবেশে আইনজীবীদের নিয়ে যোগ দেন চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আশরাফ হোসেন চৌধুরী।
তিনি বলেন, দীর্ঘ একমাস ফ্যাসিস্ট সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করে এ দেশের ছাত্র-জনতা গুলির মুখোমুখি হয়ে আন্দোলন করে দেশ স্বাধীন করেছে। গত ৩১ জুলাই ছাত্র ও ছাত্রী ভাই-বোনেরা সেনাবাহিনী, বিজিবি ও পুলিশের তিনস্তরের ব্যারিকেড ভেঙে আদালতে প্রবেশ করে ‘মার্চ ফর জাস্টিস’ সফল করেছেন। সেই কর্মসূচি সেদিন সফল না হলে আমরা হয়তো ৫ আগস্টের সেই দিন দেখতে পেতাম না।
আইনজীবীরা বলেন, ‘রাউজানের প্রাণের দাবি, মা ও মাটি-মানুষের দাবি ফজলে করিমকে ফাঁসি দিতে হবে। আমরা কোনো অন্যায্য দাবি নিয়ে ফাঁসি চাচ্ছি না। আমাদের ছাত্রদলের নেতা নুরু ভাইয়ের হত্যাসহ গুম-খুন করে ফজলে করিম পুরো রাউজানকে আয়নাঘরে পরিণত করেছিল। সেই ফজলে করিম জুনুর আমরা ন্যায্য বিচার চাই। এই একটি ক্ষেত্রে রাউজানবাসী দলমত ভুলে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে।’
উল্লেখ্য, গত ১২ সেপ্টেম্বর সকালে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া সীমান্ত এলাকা থেকে ফজলে করিম চৌধুরীকে আটকের পর পাঠানো হয় ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা কারাগারে। সবশেষ ১৯ সেপ্টেম্বর হেলিকপ্টারে করে তাকে চট্টগ্রামে আনা হয়।
ফজলে করিমের বিরুদ্ধে হত্যা, অপহরণ, মুক্তিপণ আদায়, হত্যাচেষ্টা, অস্ত্র দিয়ে ফাঁসানো, অস্ত্রের মুখে জমি লিখিয়ে নেয়া, ভাঙচুর, দখলসহ বিভিন্ন অভিযোগ ১০টি মামলা হয়েছে চট্টগ্রামের বিভিন্ন থানায়।
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন news@probashtime.com মেইলে।
Discussion about this post