ওমানে কর্মরত বিদেশি শ্রমিকদের মধ্যে বাংলাদেশির সংখ্যা এখন সবচেয়ে বেশি। ওমান জুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে প্রায় ৮ লাখের মতো প্রবাসী বাংলাদেশি। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য একটা সংখ্যা অবৈধ রয়েছে। তবে বর্তমান করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে দেশের ওমানি নাগরিক ও প্রবাসীদের কথা চিন্তা করে দেশটির সরকার বেশকিছু নির্দেশনা জারি করেছে। তবে নতুন এই নির্দেশনায় প্রবাসীদের ভিসা ফি কমলেও দেশটিতে ওমানি নাগরিকদের কাজের সুযোগ তৈরির জন্য স্থায়ীভাবে চাকরী হারাতে পারে কয়েক হাজার প্রবাসী বাংলাদেশি। গত মাসের শেষ দিকে করোনাভাইরাস মোকাবেলায় ওমানের সুপ্রিম কমিটির দেওয়া বিবৃতিতে এসব বিষয়ে ঘোষণা করা হয়েছে।
বিদেশি কর্মীদের সরিয়ে নিজ নাগরিকদের চাকরি দেয়ার প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করতে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন সংস্থাগুলোকে নির্দেশ দিয়েছে ওমান সরকার। বিশেষত উচ্চ পদগুলোর ক্ষেত্রে এই নির্দেশ আগে পালন করতে বলা হয়েছে। নাগরিকদের জন্য আরও বেশি কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে গত মাসে এই নির্দেশ দেয়া হয়। ওমান টাইমস সম্প্রতি তাদের এক প্রতিবেদনে এই তথ্য নিশ্চিত করেছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে, ওমানের অর্থ মন্ত্রণালয় সরকারি খাতের সংস্থাগুলোকে পরিচালনামূলক পদসহ সব ক্ষেত্রে বিদেশি কর্মীদের পরিবর্তে নাগরিকদের নিয়োগের জন্য ২০২১ সালের জুলাই পর্যন্ত সময় দিয়েছে। মন্ত্রণালয় জানিয়েছে যে, বিপুল সংখ্যক প্রবাসী এখনও রাষ্ট্রীয় সংস্থাগুলোর পরিচালক পদ দখল করে আছে। ওমানের জনসংখ্যা ৪৬ লাখ। এর মধ্যে ৪০ শতাংশেরও বেশি বিদেশি এবং তারা বেশ কয়েক দশক ধরে উপসাগরীয় দেশটির উন্নয়নে প্রধান ভূমিকা পালন করেছে। গালফ উপসাগরের তীরে আরব দেশগুলোতে প্রায় ২ কোটি ৫০ লাখ বিদেশি নাগরিক কাজ করে, যাদের বেশিরভাগ এশিয়া অঞ্চলের নাগরিক।
করোনাভাইরাসে তেলের দাম পড়ে যাওয়ায় ও অর্থনৈতিক ধীর গতির কারণে সংকটে পড়ে গেছে ওমান। সপ্তাহ দুয়েক আগে কোম্পানিগুলো ওমানি নাগরিকদের ছাঁটাই করে অর্থনৈতিক বোঝা হালকা করার চেষ্টা করলে তাতে বাঁধা দিয়েছে দেশটির সরকার। এছাড়া ব্যক্তি মালিকানাধীন কোম্পানিগুলো যাতে বিদেশি শ্রমিকদের স্থায়ীভাবে চলে যেতে বলে সেই আহ্বানও জানানো হয়েছে।
এদিকে ওমানের সিদ্ধান্তে চরম হতাশা দেখা দিয়েছে কয়েক লাখ প্রবাসী বাংলাদেশি কর্মীর মাঝে। প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের এ মহাসঙ্কটে এমন ঘোষণায় প্রবাসী বাংলাদেশি কর্মীরা চাকরি হারানোর ঝুঁকিতে পড়তে যাচ্ছে। দেশটির নির্মাণ খাত, সেবা সেক্টর, জ্বালানি খাত, মৎস্য খাতসহ বিভিন্ন সেক্টরে প্রবাসী বাংলাদেশিরা কঠোর পরিশ্রম করে প্রতি বছর প্রচুর রেমিট্যান্স দেশে পাঠাচ্ছে।
এদিকে এ বিষয়ে ওমানে নিযুক্ত বাংলাদেশ রাষ্ট্রদূত মো. গোলাম সরওয়ার বলেন, ‘এখন পর্যন্ত ওভাবে চাপ নেই। তবে আশঙ্কা করছি করোনা-পরবর্তী সময়ে কোম্পানিগুলো ব্যাপক কর্মী ছাঁটাই করবে, যেটি অত্যন্ত চিন্তার। ইতোমধ্যে কিছু কোম্পানি কর্মী ছাঁটাইয়ের ব্যাপারে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগও করেছে। আমরা করোনার কারণ দেখিয়ে নিবৃত করেছি। সে সঙ্গে যোগাযোগ অব্যাহত রাখছি, যেন করোনা-পরবর্তীতেও আমাদের শ্রমিক ভাইদের বহাল রাখা হয়।’
প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সূত্র মতে, ১৯৭৬ সনে ১১৩ জন কর্মী প্রেরণের মধ্য দিয়ে দেশটিতে জনশক্তি রফতানি শুরু হয়। ২০১৯ সনে ওমানে ১২ হাজার ২২৬ জন মহিলা গৃহকর্মীসহ সর্বমোট ৭২ হাজার ৬৫৪ কর্মী চাকরি লাভ করে। শুরু থেকে গত ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত দেশটিতে সর্বমোট কর্মী গমনের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৫ লাখ ১৩ হাজার ১৭৭ জন। গত জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসে দেশটিতে ১২ হাজার ৩০৭ জন কর্মী কর্মসংস্থান লাভ করেছে। এ দু’মাসে দেশটিতে কর্মরত বাংলাদেশি কর্মীরা ১৮৬ দশমিক ৭৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের রেমিট্যান্স দেশে পাঠিয়েছে।
আরও পড়ুনঃ ওমানে ছাঁটাই আতঙ্কে বাংলাদেশী প্রবাসীরা
এছাড়া, ওমানে জীবিকার তাগিদে বসবাস করা বহু প্রবাসী বিভিন্ন কারণে দেশটিতে অবৈধের তালিকায় পড়েছেন। করোনাভাইরাস পরিস্থিতির মধ্যে সীমাহীন ভোগান্তিতে রয়েছেন তারা। কাজ নেই, খেতেও পারছেন না অনেকে। ত্রাণের জন্য সরকার থেকে বাংলাদেশ দূতাবাস অর্থ বরাদ্দ দেয়া হলেও তা পাচ্ছে না বলে অভিযোগ জানিয়েছেন প্রবাসীরা।
https://www.youtube.com/watch?v=_C6JICciFPM
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post