করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবে সাড়া বিশ্ব আজ গৃহবন্দি। কাজ না থাকায় বিপাকে রয়েছে প্রবাসীসহ নিম্ন আয়ের মানুষরা। নিদারুণ কষ্টে দিন পার করছে বিভিন্ন দেশে কর্মরত প্রবাসী বাংলাদেশি শ্রমিকরা। মধ্যপ্রাচ্যের দেশ ওমানেও চরম খারাপ অবস্থার মধ্যে দিয়ে দিন পার করছেন এখানকার প্রবাসীরা। কাজ না থাকায় ও টানা একমাসের বেশি সময় দেশটি লকডাউন হওয়ায় আর্থিক ভাবে বিপর্যস্ত এখানকার প্রবাসী শ্রমিকরা। তবে বাংলাদেশ সরকার সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও সংগঠন বর্তমান পরিস্থিতিতে প্রবাসী শ্রমিকদের ত্রাণ সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছেন। এরই ধারাবাহিকতায় দ্বিতীয় বারের মতো বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে ত্রাণ সহযোগিতা পৌঁছেছে ওমানে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসে।
সরকারের পক্ষথেকে প্রবাসীদের জন্য দ্বিতীয় বাজেট দূতাবাসে এসে পৌঁছেছে এটা নিশ্চিত করেছেন দূতাবাসের রাষ্ট্রদূত মোঃ গোলাম সরওয়ার। শুক্রবার রাতে তিনি প্রবাস টাইমকে বলেন, “বাংলাদেশ দূতাবাস মাস্কাটের ২য় পর্বের ত্রাণ বিতরণ শুরু হয়েছে। প্রথম পর্বে ৩৫০০ জনের উপরে ত্রাণ বিতরণ করা হয়েছে। ২য় পর্বে ইনশাআল্লাহ সাত থেকে সাড়ে সাত হাজার জনের মধ্যে ত্রাণ বিতরণ করা হবে।”
এর আগে প্রথম দফায় ত্রাণ সহযোগিতা পেয়েছিলেন তিন হাজার ৫০০ প্রবাসী বাংলাদেশি। এই হিসেবে এইবার দ্বিগুণ প্রবাসী ত্রাণ সহযোগিতা পাবেন দেশটিতে। তবে এই ত্রাণ নিয়েও প্রবাসীদের মধ্যে রয়েছে ক্ষোভ। করোনাভাইরাস পরিস্থিতির মধ্যে সীমাহীন ভোগান্তিতে থাকা প্রবাসী বাংলাদেশিরা জানান, ত্রাণের জন্য সরকার থেকে অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে তা সঠিকভাবে পৌঁছাচ্ছেনা প্রবাসীদের কাছে। ত্রাণ বিতরণ ব্যবস্থাপনায় অনিয়ম নিয়ে প্রশ্ন তুলেন ওমান প্রবাসীরা।
কমিউনিটি নেতা মোস্তফা কামাল পাশা বলেন, আমরা বর্তমান এই দুঃসময়ে ওমানের বাংলাদেশ কমিউনিটির সকল সংগঠন এক হয়ে দূতাবাসের সাথে কাজ করতে চাইলেও দূতাবাস থেকে সেই প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়নি। তিনি বলেন, ভিন্ন ভিন্ন ভাবে সহযোগিতা করায় একজন একাধিকবার অনুদান নেওয়ার সুযোগ থাকে, সুতরাং আমরা চেয়েছিলাম ওমানের সকল সংগঠন এবং বিত্তশালী প্রবাসীরা তাদের সকল অনুদান এবং বাংলাদেশ সরকারের অনুদান একসাথে করে দূতাবাসের মাধ্যমে বিতরণ করতে, এতে ওমানের সকল অসহায় প্রবাসীদের মাঝে সুষ্টভাবে বণ্টন হতো। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে, দূতাবাস থেকে যে ত্রাণ পাচ্ছে, একই ব্যক্তি আবার অন্য আরেকটি সংগঠন থেকে ত্রাণ নিচ্ছে। যিনি পাচ্ছেন তিনি একাধিক যায়গা থেকে ত্রাণ পাচ্ছেন আর যিনি পাচ্ছেন না তিনি কারো থেকেই পাচ্ছেন না।
আরও পড়ুনঃ ওমানে ছাঁটাই আতঙ্কে বাংলাদেশী প্রবাসীরা
রাজধানী মাস্কাটসহ সালালাহ, সোহার, ইবরি, নেজুয়া ও বারকাসহ ওমানের সব অঞ্চলেই বসবাস বাংলাদেশিদের। যারা অবৈধভাবে দেশটিতে রয়েছেন তাদের অবস্থা অনেক খারাপ। কারণ তারা অবৈধ হওয়ায় সঠিকভাবে ত্রাণ সহযোগিতা পাচ্ছেন না। এদিকে যারা বৈধভাবে ওমানে আছেন, তারাও যে স্বস্তিতে আছেন, তা নয়। খেতে পারলেও উদ্ভূত পরিস্থিতিতে অন্যান্য সুবিধা ভোগ করতে পারছেন না তারা। ওমানে এমনিতেই গত তিন থেকে চার বছর যাবত ব্যবসায়িক মন্দা যাচ্ছে সবার, হাতেগোনা কয়েকজন বড় ব্যবসায়ী ছাড়া বেশিরভাগ ব্যবসায়ী গত কয়েক বছরে নিজেদের অবস্থা খুব একটা উন্নত করতে পারিনি যে কয়েক মাস ব্যবসার জমানো অর্থ খরচ করবে। তাই ওমানে শুধুমাত্র শ্রমিকরাই খাদ্য সঙ্কটে আছে ব্যাপারটা এমন নয়। অনেক ব্যবসায়ী রয়েছেন তাদের অবস্থা শ্রমিকদের থেকে খুব একটা ভালো নেই।
তাই প্রবাসীদের আকুল আবেদন, দূতাবাস যেখানে সাহায্য সহযোগিতা করছে এই সহযোগিতার পরিমাণ আরো বৃদ্ধি করে ওমানের প্রবাসী বাংলাদেশিদের খাদ্য সঙ্কটের হাত থেকে বাঁচাতে হবে। তা না হলে দেশটিতে অনেক খারাপ পরিস্থিতিতে পড়বে প্রবাসী বাংলাদেশিরা।
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post