পুলিশ কর্মকর্তাদের মধ্যে সবচেয়ে প্রভাবশালী ছিলেন সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদ ও আলোচিত ডিবির অতিরিক্ত কমিশনার হারুন অর রশিদ ওরফে ‘ডিবি হারুন’।
সরকারি চাকুরিজীবি হয়েও যেভাবে বেনজীর আহমেদ জালিয়াতি করে বেসরকারি পার্সপোর্ট নিয়েছেন, একই কায়দায় ডিবি হারুনও পরিচয় আড়াল করে বেসরকারি পাসপোর্ট নিয়েছেন ।
ডিবি হারুন জালিয়াতির আশ্রয় নিয়ে নিউইয়র্কের কনসাল জেনারেল অফিস থেকে বেসরকারি পাসপোর্ট নেন হারুন। গণমাধ্যমের কাছে সেই জালিয়াতির তথ্য উঠে এসেছে।
গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের বহুল আলোচিত ডিবি হারুন লাপাত্তা হয়ে যান। এরপরই হারুনের পাসপোর্ট সংক্রান্ত তথ্য সামনে আসে। দ্রুততম সময়ে ঘটনার অভ্যন্তরীণ তদন্ত শুরু করে পাসপোর্ট অধিদপ্তর। ইতোমধ্যে হারুনের পাসপোর্ট আবেদন সংক্রান্ত সমুদয় কাগজপত্র বিশেষভাবে সংরক্ষণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের দায়দায়িত্ব নিরূপণেরও চেষ্টা চলছে।
জানা গেছে, ২০১২ সালে বিএনপি নেতা জয়নুল আবদীন ফারুককে পেটানোর ঘটনায় হারুনের নাম দেশজুড়ে আলোচনায় উঠে আসে। ঘটনার পরপরই তিনি যুক্তরাষ্ট্রে চলে যান। পরে নিউইয়র্কে বাংলাদেশ কনসাল অফিস থেকে তিনি সাধারণ পাসপোর্টের আবেদন জমা দেন। এ সময় তিনি নিজের পরিচয় গোপন করেন। আবেদন ফরমে পেশার ঘরে লেখেন অন্যান্য। অর্থাৎ তিনি সরকারি চাকরিজীবী নন।
তারপর সাবেক হুইপ ফারুককে পেটানোর ঘটনায় তিরস্কার বা শাস্তির বদলে তৎকালীন সরকার হারুনকে পুরস্কৃত করে। এমনকি তাকে পুলিশের বীরত্বসূচক পিপিএম পদক দেওয়া হয়। একপর্যায়ে হারুন অনেকটা বীরের বেশে দেশে ফেরেন।
২০১৭ সালে তিনি আবার অফিসিয়াল পাসপোর্টের পরিবর্তে সাধারণ পাসপোর্টের জন্য আবেদন করেন। ওই সময় তিনি গাজীপুরের পুলিশ সুপার ছিলেন এবং গাজীপুর পাসপোর্ট অফিসেই আবেদন জমা দেন। যথাযথ যাচাই-বাছাই ছাড়াই আবেদনের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তাকে পাসপোর্ট ইস্যু করা হয়।
কিন্তু সরকারি চাকুরিজীবিদের অফিসিয়াল পাসপোর্ট থেকে সাধারণ বা সাধারণ থেকে অফিসিয়াল পাসপোর্টে রূপান্তরের ক্ষেত্রে কঠোর নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। তবে হারুনের ক্ষেত্রে এসব নিষেধাজ্ঞা বাধা হয়ে দাঁড়ায়নি।
পাসপোর্ট অধিদপ্তরে সংরক্ষিত হারুনের আবেদন সংক্রান্ত কাগজপত্রে দেখা যায়, গাজীপুরের পুলিশ সুপার থাকা অবস্থায় ২০১৭ সালের ১৮ জুন আরেক দফা সাধারণ পাসপোর্ট হাতে পান হারুন। যার মেয়াদ ছিল ২০২২ সালের ১৭ জুন পর্যন্ত।
কিন্তু রহস্যজনক কারণে মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ার আগেই তিনি ফের পাসপোর্ট নবায়নের আবেদন করেন। এরপর তাকে নতুন করে ই-পাসপোর্টও দেওয়া হয়।
গত ৫ আগস্ট হাসিনা সরকার পতনের পর ডিবি হারুন আত্মগোপনে চলে যান। এর মধ্যে কয়েকবার অজ্ঞাত স্থান থেকে গণমাধ্যমে সাক্ষাৎকার দিলেও তার মোবাইল ফোন নম্বর অদ্যাবধি বন্ধ রয়েছে। এমনকি ফেসবুকেও তাকে আর সক্রিয় দেখা যাচ্ছে না।
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post