হেফাজতে ইসলামের বর্তমান কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করেছেন সংগঠনটির আমির আমির আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী। রোববার (২৫-এপ্রিল) রাত ১১টার দিকে ফেসবুক লাইভে এসে তিনি এ ঘোষণা দেন। বাবুনগরী বলেন, দেশের সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সবচেয়ে বড় অরাজনৈতিক সংগঠন হেফাজতের ইসলামের কেন্দ্রীয় নেতাদের পরামর্শক্রমে বর্তমান কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করা হল। ইনশাআল্লাহ, আগামীতে আহ্বায়ক কমিটির মাধমে আবার হেফাজতে ইসলামের কার্যক্রম শুরু হবে।
গত ২৬ মার্চ ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফর ঘিরে দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ করেন হেফাজতে ইসলামের নেতাকর্মীরা। সেই বিক্ষোভ সহিংসতায় রূপ নেয়। ওই সংঘাতে প্রাণ হারান অন্তত ১৮ জন। সেসব ঘটনায় একাধিক মামলা হয়। মামলার আসামিদের ধরতে অভিযান শুরু করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এ পর্যন্ত হেফাজতের অন্তত এক ডজন শীর্ষস্থানীয় নেতাকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
এর মধ্যে হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হক নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁওয়ে রয়্যাল রিসোর্টে নারীসহ জনতার হাতে ধরা পড়েন। এতে নতুন করে বিতর্কের মুখে পড়ে হেফাজত। সরকারের কঠোর অবস্থানের কারণে কোণঠাসা হেফাজতে ইসলামের শীর্ষ নেতারা শুরু থেকেই সমঝোতার চেষ্টা করছেন। এরই ধারাবাহিকতায় তারা গোয়েন্দা সংস্থা ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেছেন।
গত সপ্তাহে হেফাজত ইসলামের মহাসচিব মাওলানা নুরুল ইসলাম স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে মন্ত্রীর বাসায় দেখা করে দলের নেতাকর্মীদের গণগ্রেফতার না করার অনুরোধ জানিয়েছিলেন। কিন্তু সরকারের কঠোর অবস্থানের কারণে শেষ পর্যন্ত বর্তমান কমিটি ভেঙে দিলেন হেফাজত নেতারা।
উল্লেখ্যঃ বাংলাদেশের একটি বড় কওমি মাদরাসা এবং হেফাজতে ইসলামের অন্যতম প্রধান কেন্দ্র চট্টগ্রামের হাটহাজারী মাদরাসা। এই মাদরাসা থেকে ২০১০ সালে হেফাজতে ইসলাম একটি অরাজনৈতিক দল হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। কিন্তু দলটির সাবেক আমির আল্লামা শাহ আহমদ শফীর মৃত্যুর পর হেফাজতে ইসলাম রাজনৈতিক দলের দিকে মোড় নেয়। পর্যায়ক্রমে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ হেফাজতের কমিটিতে যুক্ত হতে থাকেন।
হেফাজতে ইসলামের প্রতিষ্ঠাতা আমির আল্লামা শাহ আহমদ শফীর মৃত্যুর পর গত বছরের ১৫ নভেম্বর জুনাইদ বাবুনগরীকে আমির ও নূর হোসাইন কাসেমীকে মহাসচিব করে ১৫১ সদস্যের কমিটি ঘোষণা করা হয়। চট্টগ্রামের হাটহাজারী মাদরাসায় হেফাজতে ইসলামের সম্মেলনে ওই কমিটি ঘোষণা করা হয়।
হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ একটি ধর্মভিত্তিক অরাজনৈতিক দল হলেও দেশের ভেতরে বিভিন্ন সময়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মতো কর্মসূচি দিয়ে মাঠে আন্দোলন করেছে। সর্বশেষ স্বাধীনতা সুবর্ণজন্তী ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে সারা দেশে আন্দোলন করে দলটি। এরপর ধাপে ধাপে দলটির নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করে পুলিশ।
স্বাধীনতা সুবর্ণজন্তীতে সারা দেশে সহিংসতার ঘটনার পর হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হক, সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী, যুগ্ম মহাসচিব ও ঢাকা মহানগর হেফাজতে ইসলামের সভাপতি মোহাম্মদ জুনায়েদ আল হাবীব, কেন্দ্রীয় নায়েবে আমির আহমেদ আব্দুল কাদের এবং সহকারী মহাসচিব মাওলানা জালাল উদ্দিন আহমেদ, ঢাকা মহানগরীর ভারপ্রাপ্ত আমির মাওলানা জুবায়ের আহমেদসহ বেশ কয়েকজন নেতাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদের কয়েকজনকে ২০১৩ সালে হেফাজতের তাণ্ডবের ঘটনায় গ্রেফতার দেখিয়ে রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
ভিডিওটি দেখতে এখানে ক্লিক করুন
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post