চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের প্রায় ২৮ একর জায়গা অবৈধ দখলদারের কবলে রয়েছে। রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে সরকারি এই জায়গায় গড়ে উঠেছে ব্যক্তিমালিকানাধীন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। এর মধ্যে ১২ একর জায়গা দখল করে রেখেছে দেশের বৃহৎ অফ-ডক পরিষেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান সামিট অ্যালায়েন্স পোর্ট লিমিটেড (এসএপিএল)। এই প্রতিষ্ঠানটি সাবেক বেসামরিক বিমান পরিবহণ ও পর্যটনমন্ত্রী কর্নেল (অব.) মুহাম্মদ ফারুক খানের ভাই মুহাম্মদ আজিজ খানের। এ কারণে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন সময় চেষ্টা করেও তাদের জমি উদ্ধার করতে পারেনি। সরকারি জায়গায় ব্যবসা করে ১৭ বছরে প্রতিষ্ঠানটি হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। বেদখল হওয়া জমি উদ্ধার করা গেলে বিমানবন্দরের নতুন জনবল নিয়োগে যে আবাসন সংকট দেখা দিয়েছে তার সমাধান হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
শাহ আমানত বিমানবন্দরের এস্টেট শাখা সূত্র জানায়, বিমানবন্দরের জায়গা অধিগ্রহণে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের পুনর্বাসনের লক্ষে ১৯৯২ সালে পতেঙ্গা থানাধীন নাজিরপাড়া এলাকায় ২৭ দশমিক ৮১৫ একর জমি জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে ক্রয় করে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক)। তবে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিরা সেখানে স্থানান্তর হতে না চাইলে তাদের বিমানবন্দর সংলগ্ন বিজয়নগর এলাকায় স্থানান্তর করা হয়। পরে ক্রয় করা জমিটিতে বিমানবন্দরের নতুন আবাসিক এলাকা করার প্রস্তাব গৃহীত হয়। এর মধ্যে ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় গেলে বিমানবন্দরের ১২ একর জায়গা দখল করে নেয় সামিট অ্যালায়েন্স পোর্ট লিমিটেড। এছাড়াও কনফিডেন্স সিমেন্টসহ আরও প্রায় ৩০টি প্রতিষ্ঠান বাকি ১৫ দশমিক ৮০৮ একর জায়গা দখল করে নেয়। অবৈধভাবে দখলে রাখা ১২ একর জায়গা ছেড়ে দিতে এসএপিএলকে কয়েক দফা নোটিশ দিয়েছিল বেবিচক। এমনকি উচ্ছেদের জন্য সেখানে ম্যাজিস্ট্রেটও পাঠিয়েছিল সংস্থাটি। কিন্তু রাজনৈতিক প্রভাব ও ক্ষমতার কারণে ম্যাজিস্ট্রেট উচ্ছেদ না করে ফিরে যেতে বাধ্য হয়েছিলেন।
জানা গেছে, ২০১৯ সালের ১৮ জুলাই বেবিচকের এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেটের কার্যালয় থেকে সামিট অ্যালায়েন্স পোর্ট লিমিটেডকে একটি নোটিশ দেওয়া হয়। এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট আহামেদ জামিল স্বাক্ষরিত নোটিশে ৭ দিনের মধ্যে সেখানে নির্মিত স্থাপনা অপসারণের জন্য বলা হয়। ২০১৯ সালের ৭ আগস্ট সামিট অ্যালায়েন্স পোর্ট লিমিটেডের পক্ষে নোটিশ গ্রহণ করেন প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তা কামরুল ইসলাম মজুমদার। তবে ম্যাজিস্ট্রেটের সেই নির্দেশনা আমলে নেয়নি এসএপিএল কর্তৃপক্ষ।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিমানবন্দরের এক কর্মকর্তা বলেন, বেবিচকের মালিকাধীন প্রায় ২৮ একর জায়গার মধ্যে ১২ একরই সাবেক বিমান পরিবহণ ও পর্যটনমন্ত্রীর ভাইয়ের দখলে ছিল। তারা সরকারি জায়গা দখল করে কনটেইনার ডিপো তৈরি করেছিলেন। একই জায়গায় আরও অন্তত ৩০টি প্রতিষ্ঠান অবৈধভাবে বেবিচকের জায়গা দখলে রেখেছে। শুধু সামিটের কারণে পুরো উদ্ধার প্রক্রিয়া বন্ধ হয়ে যায়। তৎকালীন সরকারের উচ্চপর্যায় থেকে প্রভাব বিস্তার করায় এ বিষয়ে থমকে যায় বেবিচক। ৫ আগস্টের পর পরিবর্তিত প্রেক্ষাপটে বেবিচকের জায়গা উদ্ধার করার পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে।
সামিট অ্যালায়েন্স পোর্ট লিমিটেডের কোম্পানি সেক্রেটারি ওসমান সাজিদ বলেন, ২০০১-২০০২ সালে বিভিন্ন মালিকের কাছ থেকে আমরা জায়গাগুলো ক্রয় করেছিলাম। পরে আমরা জানতে পারি কিছু জায়গা শাহ আমানত বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ অধিগ্রহণ করেছে। এ বিষয়ে চট্টগ্রামের দায়িত্বে থাকা চিফ অপারেটিং অফিসার ভালো বলতে পারবেন। সামিট অ্যালায়েন্স পোর্ট লিমিটেড চট্টগ্রামের চিফ অপারেটিং অফিসার কামরুল ইসলাম মজুমদার বলেন, চট্টগ্রাম বিমানবন্দরের জায়গাসংক্রান্ত বিষয়ে আদালতে একটি মামলা চলমান রয়েছে। বিচারাধীন বিষয় নিয়ে কথা বলতে চাচ্ছি না।
বেদখল জমি উদ্ধার প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন শেখ আব্দুল্লাহ আলমগীর বলেন, বিমানবন্দরের ২৭ দশমিক ৮০৮ একর জায়গা দীর্ঘদিন ধরে বেদখল রয়েছে। বিভিন্ন কারণে এতদিন এই জায়গা উদ্ধার করা যায়নি। সরকারি জায়গা উদ্ধারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post