লকডাউন চলাকালীন সময়ে ৫ টি দেশে কর্মী পাঠাতে বিশেষ ফ্লাইট চালুর প্রথমদিনেই বাতিল হলো রিয়াদগামী ফ্লাইট। শনিবার সকাল ৬টা ১৫ মিনিটে বিমানের ফ্লাইটটি (বিজি-৫০৩৯) সৌদি আরবের রিয়াদের উদ্দেশে উড়ে যাওয়ার থাকলেও শেষ মুহূর্তে এসে সেটি বাতিল করা হয়। কারণ হিসেবে বিমান কর্তৃপক্ষ বলছে, যে সময়ে তারা বিশেষ ফ্লাইটের জন্য বিমান যে নতুন সময়সূচী ঘোষণা করেছে সে সময়ে রিয়াদের বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ তাদের ফ্লাইট পরিচালনার অনুমতি দেয়নি।
বিমানবন্দর সূত্রে জানা যায়, ফ্লাইটটি বাতিল হওয়ায় ভোগান্তিতে পড়েছেন যাত্রীরা। এ ঘটনায় তারা বিক্ষোভ করেছে। এসময় বিমানের বিরুদ্ধে স্লোগান দিতেও শোনা গেছে তাদের। ওই ফ্লাইটে ৩১৪ জন যাত্রীর সৌদি আরবে যাওয়ার কথা ছিল। তারা দেশটির বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কর্মরত শ্রমিক।
যাত্রীরা জানান, তারা সব নিয়ম মেনে করোনা পরীক্ষার নেগেটিভ সনদসহ বিমানবন্দরে এসেছিল। লকডাউনের মধ্যে কেউ ব্যক্তিগত গাড়ি ভাড়া করে আবার কেউ মোটরসাইকেল ভাড়া করে এয়ারপোর্টে এসে জানতে পারেন ফ্লাইটটি বাতিল করা হয়েছে। কোনো ধরনের পূর্ব নোটিশ ছাড়া এ ধরনের ফ্লাইট বাতিলের সংবাদে তাৎক্ষনিক এয়ারপোর্টের সামনে বিক্ষোভ করেন সৌদিগামী প্রবাসীরা।
শুক্রবার (১৬ এপ্রিল) মধ্যরাত থেকে শুরু হয় এই বিক্ষোভ। ফ্লাইটের মোট যাত্রী ছিলেন ৩১৪ জন। তাদের সবাই সৌদি আরবের বিভিন্ন শহরে কর্মরত প্রবাসী শ্রমিক। বিমানবন্দর সূত্র জানায়, সকাল ৬টা ১৫ মিনিটে বিমানের ফ্লাইটটি (বিজি-৫০৩৯) সৌদি আরবের রিয়াদের উদ্দেশে রওনা হওয়ার কথা ছিল। ফ্লাইটের যাত্রীদের করোনা পরীক্ষার সনদ নিয়ে ছয় ঘণ্টা আগে বিমানবন্দরে উপস্থিত হওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল। তবে রাতে যাত্রীরা বিমানবন্দরে এলে ২টার দিকে তাদের জানানো হয়, ফ্লাইটটি করা বাতিল হয়েছে।
এরপর থেকেই বিক্ষোভ শুরু করেন যাত্রীরা। তারা বিমানবন্দর ছেড়ে কোনোভাবেই যেতে রাজি নন। বিমানবন্দরের বহির্গমন টার্মিনালে বিক্ষোভ ও বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের বিরুদ্ধে স্লোগান দিচ্ছেন। বিক্ষোভের বিষয়ে শাহজালাল বিমানবন্দরের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘বিমান আমাদের জানিয়েছে, বিশেষ ফ্লাইটের জন্য বিমান যে নতুন সময়সূচি ঘোষণা করেছে, সেই সময়ে রিয়াদের বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ তাদের ফ্লাইট পরিচালনার অনুমতি দেয়নি। তাই তারা ফ্লাইট পরিচালনা করতে পারছে না।’
উল্লেখ্য: ১৪ এপ্রিল থেকে দেশে চলছে সর্বাত্মক লকডাউন। সেই সাথে এই একই তারিখ থেকে ৭ দিনের জন্য স্থগিত করা হয়েছে সকল আন্তর্জাতিক ফ্লাইট। দেশের গার্মেন্টস খোলা রেখে প্রবাসীদের ফ্লাইট বন্ধ করায় সরকারের এমন সিদ্ধান্তের সমালোচনা করেন অনেকেই। ফ্লাইট বন্ধের বিরোধিতা করে ব্র্যাক মাইগ্রেশনের প্রধান শরিফুল হাসান বলেন, “জীবিকার তাগিদে বাংলাদেশ থেকে রোজ হাজারো প্রবাসী কর্মী বিদেশে যাচ্ছেন। গত তিন মাসে প্রায় দেড় লাখ কর্মী বিদেশে গেছেন। এখনো রোজ যাচ্ছেন। বিদেশে গেলে করোনা ছড়ায় না। আর নেগেটিভ সনদ নিয়েই এরা যাচ্ছেন। প্রয়োজনে বিশেষ বিমান দেন। কারণ একবার যাওয়া পিছিয়ে গেলে পরে নানা সংকট তৈরি হয়। টিকেটের দামও বাড়ে। মনে রাখবেন কোভিডের মধ্যেও রেকর্ড পরিমাণ প্রবাসী আয় এসেছে। কাজেই বৈদেশিক এই কর্মসংস্থানটা যেন কোনোভাবেই বন্ধ না হয়।”
এদিকে হঠাত করে ফ্লাইট ইস্যুতে চরম বিপাকে পড়েছেন প্রবাসীরা। মধ্যপ্রাচ্যের কোনো দেশ বাংলাদেশের সাথে ফ্লাইট বন্ধ না করলেও নিজ দেশের ফ্লাইট বন্ধ নিয়ে চরম সমালোচনা করছেন প্রবাসী সহ অভিবাসন বিশেষজ্ঞরা। সবশেষে প্রবাসীদের নিজ নিজ কর্মস্থলে ফিরে যাওয়ার জন্য আজ (১৭ এপ্রিল) থেকে বিশেষ ফ্লাইটের ব্যবস্থা করে বাংলাদেশ সরকার।
সরকারের এমন সিদ্ধান্তে প্রবাসীদের মাঝে কিছুটা স্বস্তি ফিরলেও আজ (১৭ এপ্রিল) এয়ারপোর্টে এসে হতাশ হন প্রবাসীরা। রিয়াদগামী এক ফ্লাইট ধরার জন্য ৬ ঘন্টা আগে ঢাকায় হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে হাজির হন সৌদি প্রবাসীরা। দেশে চলমান সর্বাত্মক লকডাউনে অনেক কষ্টে নানা রকম বাধাবিপত্তি পার হয়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বিমানবন্দরে রিয়াদগামী বিশেষ ফ্লাইট ধরতে হাজির হন প্রবাসীরা।
কিন্তু দীর্ঘ ৬ ঘন্টা অপেক্ষা করার পর তাঁরা জানতে পারেন সৌদি সরকার বাংলাদেশ থেকে বিশেষ এই ফ্লাইট পরিচালনা করার এবং রিয়াদ এয়ারপোর্টে অবতরণের অনুমতি দেয়নি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন দেশে আচমকা কোভিড-১৯ বিস্ফোরণ এবং চলমান লকডাউন, আন্তর্জাতিক ফ্লাইট বাতিল সব কিছু মিলিয়ে বেশ সঙ্গত কারণেই সৌদি সরকার এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
এতে করে অনিশ্চিত হয়ে পড়লো হাজারো সৌদি প্রবাসীর জীবন, সময়মত সৌদি আরব ফিরতে না পারলে অনেকের ভিসা বাতিল হতে পারে, অনেকেই হয়ত আর কোনদিন সৌদি আরব ফিরতে পারবেন না। এতে করে প্রতিটি প্রবাসীর সাথে যুক্ত এক একটি পরিবারের মধ্যেও নেমে আসলো অন্ধকার।
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post