লকডাউনের কারণে আন্তর্জাতিক ফ্লাইট বন্ধে চরম অনিশ্চয়তায় প্রবাসীরা। দীর্ঘদিন পর পরিবারের সাথে ঈদ কাটাতে দেশে আসার জন্য প্রস্তুতি নিয়েও আসতে পারেননি অনেক প্রবাসী। এ ছাড়াও আকাশচুম্বী মূল্যে টিকিট ক্রয় করেও বিদেশ যেতে পারছেননা অনেক নতুন পুরাতন বিদেশগামী শ্রমিক। এরমধ্যে ছুটি শেষে সময় মতো কর্মস্থলে না যেতে পারলে চাকরি হারানোর আতঙ্কে আছেন অসংখ্য প্রবাসী।
বগুড়ার বাসিন্দা আনোয়ার হোসেন (৫০) ও মো. আব্দুল হাকিম (৪০)। ঢাকায় এসেছেন জর্ডান যাওয়ার উদ্দেশে। আসার আগে অবশ্য এয়ার এরাবিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। এয়ারলাইন্স কর্তৃপক্ষ তাদের বলেছে, ফ্লাইট চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে। কিন্তু তারা হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এসে দেখেন, করোনা প্রতিরোধের বিধিনিষেধের জন্য সব অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক ফ্লাইট বন্ধ। কোনো কিছু জানার জন্য তারা বিমানবন্দরের ভেতরেও প্রবেশ করতে পারছেন না।
ফ্লাইট বন্ধ থাকায় অনেক প্রবাসী শাহজালাল বিমানবন্দরের গেট থেকে ফিরে যান। মুন্সিগঞ্জ থেকে আসা লুৎফুর রহমান লিটন নামে এক প্রবাসী বলেন, ‘দুই মাস আগে সৌদি আরব থেকে সৌদি এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে বাংলাদেশে আসি। আসার সময় একই ফ্লাইটে ফিরতি টিকিট করেছিলাম। আজ আমার সৌদি আরবে ফেরার কথা। কিন্তু এসে দেখি বিমানবন্দর সম্পূর্ণ বন্ধ। তিনি আরও বলেন, ‘এখন কী করব বুঝতে পারছি না। ফ্লাইট কর্তৃপক্ষ বলছে, ফ্লাইট ওপেন রয়েছে। কিন্তু বিমানবন্দরে এসে দেখি সবকিছু বন্ধ। সময় মতো সৌদি পৌঁছাতে না পারলে চাকরি থাকবে কি না— তা নিয়ে এখন চিন্তায় আছি।’
ফ্লাইট বন্ধের কারণে আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছে বিমান বাংলাদেশ ও ইউএস-বাংলাসহ আন্তর্জাতিক ১০টি এয়ারলাইন্স। তারা বলছে, ফ্লাইট বন্ধের কারণে শিডিউলও (সময়সূচী) পিছিয়ে দিতে হচ্ছে। ফলে আজ ও আগামী তারিখগুলোতে যারা টিকিট কিনেছেন তাদের ফ্লাইটের শিডিউল মেলাতে ধকল পোহাতে হবে। এদিকে বিমানবন্দরে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সকাল থেকেই বিক্ষিপ্তভাবে প্রবাসীরা আসছেন। কিন্তু সবকিছু বন্ধ দেখে আবার ফিরে যাচ্ছেন।
ফ্লাইট বন্ধের কারণে সংকটের মুখে পড়েছে বিমান বাংলাদেশ ও ইউএস-বাংলাসহ আন্তর্জাতিক রুট পরিচালনাকারী এয়ারলাইন্সগুলো। তারা বলছে, ফ্লাইট বন্ধের কারণে শিডিউলও (সময়সূচি) পিছিয়ে দিতে হচ্ছে। ফলে আজ ও আগামী তারিখগুলোতে যারা টিকিট কিনেছেন তাদের ফ্লাইটের শিডিউল মেলাতে ধকল পোহাতে হচ্ছে। সম্প্রতি সরকার বিশেষ ফ্লাইটের মাধ্যমে মধ্যপ্রাচ্যের প্রবাসীদের নিজ নিজ গন্তব্যে পৌঁছে দেওয়ার চিন্তাভাবনার কথা জানিয়েছে। তবে এতেও সংকট কাটবে না বলে দাবি করছে এয়ারলাইন্সগুলো।
মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক বিদেশি একটি এয়ারলাইন্সের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, বর্তমানে সাতদিনের লকডাউন চলছে। সরকারের পক্ষ থেকে হঠাৎ স্পেশাল ফ্লাইট পরিচালনার ঘোষণা দিল। কিন্তু স্পেশাল ফ্লাইটের অনুমতি ও ব্যবস্থাপনায় সাতদিনেরও বেশি সময় লেগে যাবে আমাদের।
ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের মহাব্যবস্থাপক (জনসংযোগ) মো. কামরুল ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেন, ‘এক সপ্তাহে দুবাই, ওমান, কাতার ও সিঙ্গাপুরের জন্য ইউএস-বাংলার প্রায় চার হাজার টিকিট বিক্রি হয়েছিল। এগুলো এখন রি-শিডিউল করতে হচ্ছে।’
এছাড়া মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক সিঙ্গাপুর এয়ারলাইন্স, কাতার এয়ারলাইন্স, সৌদি এরাবিয়ান এয়ারলাইন্স, ওমান এয়ার, সালাম এয়ার, এমিরেটস, ইতিহাদ এয়ারলাইন্স, এয়ার এরাবিয়া, এয়ার এরাবিয়া দুবাই, ফ্লাই দুবাইয়ের এক সপ্তাহে প্রায় ২০ হাজার যাত্রীকে আনা-নেওয়ার কথা ছিল। ফ্লাইট বন্ধের সিদ্ধান্তে তারাও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
এদিকে প্রবাসীদের ক্ষোভের মুখে তাদের জন্য শিগগিরই বিশেষ ফ্লাইট চালুর ঘোষণা দিয়েছে সরকার। মূলত সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ওমান, কাতার ও সিঙ্গাপুরগামী কর্মীদের জন্য বিশেষ ফ্লাইটের ব্যবস্থা করা হবে। এ বিষয়ে বৃহস্পতিবার বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) বিস্তারিত ওয়ার্ক প্ল্যান নিশ্চিত করার কথা থাকলেও এই নিউজ লেখা পর্যন্ত (বিকেল সাড়ে ৪টা নাগাদ) কোনো আপডেট পাওয়া যায়নি।
পবিত্র রমজানে মাসে শুনুন পবিত্র সূর
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post