ইসলাম ধর্মের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মাস “রমজান”। এই পবিত্র মাসে বিশ্বের কোটি মুসলমান দিনে রোজা এবং রাতে আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের আশায় ইবাদত বন্দেগী করেন। রমজানের রোজা আল্লাহর ফরজ বিধান। রোজাকে আরবিতে ‘সাওম’ বলা হয়। সাওমের আভিধানিক অর্থ বিরত থাকা।
আর ইসলামের পরিভাষায় রোজা বলা হয়- সুবহে সাদিক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত— রোজার উপযুক্ত ব্যক্তি রোজার নিয়তে পানাহার, স্ত্রীসম্ভোগ ও এসব সম্পর্কিত বিষয়াদি থেকে বিরত থাকা। (উমদাতুলকারি, খণ্ড : ১০, পৃষ্ঠা : ৩৭৫; তাবয়িনুল হাকাইক, খণ্ড : ২, পৃষ্ঠা : ১৪৫)
মুসলিম উম্মাহ এই বিষয়ে একমত যে, রমজানের রোজা শরিয়ত সমর্থিত কোনো কারণ ছাড়া ভেঙে ফেলা বা না রাখা কবিরা গুনাহ। (সুরা বাকারা, আয়াত : ১৮৩-১৮৪; তাতার খানিয়া : খণ্ড : ৩, পৃষ্ঠা : ৩৫০)
প্রবাস টাইমের পাঠকদের জন্য রোজার নিয়তসংক্রান্ত কিছু জরুরি মাসআলা উল্লেখ করা হলো। যেগুলো জেনে রাখা প্রত্যেক রোজাদারের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, রোজা শুদ্ধ হওয়ার জন্য নিয়তের বিকল্প নেই। তাই নিয়ত সঠিকভাবে না হলে কিংবা নিয়তের ক্ষেত্রে কোনো ধরনের অসুবিধা হলে— রোজার শুদ্ধতাই হুমকির মুখে পড়ে। নিম্নে রোজার নিয়ত সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ কিছু মাসআলা উল্লেখ করা হলো—
♦ রোজার নিয়ত মুখে করা জরুরি নয়, অন্তরে নিয়ত করলেই যথেষ্ট হবে। তবে মুখে নিয়ত করা উত্তম। (ফতোয়াতে শামি : খণ্ড : ৩, পৃষ্ঠা : ৩৪৫)
♦ নিয়ত আরবিতে হওয়া জরুরি নয়। যেকোনো ভাষায় নিয়ত করা যায়। নিয়ত এভাবে করা যায়— আমি আজ রোজা রাখার নিয়ত করলাম। (জাওয়াহিরুল ফিকাহ : খণ্ড : ১, পৃষ্ঠা : ৩৭৮)
♦ সূর্য হেলে পড়ার দেড় ঘণ্টা আগ পর্যন্ত রমজানের রোজার নিয়ত করা বৈধ। তবে রাতে নিয়ত করাই উত্তম। (ফতোয়াতে তাতার খানিয়া : খণ্ড : ২, পৃষ্ঠা : ২৭০; আহসানুল ফাতওয়া : খণ্ড : ৪, পৃষ্ঠা : ৪৪৬; জাওয়াহিরুল ফিকাহ : খণ্ড : ১, পৃষ্ঠা : ৩৭৮)
♦ আরও স্পষ্ট করে বললে— রমজানের রোজার জন্য সুবহে সাদিকের পূর্বে মনে মনে এই নিয়ত করবে যে, ‘আমি আজ রোজা রাখবো’ অথবা দিনে আনুমানিক ১১টার পূর্বে মনে মনে নিয়ত করবে যে, আমি আজ রোজা রাখলাম। মূল কথা হলো- মুখে নিয়ত করা জরুরি নয়, বরং মুস্তাহাব। (রদ্দুল মুহতার: ২/৩৭৭)
♦ রমজানে রোজা রাখার উদ্দেশ্যে খাওয়াটাই নিয়ত। যদি কোনো কিছু খাওয়া অথবা পান করা না হয়, তাহলে সূর্য হেলে পড়ার দেড় ঘণ্টার আগেই নিয়ত করে নেবে। (ফতোয়ায়ে রহিমিয়া : খণ্ড : ৩, পৃষ্ঠা : ৩৭)
♦ যদি কেউ সূর্য হেলে পড়ার আগে নিয়ত করে যে আমি এই সময় থেকে রোজাদার, তাহলে তার রোজা শুদ্ধ হবে না। (ফতোয়ায়ে শামি : খণ্ড : ৩, পৃষ্ঠা : ৩৭)
♦ হানাফি মাজহাব মতে, নিয়ত ছাড়া রোজা শুদ্ধ হয় না। (তাতার খানিয়া : খণ্ড : ২, পৃষ্ঠা : ২৭০)
♦ প্রতিটি রোজার জন্য পৃথক পৃথক নিয়ত করা আবশ্যক। সব রোজার জন্য প্রথম রোজার নিয়ত যথেষ্ট নয়। (ফতোয়াতে রহিমিয়া : খণ্ড : ২, পৃষ্ঠা : ১৫)
♦ যে ব্যক্তি পুরো রমজানই রোজা রাখা বা না রাখার কিছুই নিয়ত করেনি, তাহলে সে কাজা করে নেবে। (ফতোয়ায়ে তাতার খানিয়া : খণ্ড : ২, পৃষ্ঠা : ২৭১)
রোজা আল্লাহর ফরজ বিধান। মানুষের শক্তি, সামর্থ্য ও সাধ্যের বাইরে ইসলামে কোনো বিধান নেই। আল্লাহ তা’আলা ইরশাদ করেন, ‘আল্লাহ কারো ওপর এমন কষ্টদায়ক দায়িত্ব অর্পণ করেন না, যা তার সাধ্যাতীত।’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ২৮৬)
শরিয়ত সমর্থিত কারণ ছাড়া ছেড়ে দেওয়া কবিরা গুনাহ। কারণ, রমজানের রোজা ফরজে আইন। আর যে তা অস্বীকার করবে— সে কাফির। বিনা ওজরে রোজা না রাখলে ফাসিক ও কঠিন গুনাহগার হতে হবে। (সুরা বাকারা, আয়াত : ১৮৩-১৮৪; ফাতওয়া তাতারখানিয়া, খণ্ড : ০৩, পৃষ্ঠা : ৩৫০)
রোজা ফরজ বিধান হওয়া সত্ত্বেও কিছু কিছু কারণে ভেঙে ফেলা যায়। নিম্নে কয়েকটি কারণ উল্লেখ করা হলো—
এক.
যদি এমন অসুস্থ হয়ে পড়ে যে রোজা রাখার শক্তি নেই বা রোজা রাখার দ্বারা অসুস্থতা বেড়ে যাবে, তাহলে তার জন্য রোজা না রাখার অনুমতি রয়েছে। তবে হ্যাঁ, যখনই সুস্থ হয়ে যাবে তখনই তার ওপর কাজা করে নেওয়া ওয়াজিব।’ (আপকে মাসায়েল, খণ্ড : ০৩, পৃষ্ঠা : ২০২)
দুই.
রোজা রাখার দরুন কোনো ব্যক্তি এমন দুর্বল হয়ে যায় যে, রোজা রাখার শক্তি নেই; তাহলে ওই ব্যক্তির জন্য রোজা ভেঙে ফেলা বৈধ। (আপকে মাসায়েল, খণ্ড : ০৩, পৃষ্ঠা : ২০৩)
তিন.
রোজা রাখা অবস্থায় যদি এমন ক্ষুধা বা পিপাসা লাগে যে, প্রাণ চলে যাওয়ার উপক্রম হয়ে যায়; তাহলে রোজা ভেঙে ফেলা যাবে। (আলমগিরি, খণ্ড : ০১, পৃষ্ঠা : ২০৭)
চার.
গর্ভধারিণী নারী বা স্তন্যদানকারিণী নারী যদি নিজের ওপর অথবা নিজের বাচ্চার ওপর প্রাণাতিপাতের আশঙ্কা করে, তাহলে তার জন্য রোজা ভেঙে ফেলা বৈধ। (আলমগিরি, খণ্ড : ০১, পৃষ্ঠা : ২০৭)
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post