প্রবাসীদের জন্য সেবার মান উন্নত করাসহ নানা পদক্ষেপের ফলে প্রবাসী আয়ে আবার গতি ফিরেছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) সাড়ে ৬০০ কোটি ডলার ছাড়িয়েছে রেমিট্যান্স। এর মধ্যে ৬১ শতাংশের বেশি এসেছে মাত্র পাঁচটি দেশ থেকে। এই পাঁচ দেশের মধ্যে এককভাবে রেমিট্যান্স পাঠানোর শীর্ষে রয়েছে সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই)। আর দ্বিতীয় ও তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও সৌদি আরব। তবে একক মাস হিসেবে শুধু সেপ্টেম্বরে আমিরাতকে টপকে শীর্ষ উঠে এসেছে যুক্তরাষ্ট্র। দেশভিত্তিক রেমিট্যান্স নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের ত্রৈমাসিক প্রতিবেদন পর্যালোচনায় এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
শিক্ষার্থীদের কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে চলতি অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে রেমিট্যান্স ব্যাপকহারে কমে যায়। কেন না, আন্দোলনকে কেন্দ্র করে ওই সময় কয়েক দিন ব্যাংক বন্ধ ছিল। আবার শেখ হাসিনা সরকারকে অসহযোগিতার জন্য ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স না পাঠাতে ব্যাপক ক্যাম্পেইন হয়। তবে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর প্রবাসীদের জন্য বেশকিছু পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এখন প্রবাসীরা বিমানবন্দরে নেমে টেলিফোনে স্বজনদের সঙ্গে ফ্রিতে কথা বলতে পারছেন। লাগেজ পেতেও ভোগান্তি কমানো হয়েছে। ডলার সংকট কাটাতে আন্তঃব্যাংক বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেনের ক্ষেত্রে বিদ্যমান ব্যান্ড ১ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে আড়াই শতাংশ করা হয়েছে। ওই সিদ্ধান্তের ফলে বিনিময় হার নির্ধারণের ক্রলিং পেগ ব্যবস্থায় ডলারের মধ্যবর্তী দর ১১৭ থেকে সর্বোচ্চ ১২০ টাকা পর্যন্ত বাড়াতে পারছে ব্যাংকগুলো। এ কারণে প্রবাসী আয় কেনার ক্ষেত্রে ডলারের দামও কিছুটা বেশি দিতে পারছে তারা। এ ছাড়া বিভিন্ন প্রয়োজনে প্রবাসীদের জন্য বিনা জামানতে ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণের সুযোগ দিয়ে সম্প্রতি সার্কুলার জারি করা হয়েছে। এসব পদক্ষেপের ফলে ব্যাংকিং চ্যানেলে আগের চেয়ে বেশি প্রবাসী আয় পাঠাতে উৎসাহিত হচ্ছেন প্রবাসীরা। ফলে আগস্ট ও সেপ্টেম্বর মাসে প্রবাসী আয়ে ব্যাপক উত্থান হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন বলছে, অস্থিরতার মাস জুলাইয়ে রেমিট্যান্স আসে ১৯১ কোটি ডলার, যা ছিল ১০ মাসের মধ্যে সবচেয়ে কম। তবে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর আগস্টে ২২২ কোটি ১৩ লাখ ডলার রেমিট্যান্স পাঠান প্রবাসীরা। সেপ্টেম্বরে তা আরও বেড়ে হয়েছে ২৪০ কোটি ৪৭ কোটি ডলার। সব মিলিয়ে চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) ৬৫৪ কোটি ২৭ লাখ ডলার রেমিট্যান্স এসেছে। গত অর্থবছরে একই সময়ে এসেছিল ৪৯০ কোটি ৭০ লাখ ডলার। সেই হিসাবে এবার তিন মাসে রেমিট্যান্স বেড়েছে প্রায় ৩৩ দশমিক ৩০ শতাংশ।
পাঁচ দেশ থেকে আসছে ৬১ শতাংশ : বরাবরই যুক্তরাষ্ট্র, সংযুক্ত আরব আমিরাত, সৌদি আরব, যুক্তরাজ্য ও মালেশিয়া থেকে বেশি রেমিট্যান্স আসছে। এই পাঁচ দেশ থেকে গত তিন মাসে রেমিট্যান্স এসেছে ৩৯৯ কোটি ৬৭ লাখ ডলার, যা আলোচ্য তিন মাসে আসা মোট রেমিট্যান্সের ৬১ দশমিক ০৮ শতাংশ। গত অর্থবছরের পুরো সময়েও এই পাঁচ দেশ থেকে ৬১ শতাংশের বেশি রেমিট্যান্স এসেছিল। গত অর্থবছরে দেশে মোট রেমিট্যান্স এসেছিল ২ হাজার ৩৯১ কোটি ২২ লাখ ডলার। এর মধ্যে এই পাঁচ দেশ থেকে আসে ১ হাজার ৪৭০ কোটি ৪০ লাখ ডলার বা ৬১ দশমিক ৪৯ শতাংশ।
আলোচ্য ত্রৈমাসিকে প্রবাসী আয়ে শীর্ষে ইউএই : চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে সর্বোচ্চ ১০৩ কোটি ২২ লাখ ডলারের রেমিট্যান্স এসেছে সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই) থেকে। এটি আলোচ্য তিন মাসে আসা মোট রেমিট্যান্সের প্রায় ১৫ দশমিক ৭৭ শতাংশ। এ সময়ে ৯২ কোটি ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়ে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। সৌদি আরব থেকে আলোচ্য তিন মাসে রেমিট্যান্স এসেছে ৮৫ কোটি ৮৮ লাখ ডলার। এই রেমিট্যান্স নিয়ে একসময় শীর্ষ অবস্থানে থাকা দেশটির অবস্থান এখন তৃতীয়। এ ছাড়া আলোচ্য তিন মাসে মালেশিয়া থেকে ৬১ কোটি ৯৬ লাখ ডলার, যুক্তরাজ্য থেকে ৫৬ কোটি ৫৬ লাখ ডলার, ইতালি থেকে ৪২ কোটি ৫৭ লাখ ডলার, কুয়েত থেকে ৩৫ কোটি ৯১ লাখ ডলার, ওমান থেকে ৩২ কোটি ৭৫ লাখ ডলার, কাতার থেকে ২৬ কোটি ৫১ লাখ ডলার ও সিঙ্গাপুর থেকে ১৯ কোটি ৭৫ লাখ ডলারের রেমিট্যান্স এসেছে।
সেপ্টেম্বরে শীর্ষে যুক্তরাষ্ট্র : সংযুক্ত আরব আমিরাতকে পেছনে ফেলে চলতি বছরের সেপ্টেম্বর মাসে প্রবাসী আয় প্রেরণকারী শীর্ষ দেশ এখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। এ মাসে দেশটি থেকে রেমিট্যান্স এসেছে ৩৮ কোটি ৭৯ লাখ ৫০ হাজার মার্কিন ডলার। যেখানে আগস্টে রেমিট্যান্স এসেছিল ২৯ কোটি ৩৪ লাখ ৭০ হাজার মার্কিন ডলার, তখন প্রবাসী আয় প্রেরণকারী দেশগুলোর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র ছিল দ্বিতীয় অবস্থানে। আর ৩৩ কোটি ৭৭ লাখ ৬০ হাজার ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়ে সংযুক্ত আরব আমিরাত ছিল প্রথম অবস্থানে।
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post