ভারতীয় শিল্পপতি রতন টাটা মারা গেছেন। বয়সজনিত সমস্যা নিয়ে মহারাষ্ট্র রাজ্যের মুম্বাইয়ের একটি হাসপাতালে তিনি ভর্তি ছিলেন। বুধবার (৯ অক্টোবর) রাতে সেখানেই তিনি মারা যান। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮৬ বছর।
৭ অক্টোবর মুম্বাইয়ে ব্রিচক্যান্ডি হাসপাতালে যখন তাকে ভর্তি করা হলো, শেষবার ট্যুইট করলেন, “গুজব ছড়ানো হচ্ছে আমাকে নিয়ে। আমি একদম ভালো আছি। রুটিন চেকআপের জন্য ভর্তি হয়েছি।
কিন্তু মাত্র দুদিনেই যে সব শেষ হয়ে যাবে, কে জানত! ৯ অক্টোবর রাতে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলেন রতন টাটা। টাটা গোষ্ঠীকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে গেছেন তিনি। তার সময়েই টাটা গোষ্ঠীর বৃদ্ধি হয়েছে সবচেয়ে বেশি। কত সম্পত্তি রেখে গেলেন রতন টাটা?
১৯৯১ সাল থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত টাটা গোষ্ঠীর চেয়ারম্যান বুধবার রাতে ভারতীয় নাগরিকরা পেল সেই দুঃসংবাদ। রতন টাটা আর নেই। রতন টাটাকে বিশ্বের সবচেয়ে সফল শিল্পপতিদের মধ্যে একজন বলে গণ্য করা হয় এবং তার নেতৃত্বেই টাটা গ্রুপ শুধু ভারতেই নয়, সারা বিশ্বে একটি আলোড়ন ফেলে দিয়েছিল।
রতন টাটা ১৯৯১ সালে টাটা গোষ্ঠীর চেয়ারম্যানের পদ গ্রহণ করেন এবং ২০১২ সাল পর্যন্ত কোম্পানির চেয়ারম্যান ছিলেন।
কত সম্পদ রেখে গেলেন রতন টাটা?
টাটা গোষ্ঠীর ব্যবসা সারা বিশ্বে ছড়িয়ে আছে এবং বাড়ির রান্নাঘর থেকে আকাশে বিমান পর্যন্ত। এই গ্রুপের ১০০টিরও বেশি তালিকাভুক্ত কোম্পানি রয়েছে এবং তাদের মোট টার্নওভার প্রায় ৩০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।
প্রয়াত রতন টাটার সম্পদ সম্পর্কে বলতে গেলে, রিপোর্ট অনুসারে, ভারতের এই ‘রতন’ প্রায় ৩ হাজার ৮০০ কোটি টাকার আনুমানিক সম্পদ রেখে গেছেন।
সংবাদমাধ্যম বলছে, মৃত্যুর সময় রতন টাটার মোট সম্পত্তির পরিমাণ প্রায় ৩,৮০০ কোটি টাকা। তার আয়ের বেশিরভাগটাই আসত টাটা গ্রুপ ও টাটা সন্স থেকে। আয়ের অনেকটাই তিনি দান করতেন। টাটা সন্সের সাবেক চেয়ারম্যান মাসিক বেতন পেতেন আড়াই কোটি টাকা।
এছাড়া মুম্বইয়ের কোলাবায় সমুদ্র সংলগ্ন এলাকায় তার বিলাসবহুল বাংলো রয়েছে। যার মূল্য প্রায় দেড়শো কোটি টাকা। টাটা সন্সে তার যে শেয়ার ছিল সেখান থেকে তিনি যে অর্থ উপার্জন করতেন, তার বেশিরভাগটাই চ্যারিটেবল ট্রান্সে দান করতেন এই শিল্পপতি।
এছাড়া ওলা, পেটিএমের মতো সংস্থায় তার বিনিয়োগ ছিল। তার সংগ্রহে একাধিক বিলাসবহুল গাড়ি ছিল। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য টাটা ন্যানো। যা তারই মস্তিষ্কপ্রসূত ছিল। এছাড়া টাটা নেক্সন, মার্সিডিজ বেঞ্জ, ল্যান্ড রোভার, ক্যাডিল্যাক, শেভ্রলে, হন্ডা সিভিক ইত্যাদি।
আয়ের একটা বড় অংশ দাতব্য কাজে
২৮ ডিসেম্বর ১৯৩৭ সালে জন্মগ্রহণকারী রতন টাটার সম্পদের এই পরিসংখ্যানটি তার বিশ্বব্যাপী ব্যবসার বিবেচনায় কম বলে মনে হতে পারে। মনে হতেই পারে, এত বড় গ্রুপের চেয়ারম্যানের সম্পত্তি এত কম! এর পেছনের কারণ হচ্ছে, তার উপার্জনের একটি বড় অংশ দান করা হয়।
রতন টাটা তার উদারতার জন্য পরিচিত ছিলেন এবং ভারতের শীর্ষ জনহিতৈষীদের মধ্যে ছিলেন, যারা তার আয়ের একটি বড় অংশ টাটা ট্রাস্টে দান করতেন। এই দানগুলো টাটা ট্রাস্ট হোল্ডিং কোম্পানির অধীনে সংস্থাগুলোর করা মোট উপার্জনের ৬৬ শতাংশ অবদান রাখে।
টাটা ছিল সবার জন্য সহায়ক
২০০৪ সালের সুনামি হোক বা করোনা মহামারির প্রাদুর্ভাব, রতন টাটা প্রতিটি সংকটে সাহায্য করতে এগিয়ে ছিলেন। শুধু সামাজিক কাজেই নয়, আর্থিক সমস্যায় ভুগছেন এমন ছাত্রদের সাহায্য করার জন্যও তিনি সর্বদা অগ্রণী ছিলেন।
তার ট্রাস্ট এই ধরনের ছাত্রদের বৃত্তি দেয়। এই ধরনের ছাত্রদের জেএন টাটা এনডাউমেন্ট, স্যার রতন টাটা স্কলারশিপ এবং টাটা স্কলারশিপের মাধ্যমে সাহায্য দেওয়া হয়। জীবনে অন্তত ৯ হাজার কোটি টাকা তিনি শিক্ষা, স্বাস্থ্য, গ্রামোন্নয়ন ও সামাজিক খাতে দান করেছেন।
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post