যুক্তরাজ্যে গবেষণায় এক নতুন করে আস্তিকের চেয়ে নাস্তিকের সংখ্যা বেশি বলে দাবি করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, যুক্তরাজ্যে এখন সৃষ্টিকর্তায় বিশ্বাস করে এমন মানুষের চেয়ে, বিশ্বাস করে না এমন মানুষের সংখ্যা বেশি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যুক্তরাজ্য তার প্রথম নাস্তিক যুগে প্রবেশ করছে। গবেষণা সংস্থা এক্সপ্লেইনিং এথিজমের গবেষণায় এ তথ্য উঠে এসেছে।
কেন মানুষজন নাস্তিক হয়ে ওঠে তা খুঁজে বের করতে গবেষণা দলটি বিশ্বজুড়ে ছয়টি দেশের (ব্রাজিল, চীন, ডেনমার্ক, জাপান, যুক্তরাজ্য এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র) প্রায় ২৫ হাজার মানুষের ওপর গবেষণা চালায়। তারা ব্রিটিশ সোশ্যাল অ্যাটিটিউড সার্ভে এবং ওয়ার্ল্ড ভ্যালুস সার্ভে থেকে একত্রিত ফলাফলও আমলে নিয়ে দেখেছে যে, যুক্তরাজ্যে নাস্তিকের সংখ্যা বেশি।
যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম দ্য ইনডিপেনডেন্টের প্রতিবেদনে বলা হয়, গবেষণাটির প্রধান অনুসন্ধানকারী ছিলেন যুক্তরাজ্যের কুইন্স ইউনিভার্সিটির ইতিহাস, নৃবিজ্ঞান, দর্শন ও রাজনীতি বিভাগের অধ্যাপক জোনাথন ল্যানম্যান। এ ছাড়া গবেষণাটির নেতৃত্বে আরও ছিলেন কেন্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. লোইস লি এবং লন্ডনের ব্রুনেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. আইয়ানা উইলার্ড, কুইন্সের ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ড. কনের রাসেল, সেন্ট মেরি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক স্টিফেন বুলিভান্ট, টুইকেনহ্যাম এবং কভেন্ট্রি বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. মিগুয়েল ফারিয়াস এবং বেশ কয়েকজন অতিরিক্ত আন্তর্জাতিক গবেষক। এই প্রকল্পটি জন টেম্পলটন ফাউন্ডেশন দ্বারা অর্থায়িত হয়েছিল এবং তিন বছর ধরে চলেছিল।
কেন্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. লোইস লি বলেন, যুক্তরাজ্য তার প্রথম নাস্তিক যুগে প্রবেশ করছে। যদিও নাস্তিক্যবাদ কিছু সময়ের জন্য আমাদের সংস্কৃতিতে উল্লেখযোগ্য ছিল, তা কার্ল মার্কস, জর্জ এলিয়ট বা রিকি গারভেইসের মাধ্যমেই হোক না কেন। এবারই আমাদের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো আস্তিকদের চেয়ে নাস্তিকের সংখ্যা বেশি হতে শুরু করেছে।
গবেষকরা নাস্তিক মূল্যবোধের আরও বিশদ চিত্র পেতে তাদের পূর্ববর্তী প্রকল্প আন্ডারস্ট্যান্ডিং আনবিলিফ এর ফলাফলগুলোও গবেষণায় ব্যবহার করেছে। গবেষণায় দেখা গেছে, মানুষ কেন ঈশ্বরে বিশ্বাস করে বা না করে না এই ব্যাখ্যায় তারা বুদ্ধি, মৃত্যুর ভয়ের মতো কিছু সাধারণ বিষয় তুলে ধরেছে।
এতে আরও বলা হয়েছে, বিশ্বাসের ওপর সবচেয়ে শক্তিশালী প্রভাব হলো বাবা–মায়ের লালন-পালন এবং সৃষ্টিকর্তায় বিশ্বাস সম্পর্কিত সামাজিক প্রত্যাশা। গবেষণায় দেখা গেছে, ধর্মবিরোধী বাবা–মায়েরা তাদের সন্তানরা ঈশ্বরে বিশ্বাস করে কি না তাতে উল্লেখযোগ্যভাবে প্রভাব ফেলেন না, তবে তাদের সন্তানরা নৈতিকভাবে ধর্মের বিরোধী কিনা তাতে তারা দৃঢ়ভাবে প্রভাব ফেলে।
গবেষণায় আরও বলা হয়, ঈশ্বরের প্রতি অবিশ্বাস করলেও নাস্তিকেরা অতিপ্রাকৃত কিছু ঘটনায় বিশ্বাস করে। গবেষণায় বলা হয়েছে যে, বেশিরভাগ নাস্তিকদের সাধারণ জনগণের মতোই বস্তুনিষ্ঠ নৈতিক মূল্যবোধ, মানুষের মর্যাদা এবং সহজাত অধিকারে বিশ্বাস করে।
অধ্যাপক ল্যানম্যান বলেন, এই প্রকল্পটি নাস্তিক এবং আস্তিকদের প্রতি নেতিবাচক গৎবাঁধা এবং কলঙ্কের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সহায়তা করবে।
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post