এ মুহূর্তে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে, বিভিন্ন জাতি-গোষ্ঠীর মধ্যে সংঘাত চলছে। কিন্তু গাজা, তথা সমগ্র মধ্যপ্রাচ্যে ‘ইসরায়েলি কায়দার যুদ্ধ’ বা বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর যুদ্ধ যেন সহিংসতায় অন্য সব যুদ্ধকে ছাড়িয়ে গেছে।
ইসরায়েলের প্রতিরক্ষানীতি হচ্ছে—তুমি তোমার শত্রুকে এমনভাবে আঘাত করো যা সে কল্পনাও করতে পারে না। বিশ্ব মানবিকতার প্রতি বুড়ো আঙুল দেখিয়ে সাত দশক ধরে সেই নীতিই মেনে চলছে ইসরায়েল। চলমান গাজা ও লেবানন যুদ্ধেও একই দৃশ্য দেখা যাচ্ছে।
সোমবার গাজা যুদ্ধের এক বছর পূর্ণ হলো। নানা কারণে এই যুদ্ধ আধুনিক যুগের অন্য যেকোনো যুদ্ধের তুলনায় বেশি নৃশংস।
এ মুহূর্তে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে, বিভিন্ন জাতি-গোষ্ঠীর মধ্যে সংঘাত চলছে। কিন্তু গাজা, তথা সমগ্র মধ্যপ্রাচ্যে ‘ইসরায়েলি কায়দার যুদ্ধ’ বা বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর যুদ্ধ যেন সহিংসতায় অন্য সব যুদ্ধকে ছাড়িয়ে গেছে।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর এক নজিরবিহীন ঘটনার সাক্ষী হয় গোটা বিশ্ব। ইসরায়েলের বিশ্বসেরা গোয়েন্দা সংস্থা, নজরদারি, স্যাটেলাইট ও প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে অবজ্ঞা করে দেশটির দক্ষিণাঞ্চলে ঢুকে পড়ে হামাসের যোদ্ধারা। রকেট হামলার পাশাপাশি হ্যান্ড গ্লাইডার ও মোটরসাইকেলের মতো বাহন ব্যবহার করে তারা ধ্বংসযজ্ঞ ও হত্যাকাণ্ডে লিপ্ত হয়। সে হামলায় এক হাজার ২০০ ইসরায়েলি ও বিদেশি নাগরিক নিহত হন। হামাসের হাতে জিম্মি হন আরও প্রায় ২৫০ জন।
এই অভিযানকে হামাস ‘অপারেশন আল-আকসা স্ট্রম’ নামে আখ্যায়িত করে। ইহুদিদের একটি ছুটির দিনে এই হামলা চালায় হামাস।
সেদিনই প্রতিশোধমূলক পাল্টা হামলা শুরু করে ইসরায়েল।
নারী, শিশু, প্রবীণ, সামরিক-বেসামরিক—কাউকে আলাদা না করে নির্বিচারে স্থল ও আকাশ হামলা চালায় ইসরায়েল। গাজায় বছরব্যাপী ইসরায়েলি হামলায় নিহতের সংখ্যা ৪১ হাজার ৮৭০। আহত হয়েছেন ৯৭ হাজার ১৭৭ জন। ভাঙা পাথরের নিচে চাপা পড়ে আছেন বা নিখোঁজ আছেন আরও হাজার দশেক মানুষ।
এক বছরে হামাস-ইসরায়েলের এই যুদ্ধের কিছু উল্লেখযোগ্য ঘটনা নিয়ে এই লেখা।
‘নিরাপদ এলাকা’ ও ত্রাণকর্মীদের ওপর হামলা
আগ্রাসনের শুরুর দিকে ইসরায়েল উত্তর গাজার বাসিন্দাদের দক্ষিণের ‘নিরাপদ অঞ্চলে’ সরে যাওয়ার আদেশ দেয়। পাশাপাশি মধ্য গাজা ও অন্যান্য অংশ থেকেও গাজার মোট জনসংখ্যার একটি বড় অংশ দক্ষিণের তথাকথিত ‘নিরাপদ’ অঞ্চলে এসে জমায়েত হয়। বাস্তুচ্যুত হয়ে অস্থায়ী শিবিরগুলোয় মানবেতর জীবনযাপন শুরু করেন তারা।
কিন্তু অল্পদিন পর, ইসরায়েল দাবি করে, উত্তরে নয়, হামাসের যোদ্ধারা দক্ষিণ গাজায় লুকিয়ে আছেন। এবার দক্ষিণ থেকে আবার উত্তরে সরে যেতে বলা হয় নিরীহ গাজাবাসীদের। বিষয়টা এমন না যে উত্তরে হামলা বন্ধ করেছে ইসরায়েল। ফলে, কার্যত পুরো গাজাই পরিণত হয় মরণ ফাঁদে।
জানুয়ারিতে জাতিসংঘের জরুরি মানবিক ত্রাণবিষয়ক সমন্বয়ক মার্টিন গ্রিফিথ বলেছিলেন, ‘গাজায় নিরাপদ জায়গা বলে কিছু নেই। জায়গাটা বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।’
গাজায় হামলা শুরুর পরপরই যুদ্ধকবলিত এই অঞ্চলে ত্রাণ প্রবাহে নিয়ন্ত্রণ বসায় ইসরায়েল। সংঘাত শুরুর আগে থেকেই বিশ্বের সবচেয়ে বড় ‘উন্মুক্ত কারাগারের’ বাসিন্দা গাজাবাসীরা মানবেতর জীবন যাপন করছিলেন। অনেকেই মিসর সীমান্ত দিয়ে আসা ত্রাণের ওপর পুরোপুরি নির্ভরশীল ছিলেন। সংঘাতের প্রাথমিক অবস্থায় পানি, বিদ্যুৎ, জ্বালানি, ইন্টারনেট ও মোবাইল ফোনের মতো জরুরি সেবাগুলো বারবার বন্ধ রাখে ইসরায়েল।
পাশাপাশি, সীমান্ত বন্ধ রাখা, ত্রাণকর্মীদের ওপর হামলা, ত্রাণবাহী ট্রাকে অহেতুক তল্লাশিসহ নানাভাবে ত্রাণ কার্যক্রমে বাধা দেয় ইসরায়েল।
সবচেয়ে চাঞ্চল্যকর ঘটনা ঘটে যখন এপ্রিলে ইসরায়েলি বিমান হামলায় সাত ত্রাণকর্মী নিহত হন। গাজার দেইর এল-বালাহ শহরে খাবার বিতরণ করে ফিরে আসার পথে মার্কিন মানবিক ত্রাণ সংস্থা ওয়ার্ল্ড সেন্ট্রাল কিচেনের (ডব্লিউসিকে) সাত কর্মী বহনকারী গাড়ি বহরে হামলা চালায় ইসরায়েল।
নেতানিয়াহু সেই হামলার দায় স্বীকার করে জানান, এটি অনিচ্ছাকৃত ভুল ও ‘মর্মান্তিক’ ঘটনা।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছিলেন, ‘গাজায় মানবিক ত্রাণ বিতরণে জটিলতা দেখা দেওয়ার মূল কারণ এটাই—ইসরায়েল বেসামরিক ব্যক্তিদের কাছে অত্যন্ত জরুরি মানবিক ত্রাণ পৌঁছে দেওয়ার কাজে নিয়োজিত ত্রাণকর্মীদের সুরক্ষা দেওয়ার জন্য যথেষ্ট উদ্যোগ নেয়নি।
ওই ঘটনার পরও পরিস্থিতির কোনো উন্নতি হয়নি। ইসরায়েলের নির্বিচার ও বেপরোয়া হামলায় অসংখ্যবার সংস্থাটির ত্রাণ কার্যক্রমে বাধা আসে। সাময়িকভাবে ত্রাণ বিতরণ বন্ধও থাকে।
স্বাস্থ্য অবকাঠামোর ওপর হামলা
গাজা যুদ্ধের শুরু থেকেই ইসরায়েল দাবি বারবার করে এসেছে—হামাসের যোদ্ধারা বেসামরিক মানুষদের ‘মানব ঢাল’ হিসেবে ব্যবহার করছে। তারা লোকালয়ে লুকিয়ে আছে, স্কুল, গির্জা, মসজিদ ও আবাসিক ভবনে নিজেদের অবকাঠামো তৈরি করেছে, হাসপাতালের নিচে, ভূগর্ভে সুড়ঙ্গ খুঁড়েছে—এরকম দাবি করে এসব জায়গায় নির্বিচার হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। এ ক্ষেত্রে বড় লক্ষ্যবস্তু ছিল স্বাস্থ্য অবকাঠামো।
তুরস্কের রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা আনাদোলু বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বরাত দিয়ে জানিয়েছে, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে ২০২৪ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত গাজার স্বাস্থ্যসেবা অবকাঠামোর ওপর ৫১৬ বার ও পূর্ব জেরুজালেমসহ অধিকৃত পশ্চিম তীরে ৬১৯ বার হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল।
এসব হামলায় গাজায় ৭১৫ জন নিহত হন, ৩২ হাসপাতাল ও ১১০ স্বাস্থ্যসেবা কাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এ ছাড়া ১১৫টি অ্যাম্বুলেন্সের ওপর হামলা হয় ও ৬৩টি বিকল হয়ে যায়।
পূর্ব জেরুজালেম ও পশ্চিম তীরে ২৫ জন নিহত ও ১১ জন আহত হন। অন্তত ৪৪৪ অ্যাম্বুলেন্স ও ৫৬টি স্বাস্থ্যসেবা কাঠামো এসব হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
উল্লেখযোগ্য বিষয়, স্বাস্থ্যসেবা কাঠামোয় হামাসের বড় আকারের কার্যক্রম পরিচালনার কোনো বস্তুনিষ্ঠ প্রমাণ দিতে পারেনি ইসরায়েল। কোনো কোনো হাসপাতালের নিচে সুড়ঙ্গপথ আবিষ্কারের দাবি জানালেও সাংবাদিক বা পর্যবেক্ষককে তা খতিয়ে দেখতে দেয়নি ইসরায়েল।
এসব তথ্য এটাই নির্দেশ করছে, ইসরায়েল পরিকল্পিতভাবে ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্যসেবাকে পঙ্গু করে দেওয়ার চেষ্টা চালিয়েছে।
শিক্ষা ব্যবস্থার ওপর আঘাত
ইসরায়েলের নিরবচ্ছিন্ন হামলা ফিলিস্তিনিদের শিক্ষা ব্যবস্থাকেও ধ্বংস করেছে।
এবিসি নিউজ জানায়, ১ জুন থেকে ১ সেপ্টেম্বরের মধ্যে স্কুল ভবনে ইসরায়েলি হামলায় অন্তত ৩৫৪ জন নিহত হয়েছেন। ভবনগুলো আশ্রয় শিবির হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছিল।
গাজার মোট ৪৫৬ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ইসরায়েলি হামলায় ধ্বংস বা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। প্রায় সাত লাখ ১৮ হাজার শিক্ষার্থীর শিক্ষাজীবন ব্যাহত হয়েছে।
২৭ আগস্ট গাজার শিক্ষা মন্ত্রণালয় জানায়, ১০ হাজার ৮৮৮ জনেরও বেশি স্কুলগামী শিশু নিহত হয়েছে। এ ছাড়াও, ৫২৯ শিক্ষক ও কর্মী প্রাণ হারিয়েছেন। পাশাপাশি গাজায় ১৭ হাজার ২২৪ শিশু ও তিন হাজার ৬৮৬ শিক্ষক আহত হয়েছেন।
অযোগ্য মধ্যস্থতাকারী ও ‘ঘুমন্ত’ আরব লিগ
গাজায় যুদ্ধ শুরুর অল্প সময় পর থেকেই ‘মধ্যস্থতাকারীদের’ হাঁকডাক শুরু হয়। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের উদ্যোগে মিসর, কাতার ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিরা ইসরায়েল ও হামাসের প্রতিনিধিদের সঙ্গে নিয়মিত বৈঠক করেন। শুরু হয় তথাকথিত ‘যুদ্ধবিরতির আলোচনা’।
হামাসের দাবি, ইসরায়েলকে সেনা-সামন্ত নিয়ে চিরতরে গাজা ছেড়ে যেতে হবে। ইসরায়েলের দাবি, হামাসকে ‘ধ্বংস’ না করে আলোচনা নয়। এ ধরনের শর্তের বেড়াজালে অবধারিতভাবেই আলোচনায় অচলাবস্থা দেখা দেয়।
তা সত্ত্বেও, নভেম্বরে দুই সপ্তাহের যুদ্ধবিরতি হয়। মুক্তি পান ১১৭ ইসরায়েলি জিম্মি। পরিবর্তে, ইসরায়েলের কারাগারে আটকে ১৮০ ফিলিস্তিনি নাগরিক মুক্তি পান। কিন্তু এখানেই মধ্যস্থতাকারীদের সাফল্য শেষ। এরপর ১১ মাস পেরিয়ে গেছে। পুরোটা সময় জুড়েই এই তিন দেশের মধ্যস্থতাকারীরা ‘যুদ্ধবিরতি’র প্রচেষ্টা চালিয়ে গেছেন। কিন্তু আরাধ্য ফল আর আসেনি। ব্যর্থ হয়েছে একের পর এক সব ফর্মুলা।
জাতিসংঘের নিরাপত্তা কাউন্সিলে একাধিকবার যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব তোলা হলেও ‘মধ্যস্থতাকারীদের উদ্যোগে বাধা আসবে’ অজুহাতে এতে ভেটো দেয় যুক্তরাষ্ট্র।
পাশাপাশি, পুরোটা সময় আরব দেশগুলোর পারস্পরিক স্বার্থরক্ষার জোট ‘আরব লিগ’ নিষ্ক্রিয়। ১৯৪৫ সালে গঠিত এই সংগঠনে মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকার ২২ মুসলিম অধ্যুষিত দেশ আছে। ফিলিস্তিনকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা, ইসরায়েলের হাত থেকে জেরুজালেমকে সুরক্ষিত রাখা এবং গাজায় ইসরায়েলের আগ্রাসন ও অবরোধ ঠেকানোসহ বেশকিছু উদ্দেশ্য নিয়ে এই সংগঠনের গোড়াপত্তন হলেও, যুদ্ধের পুরোটা সময় বিচ্ছিন্নভাবে নিন্দা ও যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানানো ছাড়া এই সংগঠনের আর কোনো কার্যকারিতা দেখেননি বিশ্ববাসী।
অকার্যকর জাতিসংঘ ও নখদন্তহীন আন্তর্জাতিক আদালত
বৈশ্বিক সংকট নিরসনে জাতিসংঘের ওপর আস্থা রাখার দিন অনেক আগেই যেন শেষ হয়ে গেছে। মধ্যপ্রাচ্য সংকটে তা বারবার প্রমাণিত হয়েছে। সদস্য রাষ্ট্ররা একাধিকবার যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব দিলেও, প্রত্যেকবারই সেই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে ইসরায়েল। এমনকি, প্রস্তাব উত্থাপনকারীদের কটু কথা শোনাতেও ছাড়েনি তেল আবিব। তাদেরকে এ বিষয়টিকে সমর্থন জুগিয়েছে সবচেয়ে বড় বন্ধু যুক্তরাষ্ট্র।
রাশিয়া ও চীনের ভেটো ক্ষমতা নিয়ে বিভিন্ন সময় যুক্তরাষ্ট্র ভ্রুকুটি করলেও, ইসরায়েলের অমানবিক ও যুদ্ধাপরাধমূলক হামলা চালিয়ে যাওয়ার পথ সুগম করতে নিয়মিত ভেটো দিতে দ্বিধা করেনি ওয়াশিংটন।
একইভাবে, আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত ও আন্তর্জাতিক ন্যায়বিচার আদালতে ইসরায়েল ও নেতানিয়াহুসহ চলমান যুদ্ধের নেপথ্যে থাকা অন্যদের বিরুদ্ধে আনা মামলাগুলোও ‘নখদন্তহীন’ বলেই প্রতীয়মান হচ্ছে।
ইসরায়েলি সেনাদের হাতে জিম্মি হত্যা যুদ্ধবিরতির আলোচনার বড় অংশ জুড়ে থাকে হামাস ও অন্য ফিলিস্তিনি সংগঠনের হাতে আটক ইসরায়েলি জিম্মিদের মুক্তি। আলোচনায় সাফল্য না আসায় বেশ কয়েকবার সামরিক অভিযানের মাধ্যমে হামাসের হাত থেকে জিম্মিদের ছাড়িয়ে নেওয়ার চেষ্টা চালায় ইসরায়েল। এসব অভিযানেও তাদের নৃশংসতার প্রমাণ পেয়েছে বিশ্ব।
ডিসেম্বরে ফিলিস্তিনি যোদ্ধা ভেবে ‘ভুল করে’ তিন জিম্মিকে হত্যা করে ইসরায়েলি সেনারা। গাজায় অভিযান চালানোর সময় পরিচয় শনাক্ত করতে না পারায় এমন ভুল হয়েছে বলে দাবি করে ইসরায়েল। ঘটনার সময় ওই তিন জন তাদের গায়ের জামা খুলে ফেলেছিল। একজন সাদা পতাকা তোলার পরও গুলি করা হয়। ইসরাইলের সেনারা সাদা পতাকার কথাও স্বীকার করেন।
সেপ্টেম্বরে রাফার সুড়ঙ্গ থেকে ছয় জিম্মির মরদেহ উদ্ধার করে ইসরায়েল। তাদের দাবি, জিম্মিদেরকে উদ্ধারে এগিয়ে আসার সময় হামাসের যোদ্ধারা জিম্মিদের ঠাণ্ডা মাথায় হত্যা করে। তবে বিষয়টি নিয়ে বিতর্ক আছে। হামাসের দাবি, ইসরায়েলি হামলাই তাদের মৃত্যুর কারণ।
পরবর্তীতে ২৪ এপ্রিল ভিডিও বার্তায় হামাস দাবি করে, অন্তত ৭০ জিম্মি ইসরায়েলের বোমা হামলায় নিহত হয়েছেন।
উল্লেখ্য, ২৫০ জিম্মির মধ্যে ইতোমধ্যে ১১৭ জন মুক্তি পেয়েছেন। আটজনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে। বাকি প্রায় ৬০ জন এখনো মুক্তির অপেক্ষায়।
যুদ্ধের শুরু থেকেই ইসরায়েলিরা শান্তিপূর্ণ সমাধান ও জিম্মিদের মুক্তিকে প্রাধান্য দেওয়ার জন্য নেতানিয়াহুর সরকারের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করে যাচ্ছেন। এ ক্ষেত্রেও নেতানিয়াহু সরকার অনমনীয়তা প্রকাশ করে যাচ্ছে। সরকারের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা ও নেতানিয়াহু নিজেও একাধিকবার বলেছেন, তাদের মূল লক্ষ্য হামাসকে নির্মূল করা ও প্রতিশোধ নেওয়া।
প্রশ্নের পর প্রশ্ন
গাজার এই যুদ্ধে শুরু থেকেই অত্যাধুনিক ও মানব হত্যায় কার্যকর অস্ত্র ব্যবহার করেছে ইসরায়েল। হত্যা করেছে হামাস, হিজবুল্লাহ, হুতি ও ইরানের যোদ্ধাদের। ইসরায়েলের প্রত্যক্ষ মিত্র না হয়েও চীন-রাশিয়ার মতো দেশগুলো কার্যত নীরব দর্শকের ভূমিকায়। কেউ কেউ ‘মানব হত্যাকারী’ অস্ত্র রপ্তানি বন্ধের ঘোষণা দিলেও তা ইসরায়েলকে থামাতে যথেষ্ট নয়।
গাজা ছাড়িয়ে এই সংঘাত এখন লেবানন, ইরান, সিরিয়া ও ইয়েমেনেও ছড়িয়ে পড়েছে।
এক বছরের এই রক্তবন্যার পর বিবেকবান বিশ্ব নাগরিকদের মনে এখন প্রশ্ন জেগেছে—কবে থামবেন নেতানিয়াহু? কবে লাঘব হবে গাজাবাসীর দুঃখ-দুর্দশা? আরব বিশ্ব কি চেয়ে চেয়েই দেখবে ইসরায়েলের হাতে তাদের প্রতিবেশীদের ধ্বংস?
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post