বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ঢাকার কাফরুল থানার একটি হত্যা মামলায় একাধিক ব্যক্তিকে গায়েবী আসামি করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ মামলায় দেশের বিভিন্ন জেলার ৭১ জনসহ অজ্ঞাত আরও ২০০-৩০০ জনকে আসামি করা হয়েছে। এসব আসামির মধ্যে ৫ জন ভোলার লালমোহন উপজেলার স্থায়ী বাসিন্দা। এমনকি এক আসামি ওমান প্রবাসী হলেও তাকে ঢাকার এ হত্যা মামলায় আসামি করা হয়েছে।
এ ঘটনার সময় অনেকে ঘটনাস্থলে না থাকলেও ব্যক্তিগত শত্রুতার জেরে তাদেরকে উদ্দেশ্যমূলকভাবে হত্যা মামলায় জড়ানো হয়েছে বলে জানা গেছে।
অভিযোগ উঠেছে, এলাকার ব্যক্তিগত শত্রুতার জেরে মামলার স্বাক্ষী আজমিন জাফর ইকবাল তাদেরকে মামলায় জড়িয়ে নাম কাটানোর কথা বলে জনপ্রতি ৫ থেকে ১০ লাখ টাকা দাবি করেছেন, দরকষাকষির একপর্যায়ে বিষয়টি ৩ লাখে আসে।। এ সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্যপ্রমাণে বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে।
আজমিন জাফর ইকবালের বাড়ি ভোলার চরফ্যাশন উপজেলার শশিভূষণ থানার জাহানপুর ইউনিয়নে বলে জানা গেছে।
আজমিন জাফর ইকবাল মামলা বাণিজ্য করতে ঢাকা মহানগর বিএনপি মিডিয়া প্রচার দলের সভাপতি হিসেবে ভিজিটিং কার্ড ছাপিয়ে এই প্রতারণা করে আসছেন বলেও অভিযোগ উঠেছে। এছাড়া তিনি আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরার নামও নিজের ভিজিটিং কার্ডে ব্যবহার করেন বলে জানা গেছে। প্রতারক আজমিনের একটি ভিজিটিং কার্ডে দেখা যায়, সেখানে তিনি নিজেকে ‘আল জাজিরা নিউজ বিডির সাংবাদিক’ হিসেবে পরিচয় দিয়েছেন। এছাড়াও ওই ভিজিটিং কার্ডে নিজের পরিচয় হিসেবে ‘নিউ গ্রাম বাংলা উন্নয়ন সংস্থার চেয়ারম্যান, ঢাকা ওয়ান্ডার্স ক্লাব মতিঝিলের সদস্য, সাবেক সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক ঢাকা মহানগর উত্তর জিয়া মঞ্চ, সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক ঢাকা মহানগর উত্তর তরুণ প্রজন্ম দল, সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ঢাকা সরকারি বাংলা কলেজ ছাত্রদল, সাবেক সভাপতি মোহাম্মদপুর থানা জিয়া মঞ্চ’ লিখেছেন।
ঘটনা সূত্রে জানা গেছে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিহতদের স্বজনদের ব্যবহার করে রাজধানীর একাধিক থানায় মামলা করেন আজমিন। এসব মামলায় তার ব্যক্তিগত শত্রুতাকে কেন্দ্র করে প্রবাসী, নিরীহ শ্রমজীবী, ছাত্র ও ব্যবসায়ীদের টার্গেট করে মামলায় ফাঁসিয়ে মামলা থেকে নাম বাদ দিতে কোটি টাকা আয়ের মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করছেন।
মামলা সূত্রে জানা যায়, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের চূড়ান্ত পর্যায়ে ৫ আগস্ট রাজধানীর মিরপুর-১৪ কাফরুল পুলিশ লাইন্সের সামনে বিক্ষোভের সময় নিহত হন ভোলার চরফ্যাসনের মো. ফজলু। এই ঘটনায় আজমিন জাফর ইকবাল নিহত ফজলুর স্ত্রী সুরাইয়াকে কাফরুল থানায় হত্যা মামলা করান এবং নিজেই এই মামলার ৩নং সাক্ষী হন। মামলায় ঘটনার সময় উল্লেখ করা হয়েছে সকাল ১০টা, অথচ ঘটনার সময় আসামিদের অনেকেই নিজ নিজ কর্মস্থলে ও বাসায় অবস্থান করছিলেন বলে দাবি করেছেন মামলার আসামীদের অনেকে।
এই মামলায় ৪৯নং আসামি করা হয়েছে ওমান প্রবাসী লোকমানকে। ঘটনার সময় তিনি ওমানে ছিলেন এবং এখনও ওমানে আছেন।
এছাড়াও মামলার ৫৯ নম্বর আসামি ব্যবসায়ী মো. শাহিন, তার ছোট ভাই ৬০ নম্বর আসামি মো. রায়হান, ৬২ নম্বর আসামি ট্রাক চালক মাহবুব ও ৬৩ নম্বরে তার ছেলে সবুজকে আসামি করা হয়। এদের মধ্যে কেউই ঘটনাস্থলে ছিলেন না বলে জানা গেছে। এরপরও তাদেরকে আসামি করে এবং মামলা থেকে নাম কাটানোর জন্য ১০ লাখ টাকা দাবি করেছেন মামলার স্বাক্ষী আজমিন।
ফজলু হত্যা মামলার বাদী সুরাইয়া বলেন, আমি আমার স্বামী হত্যার বিচারের জন্য মামলা করেছি, টাকার জন্য নয়। আমার নাম বলে কেউ টাকা চেয়েছে কিনা, জানি না। আমি কারও কাছে টাকা চাইনি।
স্বাক্ষীর শ্বশুরবাড়ি এলাকার এক ওমান প্রবাসীসহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে মামলার বিষয়ে সুরাইয়া বলেন, আমি তো সব আসামিকে চিনি না। ওই ঘটনায় অনলাইনে সার্চ দিয়ে মামলা করা হয়। নিরীহ কাউকে আমি মামলায় ফাঁসাব না।
এসব অভিযোগ ও মামলা থেকে নাম কাটাতে টাকা দাবির বিষয়ে জানতে চাইলে আজমিন জাফর ইকবাল বলেন, আসামিদের কয়েকজন আমার শ্বশুরবাড়ির এলাকার। আমি মামলার বিষয়টি প্রথমে জানতাম না, পরে জেনেছি। তাদের একজন আমার সাথে যোগাযোগ করেছিল। তখন একপর্যায়ে নাম কাটাতে ৩ লাখ টাকার কথা বলেছি। নাজিম উদ্দিন আলম ভাই চরফ্যাশনের নেতা, মামলাও যেহেতু চরফ্যাশনের লোকজনের, সেজন্য আলম ভাইয়ের সাথে কথা বলব বলে জানিয়েছি। তারা ইচ্ছা করে টাকা-পয়সার আলাপ করে এখন আমাকে ফাঁসাতে চাইছে।
বিএনপি নেতা ও সাবেক সংসদ সদস্য নাজিম উদ্দিন আলম বলেন, ছাত্র আন্দোলনে অনেক মানুষ গণহত্যার শিকার হয়েছেন। বিএনপি এবং বর্তমান সরকার এর বিচার করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তবে কোনভাবেই নিরীহ মানুষকে এসব মামলায় জড়ানোর বিন্দুমাত্র সুযোগ নেই। কেউ যদি আমার বা বিএনপির নাম ভাঙিয়ে আসামি বাণিজ্যের অপচেষ্টা করে তাহলে তাকে বেঁধে রেখে খবর দিবেন। এ বিষয়ে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post