গেল এক বছর ধরে মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা তুঙ্গে। পরিস্থিতি আগে থেকেই আঁচ করতে পেরে, ধাপে ধাপে সেখানে সেনা বাড়িয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। শুধু তাই নয়, ওই অঞ্চলে অনেক যুদ্ধবিমান, যুদ্ধজাহাজসহ বিমানবাহী রণতরী পাঠিয়েছে ওয়াশিংটন। মিত্রদের ওপর যে কোনো হামলা ঠেকাতেই যুক্তরাষ্ট্র এমন পদক্ষেপ নিয়ে রেখেছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
পরিসংখ্যান বলছে, মধ্যপ্রাচ্যের ১০টি দেশে সেনা ৪০ হাজারের বেশি সেনা সমাবেশ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। ইরানে ইসরায়েল হামলা চালালে, তাতেও অংশ নিতে দেখা যেতে পারে এসব মার্কিন সেনাদের।
সিরিয়ায় প্রায় ৯০০ মার্কিন সেনা মোতায়েন রয়েছে। ইসলামিক স্টেটের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবিরোধী অভিযান পরিচালনার জন্য তারা সেখানে রয়েছে। তাদের মধ্যে আবার প্রায় ১০০ সেনা ফ্রি সিরিয়ান আর্মিকে সহায়তা করছে। ইরাকে ঠিক কতজন সেনা রয়েছে, তা প্রকাশ করেনি মার্কিন প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়। তবে ২০২১ সালে মোট সেনার সংখ্যা আড়াই হাজারে নামিয়ে আনা হয় বলে জানা যায়।
ইসরায়েলে মার্কিন সেনার সংখ্যা স্পষ্ট নয়। তবে দেশটিতে অন্তত একটি ঘাঁটি রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের। অত্যন্ত গোপনীয় ওই ঘাঁটির সাংকেতিক নাম সাইট ৫১২। ধারণা করা হয়, সেখানে একটি রাডার নজরদারি ব্যবস্থা রয়েছে। ইসরায়েলের প্রতিবেশী দেশ জর্ডানে ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত প্রায় ২ হাজার ৯০০ মার্কিন সেনা রয়েছে বলে জানা যায়। জর্ডানের বিমানঘাঁটি থেকে সিরিয়া ও ইরাকে গোয়েন্দা মিশন চালায় যুক্তরাষ্ট্র।
মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় ঘাঁটি রয়েছে কাতারে। দেশটির রাজধানী দোহার দক্ষিণপশ্চিমের আল উদেইদ বিমানঘাঁটিতে প্রায় ৮ হাজার মার্কিন সেনা মোতায়েন রয়েছে। মার্কিন সেন্ট্রাল কমান্ডের আঞ্চলিক সদরদপ্তরও কাতারেই অবস্থিত। ওই ঘাঁটি কাতারের বিমানবাহিনীও ব্যবহার করে। এ ছাড়া যুক্তরাজ্যেরও সামরিক উপস্থিতি রয়েছে এই বিমানঘাঁটিতে।
২০২২ সাল পর্যন্ত বাহরাইনে ৯ হাজারের বেশি মার্কিন সেনা সদস্যের উপস্থিতি ছিল। বাহরাইনে থাকা মার্কিন নৌঘাঁটি মার্কিন নৌবাহিনীর সেন্ট্রাল কমান্ডের সদরদপ্তর হিসেবে ব্যবহার হয়ে আসছে। এখানেই মোতায়েন রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের পঞ্চম নৌবহর। উপসাগরীয় দেশগুলোর মধ্যে বাহরাইনের খলিফা বিন সালমান একমাত্র বন্দর যেখানে মার্কিন এয়ারক্রাফট ক্যারিয়ার ও উভচর জাহাজ অবস্থান করতে পারে।
১৯৯১ সালে কুয়েতে হাজার হাজার সেনা পাঠায় যুক্তরাষ্ট্র। দেশটি থেকে ইরাকি বাহিনীকে হটাতে বহুদেশীয় জোটের অংশ হিসেবে সেখানে মার্কিন সেনা প্রেরণ করা হয়। ২০২১ সালে কুয়েতে সাড়ে ১৩ হাজার মার্কিন সেনা ছিল। সৌদি আরবের সশস্ত্র বাহিনীকে প্রশিক্ষণ, পরামর্শ ও সহায়তার জন্য ২০২২ সালের ডিসেম্বরে দেশটিতে ২ হাজার ৭০০-র বেশি সেনা মোতায়েন করা হয়। হোয়াইট হাউস জানাচ্ছে, ওই সেনারা এয়ার ও ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা দেখভাল করে। এ ছাড়া সামরিক এয়ারক্রাফটের অপারেশনেও সহায়তা করে থাকে তারা।
মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের দীর্ঘদিনের মিত্র সংযুক্ত আরব আমিরাত। এই দেশে যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় সাড়ে ৩ হাজার সেনা মোতায়েন রয়েছে। তাদের অধিকাংশই আল দাফরা বিমানঘাঁটিতে অবস্থান করছে। এটিকে আঞ্চলিক এয়ার ও মিসাইল ডিফেন্স ট্রেনিং হাব হিসেবে যৌথভাবে ব্যবহার করে সংযুক্ত আরব আমিরাত ও যুক্তরাষ্ট্র। যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে সবচেয়ে বেশি জাহাজও আমিরাতের বন্দরগুলোতেই রয়েছে।
ওমানে কয়েকশ’ মার্কিন সেনা রয়েছে। মূলত এসব সেনা মার্কিন বিমান বাহিনীর সদস্য। বছর ওমানে কাছে অতিরিক্ত ডেস্ট্রয়ার ও ফাইটার জেট পায় যুক্তরাষ্ট্র। হরমুজ প্রণালি ও ওমান উপসাগরে ইরানের নৌবাহিনীর তৎপরতা বৃদ্ধি পাওয়ায় এমন পদক্ষেপ নেয় ওয়াশিংটন।
এ ছাড়া ন্যাটোর সদস্য তুরস্কে এক হাজারের বেশি মার্কিন সেনা রয়েছে। তারা মূলত আদানা শহরের কাছে একটি বিমানঘাঁটি এবং ইজমিরের কাছে একটি বিমান স্টেশনে মোতায়েন রয়েছে।
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post