সচিবালয়ে নিজ অফিস ও কেবিনেট কক্ষের ফ্লোরে বুলেটপ্রুফ গ্লাস বসাতে চেয়েছিলেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ওই দুই ফ্লোরে বুলেটপ্রুফ গ্লাস লাগানোর প্রস্তাবটি অনুমোদন দিয়েছিল শেখ হাসিনার বিশেষ নিরাপত্তা বাহিনী স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্স (এসএসএফ)। ‘বাংলাদেশ সচিবালয়ের ২০তলা বিশিষ্ট নতুন অফিস ভবন নির্মাণ’ শীর্ষক প্রকল্পে বুলেটপ্রুফ গ্লাস বসানোর বিষয়টি বাস্তবায়ন করতে চেয়েছিল গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ভারতে পালিয়ে যাওয়া সাবেক প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তার বিষয়টি নিশ্চিত করতে নেওয়া উদ্যোগ বাস্তবায়ন করতে গেলে প্রকল্পটির কাজ শেষ হতে দেরি হবে। বর্তমান বাস্তবতায় বুলেটপ্রুফ গ্লাস বসানোর বিষয়ে সুনির্দিষ্ট নির্দেশনার জন্য প্রধান উপদেষ্টার দপ্তরের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিতে বলা হয়েছে।
গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, বাংলাদেশ সচিবালয়ে প্রধানমন্ত্রীকে অফিস করতে হতো বিধায় ভবনের তৃতীয় ও চতুর্থ তলায় বুলেটপ্রুফ গ্লাস লাগাতে বলা হয়েছিল। সেই বিবেচনায় বুলেটপ্রুফ গ্লাস লাগাতে প্রস্তাব করেছিল মন্ত্রণালয়। প্রস্তাবটি বাস্তবায়ন করতে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ নিরাপত্তা বাহিনী স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্সের (এসএসএফ) কাছ থেকে চূড়ান্ত অনুমোদন নিতে হয়। তারা সেটি অনুমোদনও করে।
প্রকল্প পরিচালক এ কে এম কামরুজ্জামান বলেন, নির্মাণাধীন ভবনের তৃতীয় তলায় বুলেটপ্রুফ গ্লাসের স্পেসিফিকেশন এসএসএফ চূড়ান্ত করে। বুলেটপ্রুফ গ্লাস ডব্লিউ-৪ প্যাকেজে উন্মুক্ত পদ্ধতিতে দরপত্র আহ্বান করতে বলা হয়। যা লেটার ক্রেডিট (এলসি)-এর মাধ্যমে বিদেশ থেকে আনার কথা।
কিন্তু এলসি করে বুলেটপ্রুফ গ্লাস আনতে হলে প্রকল্পটির সময় বাড়তে হবে— বলেন প্রকল্প পরিচালক।
জানা যায়, ২০১৮ সালের ৩০ অক্টোবর জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় অনুমোদন পায় ‘বাংলাদেশ সচিবালয়ের ২০তলা বিশিষ্ট নতুন অফিস ভবন নির্মাণ’ প্রকল্পটি। এটি বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ধরা হয় ৪২০ কোটি ৯৮ লাখ ৩৪ হাজার টাকা। একনেকে প্রকল্পটি অনুমোদনের পর ২০১৯ সালে সচিবালয়ের ভেতর ২০তলা ভবনের নির্মাণকাজ শুরু করে মন্ত্রণালয়। ২০২০ সালের ডিসেম্বরে প্রকল্পটি শেষ হওয়ার কথা ছিল। তবে, নির্ধারিত সময়ে প্রকল্পটি শেষ না হওয়ায় এর মেয়াদ ও অর্থ বাড়ানোর প্রস্তাব পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হয়। তৎকালীন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান প্রথম সংশোধনীতে ২০২৪ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত মেয়াদ এবং ৪০ কোটি ৩৩ লাখ ১৬ হাজার টাকা বাড়িয়ে এটির অনুমোদন দেন। ফলে প্রকল্পের মোট ব্যয় দাঁড়ায় ৪৬১ কোটি ৩১ লাখ ৫০ হাজার টাকা।
সম্প্রতি গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের স্টিয়ারিং কমিটির সভায় বিষয়টি উঠে আসে। সভায় সভাপতিত্ব করেন গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. নবীরুল ইসলাম। সভায় নির্ধারিত মেয়াদে প্রকল্পের কাজ শেষ করার তাগিদ দেওয়া হয়েছে।
প্রকল্পের বাস্তব অগ্রগতি ও সমস্যা সম্পর্কে প্রকল্প পরিচালক বলেন, সেন্ট্রাল এসি ও লিফটের মালামাল আমদানিনির্ভর। এ কারণে বৈশ্বিক সংকটময় পরিস্থিতিতে সাইটে পৌঁছাতে বিলম্ব হওয়ায় ফলস সিলিং ও অন্যান্য আনুষঙ্গিক কাজ বিলম্বিত হচ্ছে। এ ছাড়া কেন্দ্রীয় শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার অতিরিক্ত ও অবশিষ্ট কাজের ব্যয় আরডিপিপি বরাদ্দ থেকে বেশি হওয়ায় অতিরিক্ত অর্থ পণ্য ‘জি-১’ ও পণ্য ‘জি-১১’ এর বেঁচে যাওয়া অর্থ থেকে মেটানো হবে। প্রকল্পটির মালামাল ক্রয়ে দরপত্র আহ্বান করা হবে। যা পরবর্তীতে আন্তঃখাত সমন্বয়ের মাধ্যমে সমাধান করা হবে। তৃতীয় ও চতুর্থ তলার টাইলস, মার্বেলের সিদ্ধান্ত এখনও পাওয়া যায়নি। সার্বিক বিবেচনায় প্রকল্পের মেয়াদ জুন ২০২৫ পর্যন্ত বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে।
প্রকল্পটির আর্থিক অগ্রগতির বিষয়ে পিডি আরও জানান, চলতি বছরের জুন পর্যন্ত প্রকল্পটির অনুকূলে ব্যয় হয়েছে ৩২৯ কোটি ৭২ লাখ টাকা। যা মোট ব্যয়ের ৭২ শতাংশ এবং ভৌত অগ্রগতি ৮২ শতাংশ। ২০২৪-২৫ অর্থবছরের এডিপিতে প্রকল্পটির অনুকূলে ১২৯ কোটি ৩৭ লাখ টাকা বরাদ্দ রয়েছে। এ অর্থবছরে কোনো অর্থ অবমুক্ত করা হয়নি। সভায় চলতি অর্থবছরের জন্য বরাদ্দ করা অর্থ সুষ্ঠুভাবে এবং গুণগতমান বজায় রেখে শতভাগ ব্যয়ের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগের যুগ্ম-প্রধান মো. ফরিদুল ইসলাম সভায় সেন্ট্রাল এসির ব্যয় বৃদ্ধির কারণ জানতে চান। একইসঙ্গে যেহেতু বুলেটপ্রুফ গ্লাসের কারণে প্রকল্পটি নির্ধারিত সময়ে সমাপ্ত করা সম্ভব হবে না, সেহেতু বর্তমান প্রেক্ষাপটে বুলেটপ্রুফ গ্লাস বসানোর পরিকল্পনা পুনর্বিবেচনার আহ্বান জানান।
এরই পরিপ্রেক্ষিতে সংশ্লিষ্ট নির্বাহী প্রকৌশলী বলেন, আগে সেন্ট্রাল এসির কুলিং টাওয়ার ইউটিলিটি ভবনের চতুর্থ তলার ছাদে স্থাপনের কথা ছিল কিন্তু বর্তমানে ষষ্ঠ তলার ছাদে বসাতে হবে বিধায় ব্যয় বৃদ্ধি পাবে। সভায় ভবনের তৃতীয় তলায় বুলেটপ্রুফ গ্লাস স্থাপনের বিষয়টি পরিবর্তিত পরিস্থিতি বিবেচনায় প্রধান উপদেষ্টার দপ্তরের সঙ্গে আলোচনা করে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য গণপূর্তের প্রধান প্রকৌশলীকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
স্টিয়ারিং কমিটির সভায় যেসব সিদ্ধান্ত
চলতি অর্থবছরের বরাদ্দ করা অর্থ সুষ্ঠুভাবে এবং গুণগত মান বজায় রেখে শতভাগ ব্যয় নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে। প্রকল্পের আওতায় নির্মিতব্য ভবনের তৃতীয় ও চতুর্থ তলার মার্বেল ও টাইলসের জন্য যথাযথ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করে তা চূড়ান্ত এবং দ্রুত তা বাস্তবায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করতে বলা হয়েছে। পাশাপাশি প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে পরামর্শ করে বুলেটপ্রুফ গ্লাসের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে তা বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিতে বলা হয়েছে।
গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. নবীরুল ইসলাম বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে এ প্রকল্পের আওতায় দুটি ফ্লোরে বুলেটপ্রুফ গ্লাস বসানো হবে কি না, সে বিষয়ে সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা প্রয়োজন। কারণ, বুলেটপ্রুফ গ্লাস বসাতে হলে প্রকল্পের কাজ শেষ হতে দেরি হবে। এজন্য প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের সঙ্গে আলোচনা করে এ বিষয়ে সুস্পষ্ট মতামত জানতে গণপূর্তের প্রধান প্রকৌশলীকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, এ ছাড়া সভায় প্রকল্পের অন্য সব কাজের গুণগতমান বজায় রেখে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে তা শেষ করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। প্রকল্পের কোনো অঙ্গের ব্যয় বৃদ্ধির প্রয়োজন হলে তা যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে বলা হয়েছে।
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post