ভোরের কাগজের অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে এক চাঞ্চল্যকর তথ্য। পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক বেনজীর আহমেদের প্রধান দুর্বলতা ছিল টাকা আর নারী। একসময়ের অশ্লীল সিনেমার পরিচালক রাজু চৌধুরীর মাধ্যমে বেনজীরের সঙ্গে পরিচয় হয় চিত্রনায়িকা কেয়ার। ব্যস তাকে দেখেই পছন্দ করে ফেলেন বেনজীর। সেই সময়কার এই সুন্দরী নায়িকাকে দীর্ঘদিন নিজের ক্ষমতার জোরে রক্ষিতা বানিয়ে রাখেন তিনি। বিশেষ সূত্র থেকে আমরা জানতে পারি, কেয়া ছিলেন নিন্ম মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে। পারিবারিক অভাবের কারণে বাধ্য হয়েই বেনজিরের খাঁচায় ধরা দিয়েছিলেন কেয়া। কিন্তু সিনেমায় অভিনয়ের আগ্রহটা তখনও পুষিয়ে রেখেছিলেন বলে বেনজিরের হাতে ব্যাপক শারীরিক হেনস্তার শিকার হন কেয়া। এমনকি কেয়ার জীবননাশেরও হুমকি দেন বেনজীর।
এতকিছুর পরেও মিডিয়ার পরিচিতজনদের সঙ্গে লুকিয়ে লুকিয়ে যোগাযোগ করে নতুন করে অভিনয় শুরুর ইচ্ছা প্রকাশ করেন কেয়া। এই খবর জানার পর কেয়ার ওপর নির্যাতনের মাত্রা আরও বাড়িয়ে দেন বেনজীর। কিন্তু তাতেও কেয়াকে নিয়ন্ত্রণে রাখা যাবে না ভেবে গুলশানের একটি বাসায় কলগার্ল সাজিয়ে কেয়াকে পুলিশ দিয়ে ধরিয়ে দেন বেনজীর। সেসময় কেয়ার এই খবরটি মিডিয়ার মাধ্যমে সারা দেশে বেশ চাউর করে পুলিশ সদর দফতর। কেবল বেনজীরের নজরে পড়ার দায়ে চিরকালের জন্য একটা কালো ছাপ লেগে যায় চিত্রনায়িকা কেয়ার নামের সঙ্গে। সেসময় এই তথ্যটি নিশ্চিত করেছিলেন কেয়ার মা। তবে বেনজীরের ভয়ে প্রথমে সাংবাদিকদের কাছে মুখ খুলতে রাজি হচ্ছিলেন না তিনি। পরে এই তথ্য সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশ না করার শর্তে কেয়ার মা জানিয়েছিলেন, কেয়াকে অভিনয় থেকে সম্পূর্ণ সরিয়ে নিয়ে দিনের পর দিন তার মেয়েকে ভোগ করেন বেনজীর।
এরপর বহু নারীতে আসক্ত ভদ্রবেশধারী বেনজীরের নজর পড়ে আরেক সুন্দরী মডেল অভিনেত্রী বিদ্যা সিনহা মীমের ওপর। তাদের দুজনের অন্তরঙ্গ সম্পর্ক গড়ে উঠলে মীমের অনেক কাজ করে দেন বেনজীর। বিদেশে স্টেজ শো করতে গেলেও মীমের পারিশ্রমিক থাকতো সবার চেয়ে বেশি। কারণ মীমের পেছনে ছিল বেনজিরের ছায়া। অন্যদিকে আরেকজনের সঙ্গেও গোপনে সম্পর্ক এগিয়ে নিচ্ছিলেন ব্যাপক সুবিধাভোগী নায়িকা মীম। তার এই গোপন সখা ছিলেন আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক মন্ত্রী তোফায়েল আহমেদের আপন ভাগ্নে ভোলার প্রাক্তন পৌর মেয়র মনিরুজ্জামান। তবে বেনজীর জানতেন না যে মীম তার চোখকে ফাঁকি দিয়ে ডাবল স্ট্যান্ডার্ড মেনটেইন করছেন।
ভোলায় জন্ম নেয়া মীম কলেজ পর্যন্ত সেখানেই পড়াশুনা করেন। পরে লাক্স সুপার স্টার হয়ে ফিরে আসেন বাবার বাড়ি কুমিল্লায়। এরপর তার বাবা কলেজে শিক্ষকতার কারণে কুমিল্লাতে রয়ে গেলেও মীম ও তার মা-বোন থাকতেন রাজধানীর কল্যাণপুরে মামার বাড়িতে। এরপর ভোলার সেই প্রাক্তন পৌর মেয়র মনিরুজ্জামান গুলশানে একটি বিলাসবহুল ফ্ল্যাট উপহার দেন মীমকে। কিন্তু সেই ফ্ল্যাটে মীমের কাছে আসা যাওয়া শুরু করেন বেনজীর। এই খবর জানার পর বিষয়টি মেনে নিতে পারেনি মনিরুজ্জামান। একদিন মীমের ফ্ল্যাটে বেনজীর ও মনিরুজ্জামান দুজনেরই মুখোমুখি দেখা হয়ে যায়। এরপর তাদের মধ্যে বাকবিতন্ডা বেধে গেলে এক পর্যায়ে মনিরুজ্জামান ক্ষিপ্ত হয়ে বেনজিরের গালে একটি চড় বসিয়ে দেন। তখন চরম ক্ষুব্ধ বেনজির পুলিশ ফোর্স ডেকে নেন মনিরুজ্জামানকে গ্রেফতার করার জন্য। ওদিকে মনিরুজ্জামানও তার পাওয়ারফুল মামা সাবেক মন্ত্রী তোফায়েল আহমেদকে ফোন দিয়ে সবকিছু জানালে বেনজিরকে ব্যাপক শাসান তোফায়েল। তার হুমকি এবং পুলিশের ততকালীন আইজি শহিদুল হকের সমঝোতায় থেমে যান বেনজীর। এরপর মীম তানিয়া আহমেদের ছবির শ্যুটিয়ে চলে যায় লন্ডনে। ওদিকে মনের কষ্টে স্ত্রীসহ ব্যাংকক চলে যান মনিরুজ্জামান।
বেনজির আহমেদের আরও বেশ কয়েকজন রক্ষিতা ছিল। সেই তালিকায় রয়েছে কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া মেয়ে, ছোট পর্দা ও বড় পর্দার নায়িকা এবং মডেল। বিগত সরকারের আশীর্বাদপুষ্ট বেনজীরের অসংখ্য অপকর্মের সাক্ষী এখন সারাদেশের মানুষ। তবে এতকিছুর পর গোপনে দেশত্যাগ করে পার পেয়ে যাওয়া বেনজীরকে দেশে ফিরিয়ে এনে বিচারের মুখোমুখি করা এখন সময়ের দাবি বলেই মনে করছেন সারা দেশের সর্বস্তরের জনগণ।
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post