বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে (বেরোবি) দীর্ঘ প্রায় আড়াই মাস পর একাডেমিক কার্যক্রম শুরু হয়েছে। রোববার (২৯ সেপ্টেম্বর) সকাল থেকে শিক্ষার্থীরা ক্লাসে ফিরতে শুরু করেন। তবে এদিন সবাই উপস্থিত থাকলেও ছিলেন না আবু সাঈদ।
দীর্ঘদিন বন্ধের পর ক্যাম্পাসে ফিরে শিক্ষার্থীরা আবেগে আপ্লুত হয়ে পড়েন। অনেক শিক্ষার্থী শহীদ আবু সাঈদের স্মৃতিচারণ করে কান্নায় ভেঙে পড়েন। ক্লাসে বসে আবু সাঈদের কথা মনে করেন তার সহপাঠীরা। তারা বলেন, আবু সাঈদকে ছাড়া ক্লাস আর আগের মতো হবে না। তার অভাবে ক্যাম্পাসটা নিস্তব্ধ মনে হচ্ছে।
এর আগে বুধবার (২৫ সেপ্টেম্বর) বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলগুলো খোলার পর শিক্ষার্থীরা হলে-মেসে ফিরতে শুরু করে। কিন্তু আবু সাঈদের রুম এখনো ফাঁকা। এটা মেনে নিতে পারছেন না তার সহপাঠী ও বন্ধুরা। আবু সাঈদের হত্যার বিচার দাবি করেন সহপাঠীসহ বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষার্থীরা।
এদিকে রোববার সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. শওকাত আলী বিভিন্ন বিভাগ পরিদর্শন করেন, শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলেন এবং তাদের শিক্ষা কার্যক্রমের খোঁজখবর নেন।
পরিদর্শনকালে উপাচার্য বলেন, শিক্ষার্থীদের ক্যাম্পাসে যাতায়াতের জন্য আরও বাস কেনা হবে এবং চলাচলের রুট বাড়ানো হবে।
শ্রেণিকক্ষ সংকটের বিষয়ে তিনি বলেন, অচিরেই শ্রেণিকক্ষের সংকট নিরসনে চারতলা একাডেমিক ভবনগুলোকে (চারটি ভবন) বাড়িয়ে ছয়তলায় রূপান্তরিত করা হবে। এতে কিছুটা হলেও শ্রেণিকক্ষ সংকট নিরসন হবে। এ ছাড়া পর্যায়ক্রমে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সংকট ও সমস্যা নিরসন করা হবে।
উপাচার্য বলেন, প্রতিষ্ঠার পর থেকে নানা কারণে এই বিশ্ববিদ্যালয় নেতিবাচকভাবে বিভিন্ন মাধ্যমে পরিচিতি পেয়েছে। আর যেন নেতিবাচক খবর না হয় সেই বিষয়ে সকলকে সজাগ থাকতে হবে। সকলকে নিজ নিজ দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করতে হবে। সংকট কাটিয়ে এই বিশ্ববিদ্যালয়কে শিক্ষা ও গবেষণায় সেরা বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিণত করতে সকলের সহযোগিতা কামনা করেন তিনি।
উল্লেখ্য, গত ১৬ জুলাই পুলিশের গুলিতে নিহত হন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ও বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সমন্বয়ক আবু সাঈদ। তিনি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রথম শহীদ। আবু সাঈদ নিহত হওয়ার পর সারা দেশে আন্দোলন ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে। এরই ধারাবাহিকতায় গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতন হয়।
এদিকে আবু সাঈদ নিহত হওয়ার পর ১৭ জুলাই থেকে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করা হয়। এরপর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও ট্রেজারারসহ বিভিন্ন প্রশাসনিক পদ হতে অন্তত ৪০ জন পদত্যাগ করেন। গত ১৮ সেপ্টেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন উপাচার্য হিসেবে যোগদান করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর ড. মো. শওকাত আলী। নবনিযুক্ত উপাচার্য শিক্ষার্থী, শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সঙ্গে মতবিনিময় করে দ্রুততম সময়ের মধ্যে একাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম পুনরায় চালু করার ঘোষণা দেন। এরই অংশ হিসেবে বিভিন্ন প্রশাসনিক পদে নতুন করে দায়িত্ব দেওয়া হয়। গত ২৫ সেপ্টেম্বর আবাসিক হলসমূহ খুলে দেওয়া হয় এবং আজ রোববার থেকে একাডেমিক কার্যক্রম পুনরায় চালু করা হয়।
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post