বিদেশে কোনো বাংলাদেশী প্রবাসী মারা গেলে অনেকেই জানেন না মরদেহ দেশে পাঠানোর নিয়ম। এমনকি সরকারের পক্ষথেকে যেসব সুযোগ সুবিধা প্রদান করা হয়, তা অনেকেরই অজানা। প্রবাসী কর্মীরা মারা গেলে মৃতদেহ দেশে আনার জন্য সরকার যেসব সুযোগ সুবিধা প্রদান করেন তার মধ্যে একটি হচ্ছে, বিমানবন্দরে লাশ হস্তান্তরের সময় সেটি পরিবহন ও দাফনের খরচ হিসেবে সরকারি অনুদান দেওয়া হয়। এছাড়াও মৃত প্রবাসী কর্মীর পরিবারের জন্য আর্থিক অনুদান আর মৃত্যুজনিত ক্ষতিপূরণ আদায়ের ব্যবস্থাও করে থাকে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়। তাদের অধীন সংস্থা ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের মাধ্যমে এসব সুবিধা পেয়ে থাকেন প্রবাসী কর্মীর স্বজনরা।
[the_ad id=”652″]
এ প্রসঙ্গে ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের মহাপরিচালক বলেন, ‘বিদেশে প্রবাসী কর্মীদের সুরক্ষা ও তাদের পরিবারের সদস্যদের সার্বিক কল্যাণে সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এজন্য প্রবাসী কর্মী ও তাদের পরিবারের সদস্যদের অভিযোগ বা সমস্যা থাকলে তা দ্রুত সমাধানের উদ্যোগ নেওয়া হয়।’
ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের পরিচালক (প্রশাসন) বলেন, ‘দেশের তিনটি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর যেমন: ঢাকা বিমানবন্দর, চট্টগ্রাম বিমানবন্দর এবং সিলেট বিমান বন্দরে প্রবাসী কর্মীদের বহির্গমন ছাড়পত্র যাচাই, কার্ড পূরণ, কর্মীদেরকে বিমানবন্দরের আনুষ্ঠানিকতার বিষয়ে পরামর্শ প্রদানের জন্য রয়েছে প্রবাসী কল্যাণ ডেস্ক। তাদের মাধ্যমে প্রবাসী মৃত কর্মীদের লাশ দেশে আসার পর আনুষ্ঠানিকতা শেষে স্বজনদের কাছে হস্তান্তর, পরিবহন ও দাফনের জন্য চেক প্রদান করা হয়।’
মৃতদেহ দেশে আনা:
প্রবাসে মৃত্যুবরণকারী বাংলাদেশি কর্মীর লাশ পরিবারের মতামত নিয়ে দেশে নিয়ে আসে ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ড। কোনও মৃতের পরিবার সংশ্লিষ্ট দেশে লাশ দাফনের ইচ্ছা প্রকাশ করলে সেই ব্যবস্থাও করা হয়। মৃতের লাশ দেশে প্রেরণে নিয়োগকর্তা খরচ বহন করতে অপারগতা প্রকাশ করলে ও মৃতের পরিবার লাশ দেশে আনার জন্য খরচ বহনে সক্ষম না হলে ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ তহবিল থেকে অর্থায়ন করা হয়।
মৃতদেহ দেশে আনার জন্য সহযোগিতা পেতে ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডে আবেদন করতে হয়। আবেদন ফরমের নমুনা কপি পাওয়া যাবে এই সংস্থার ওয়েবসাইটে। জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি অফিস অথবা সরাসরি বোর্ডেও এই আবেদন করা যায়। ওয়েবসাইট: http://www.wewb.gov.bd/
মৃতদেহ পরিবহন ও দাফন খরচ:
প্রবাসে বাংলাদেশি কর্মী মৃত্যুবরণ করলে বিমানবন্দর থেকে লাশ গ্রহণের সময় মৃতের পরিবারকে লাশ পরিবহন ও দাফন হিসেবে ৩৫ হাজার টাকার চেকের মাধ্যমে আর্থিক সাহায্য দেওয়া হয়। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্রবাসী কল্যাণ ডেস্ক থেকে এই চেক প্রদান করা হয়। এজন্য মৃত প্রবাসী শ্রমিকের স্বজনকে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র হিসেবে জাতীয় পরিচয়পত্র, পরিবারের সদস্য সনদ, লাশ পরিবহন ও দাফন খরচের অর্থ গ্রহণের জন্য ক্ষমতা অর্পণপত্র সঙ্গে আনতে হবে। প্রয়োজনীয় কাগজপত্রের নমুনা কপি পাওয়া যাবে ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের ওয়েবসাইটে। ওয়েবসাইট: http://www.wewb.gov.bd/
দেশের ০৩টি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের প্রবাসী কল্যাণ ডেস্ক এর মাধ্যমে বিদেশ হতে আগত মৃতদেহ পরিবারের নিকট হস্তান্তর এবং তাৎক্ষণিকভাবে মৃতদেহ পরিবহন ও দাফনের খরচ বহনের জন্য ৩৫ হাজার টাকার চেক প্রদান করা হয়।
আর্থিক অনুদান:
বিদেশে বৈধভাবে যাওয়া মৃত কর্মীর পরিবারকে ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ড থেকে আর্থিক অনুদান দেওয়া হয়। ২০১৩ সালের ১ এপ্রিল থেকে প্রবাসে মারা যাওয়া কর্মীর প্রত্যেক পরিবার আর্থিক অনুদান হিসেবে পাচ্ছে ৩ লাখ টাকা। এই অনুদান পেতে মৃত প্রবাসী কর্মীর স্বজনকে দাখিল করতে হয় বেশকিছু প্রয়োজনীয় কাগজপত্র।
এর মধ্যে রয়েছে—
১. ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান, পৌরসভার মেয়র, সিটি কর্পোরেশন কাউন্সিলরের কাছ থেকে দাফতরিক প্যাডে মৃতের পরিবারের সদস্য সনদ। এই সনদ সংশ্লিষ্ট উপজেলা নির্বাহী অফিসার, সিটি কর্পোরেশন এলাকার জন্য অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট কর্তৃক প্রতিস্বাক্ষরিত হতে হবে।
২. চারশো’ টাকার নন-জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে দায়মুক্তি সনদ, অঙ্গীকারনামা ও ক্ষমতা অর্পণপত্র সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান, পৌরসভার মেয়র, সিটি কর্পোরেশনের কাউন্সিলর কর্তৃক স্বাক্ষরিত ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার, সিটি করপোরেশন এলাকার জন্য অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট কর্তৃক প্রতিস্বাক্ষরিত হতে হবে।
৩. মৃতের পাসপোর্টের ফটোকপি, বাংলাদেশ দূতাবাসের প্রত্যয়নপত্র, মৃত্যু সনদের (ডেথ সার্টিফিকেট) সত্যায়িত ফটোকপি।
৪. অর্থ গ্রহণকারীর ব্যাংক হিসাব নম্বরের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের প্রত্যয়নপত্র, ব্যাংক স্টেটমেন্টের মূল কপি। নাবালক সন্তান থাকলে নাবালক সন্তানের নামে খোলা ব্যাংক হিসাব নম্বর ও প্রত্যয়নপত্র (ব্যাংক স্টেটমেন্টসহ)।
৫. পরিবারের প্রত্যেক সদস্যের চেয়ারম্যান, কাউন্সিলর কর্তৃক সত্যায়িত ১ কপি ছবি এবং সহকারী পরিচালক, জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি অফিস কর্তৃক ১ কপি সত্যায়িত রঙিন ছবি। প্রয়োজনীয় কাগজপত্রের নমুনা কপি পাওয়া যাবে ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের ওয়েবসাইটে। ওয়েবসাইট: http://www.wewb.gov.bd/
মৃত্যুজনিত ক্ষতিপূরণ:
প্রবাসী কর্মী মারা গেলে বিদেশে নিয়োগকর্তা, সংস্থা, ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান থেকে মৃত্যুজনিত ক্ষতিপূরণ আদায়ের ব্যবস্থা নেয় ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ড। এছাড়া প্রবাসী কর্মীর বকেয়া বেতন, সার্ভিস বেনিফিট ও ইন্স্যুরেন্স সুবিধা পাওনা থাকলে তা আদায় করে স্বজনকে তা পাওয়ার উদ্যোগও নিয়ে থাকে ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ড। এজন্য মৃত প্রবাসীর কর্মীর স্বজনকে বেশকিছু প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দিতে হয়।
এর মধ্যে রয়েছে-
১. ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান, পৌরসভার মেয়র, সিটি করপোরেশন কাউন্সিলরের কাছ থেকে দাফতরিক প্যাডে মৃতের পরিবারের সদস্য সনদ। এই সনদ সংশ্লিষ্ট উপজেলা নির্বাহী অফিসার অথবা সিটি করপোরেশন এলাকার জন্য অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট কর্তৃক প্রতিস্বাক্ষরিত হতে হবে।
২. চারশো’ টাকার নন-জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে দায়মুক্তি সনদ, অঙ্গীকারনামা ও ক্ষমতা অর্পণপত্র সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান, পৌরসভার মেয়র, সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর কর্তৃক স্বাক্ষরিত ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার, সিটি করপোরেশন এলাকার জন্য অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট কর্তৃক প্রতিস্বাক্ষরিত হতে হবে।
৩. মৃত ব্যক্তির পাসপোর্টের ফটোকপি, বাংলাদেশ দূতাবাসের প্রত্যয়নপত্র, মৃত্যু সনদের (ডেথ সার্টিফিকেট) সত্যায়িত ফটোকপি।
৪. অর্থ গ্রহণকারীর ব্যাংক হিসাব নম্বরের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের প্রত্যয়নপত্র, ব্যাংক স্টেটমেন্টের মূল কপি। নাবালক সন্তান হলে নাবালক সন্তানের নামে খোলা ব্যাংক হিসাব নম্বর ও প্রত্যয়নপত্র (ব্যাংক স্টেটমেন্টসহ)।
৫. চেয়ারম্যান, কাউন্সিলর, সহকারী পরিচালক, জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি অফিস কর্তৃক পরিবারের প্রত্যেক সদস্যের ১ কপি সত্যায়িত রঙিন ছবি। এ সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় কাগজপত্রের নমুনা কপি পাওয়া যাবে ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের ওয়েবসাইটে। ওয়েবসাইটঃ http://www.wewb.gov.bd/
প্রবাসী কল্যাণ ভবনে ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের ব্যবস্থাপনায় প্রবাসী কর্মী ও তাদের পরিবারের সদস্যদের সেবা প্রদানের জন্য চালু করা হয় ডিজিটাল হেল্প ডেস্ক। এটি সরকারি ছুটির দিন ছাড়া প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত চালু থাকে। হেল্প ডেস্কের নম্বরগুলো হলো ০১৭৮৪৩৩৩৩৩৩, ০১৭৯৪৩৩৩৩৩৩, ৯৩৩৪৮৮৮। এসব নম্বরে ফোন করে প্রবাসী কর্মী ও তাদের পরিবারের সদস্যরা সমস্যা ও সাহায্যের কথা জানাতে পারেন। এগুলো লিপিবদ্ধ করে সংশ্লিষ্ট শাখা, মন্ত্রণালয়, অন্যান্য দফতর/সংস্থা ও বিদেশে অবস্থিত শ্রম উইংয়ে জানানো হয়। পরবর্তী সময়ে সেবা প্রার্থীকে এ বিষয়ে তথ্য দেওয়া হয়।
আরও পড়ুনঃ প্রবাসীদের সুরক্ষায় সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছে সরকার
আবেদন নিয়ে স্বজনরা জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি অফিস অথবা ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের কার্যালয়ে যেতে পারেন। ঠিকানা: প্রবাসী কল্যাণ ভবন, ৭১-৭২ পুরাতন এলিফ্যান্ট রোড, ইস্কাটন গার্ডেন, রমনা, ঢাকা। যে কোনও অভিযোগ গ্রহণ ও নিষ্পত্তির জন্য বোর্ডের উপ-পরিচালক (কল্যাণ) শরিফুল ইসলামকে ফোকাল পয়েন্ট হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তার মোবাইল নম্বর ০১৯৭১৪৩০২০৩, ফোন নম্বর ৯৩৫৮৯৭৬। এ দুটি নম্বরে অভিযোগ জানাতে পারেন স্বজনরা। এছাড়া যে কোনও তথ্য জানা যাবে দায়িত্বপ্রাপ্ত ফোকাল পয়েন্ট (তথ্য অধিকার) সহকারী পরিচালক (তথ্য ও জনসংযোগ) মো. জাহিদ আনোয়ারের ফোন (৯৩৫৪২৮৩) ও মোবাইল নম্বরে (০১৭১৬৮৬৯২২২)।
https://www.youtube.com/watch?v=x798Lg4RxQM
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post