রাষ্ট্রায়ত্ত টেলিভিশন স্টেশন বিটিভির ক্যামেরাও ছিল না বিমানবন্দরে। তারা না যাওয়ায় ভিডিও পায়নি বেসরকারি টেলিভিশন স্টেশনগুলোও।
প্রচলিত রেওয়াজ ভেঙে সরকারপ্রধান হিসেবে নিজের প্রথম বিদেশ সফরের আগে বিমানবন্দরে সাজসাজ আবহ তৈরির উপলক্ষ এড়িয়ে গেলেন মুহাম্মদ ইউনূস; সাধারণ যাত্রীদের সঙ্গেই নিরবে যাত্রা করলেন।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এই প্রথম কোনো সরকারপ্রধান প্রচারের জৌলুসকে আড়াল করে টেলিভিশন ক্যামেরার উপস্থিতি ছাড়াই বিদেশ সফর শুরু করলেন। যে কারণে বিমানবন্দরে সরকারের উচ্চ পর্যায়ের কর্তাব্যক্তিদের যেমন হুল্লোর তৈরি হল না, তেমনি সংবাদকর্মী আর টেলিভিশন ক্যামেরার ভিড়ও দেখা গেল না।
এমনকি রাষ্ট্রায়ত্ত টেলিভিশন স্টেশন বিটিভির ক্যামেরাও ছিল না সেখানে। তাদেরকেও প্রধান উপদেষ্টার প্রথম বিদেশ সফরের শুরুতে আগের মত ঢাকঢোল পিটিয়ে সংবাদ কাভার করতে নিরুৎসাহিত করার খবর মিলেছে। তারা না যাওয়ায় ভিডিও পায়নি বেসরকারি টেলিভিশন স্টেশনগুলোও।
যে কারণে দিনভর টেলিভিশন স্টেশনের পাশাপাশি সংবাদমাধ্যমগুলোতে সরকারপ্রধানের যুক্তরাষ্ট্র সফরের খবর আর ভিডিও ঢালাও প্রচারের বাইরে থেকে গেল।
অনেকটা এমন অনাড়ম্বরভাবেই শাহজালাল আন্তজার্তিক বিমানবন্দর থেকে সোমবার ভোর ৫টার দিকে কাতার এয়ারওয়েজের নিয়মিত একটি ফ্লাইটে নিউ ইয়র্কের পথে যাত্রা করেন প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস।
আগের সরকারগুলোর প্রধানের মত বিমান বাংলাদেশের বিশেষ ফ্লাইটে বিশাল বহর নিয়ে নয়, বাণিজ্যিক একটি ফ্লাইটে ইউনূস জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে যোগ দিতে এদিন ঢাকা ছাড়েন।
অন্যান্যবারের চেয়ে কম সংখ্যক সফরসঙ্গীসহ এভাবে প্রচারের হাঁকডাক ছাড়াই নিজের প্রথম সফর শুরু করলেন আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর ৮ অগাস্ট অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব নেওয়া নোবেল বিজয়ী মুহাম্মদ ইউনূস।
প্রধান উপদেষ্টার সফরসঙ্গীদের একজন সোমবার মধ্যরাতে বলেছেন, তারা কাতারের দোহায় বিরতি শেষে যুক্তরাষ্ট্রের পথে রয়েছেন।
বাংলাদেশ সময় মঙ্গলবার সকাল ৮টায় ও স্থানীয় সময় রাত সাড়ে ১০টায় তাদের নিউ ইয়র্কের জন এফ কেনেডি বিমানবন্দরে পৌঁছানোর সূচি রয়েছে।
জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৯তম অধিবেশনে অংশ নেবেন মুহাম্মদ ইউনূস। আগামী ২৭ সেপ্টেম্বর সাধারণ অধিবেশনে ভাষণ দেওয়ার কথা রয়েছে।
প্রধান উপদেষ্টা তিন দিন নিউইয়র্কে অবস্থান করে সফর শেষে ২৭ সেপ্টেম্বর ঢাকার পথে রওনা হবেন। এবার তার সফরসঙ্গীদের সংখ্যা নিরাপত্তা, প্রেসসহ সব মিলিয়ে ৫৭ জন।
মঙ্গলবার সাধারণ পরিষদের উচ্চ পর্যায়ের বিতর্ক পর্ব শুরু হবে।
পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন শনিবার বলেছিলেন, প্রধান উপদেষ্টা তার বক্তব্যে বিগত দুই মাসে বাংলাদেশে ঘটে যাওয়া অভাবনীয় গণ অভ্যুত্থানের বিবরণ ও আগামী দিনে জনভিত্তিক, কল্যাণমুখী ও জনস্বার্থে নিবেদিত একটি রাষ্ট্রব্যবস্থা গড়ে তোলার দৃঢ় প্রত্যয় বিশ্বদরবারে তুলে ধরবেন।
পাশাপাশি আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তা নিশ্চিতের ক্ষেত্রে শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে বাংলাদেশের বলিষ্ঠ অবস্থান, জলবায়ু পরিবর্তন ও এর প্রভাব, জলবায়ু ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা, বিশ্বব্যাপী সংঘাত, রোহিঙ্গা সংকট, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনের ক্ষেত্রে উন্নয়নশীল দেশগুলোর প্রতিকূলতা, উন্নয়নশীল দেশসমূহ হতে সম্পদ পাচার প্রতিরোধ, নিরাপদ অভিবাসন, অভিবাসীদের মৌলিক পরিষেবা প্রাপ্তির নিশ্চয়তা এবং ফিলিস্তিন সম্পর্কিত বিষয়গুলো প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্যে উঠে আসতে পারে।
এ অধিবেশনকালে সাইড লাইনে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বৈঠক হচ্ছে না বলেও জানিয়েছিলেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা। তিনি বলেন, প্রধান উপদেষ্টা নিউইয়র্কে পৌঁছানোর পূর্বেই ভারতের প্রধানমন্ত্রী নিউইয়র্ক ত্যাগ করবেন বলে জানা গেছে। কাজেই সেখানে তাদের দেখা হওয়ার সম্ভাবনা নেই বলেই মনে হচ্ছে।
তবে সংবাদমাধ্যমের খবর যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে ইউনূসের বৈঠক হতে পারে।
পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেছেন, সফরকালে নেদারল্যান্ডসের প্রধানমন্ত্রী, পাকিস্তান ও নেপালের প্রধানমন্ত্রী, ইউরোপিয়ান কমিশনের প্রেসিডেন্ট, যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী, জাতিসংঘ মহাসচিব, জাতিসংঘ মানবাধিকার সম্পর্কিত হাই কমিশনার, বিশ্বব্যাংক গ্রুপের প্রেসিডেন্ট, ইউএসএইডের প্রশাসকের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টা দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে অংশগ্রহণ করবেন বলে আশা করা যাচ্ছে।
তিনি জানিয়েছিলেন, এ রকম অধিবেশনে অনেক বৈঠকের সিদ্ধান্ত শেষ মুহূর্তেও হয়ে যায়। সে বিবেচনায় নতুন বৈঠক তালিকায় যোগ হতে পারে; আবার সময়ের অভাবে কোনো বৈঠক বাদও যেতে পারে।
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post