শ্রীলঙ্কার নতুন প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নিলেন বামপন্থী অনুরা কুমারা দিশানায়েকে।
সোমবার (২৩ সেপ্টেম্বর) কলম্বোতে এই শপথ অনুষ্ঠিত হয়।
রোববার (২২ সেপ্টেম্বর) রাতে দেশটির নির্বাচন কমিশন জানায়, শনিবার অনুষ্ঠিত প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বিজয়ী হয়েছেন বামপন্থী অনুরা কুমারা দিশানায়েকে।
বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, নির্বাচনী লড়াইয়ে থাকা ৩৮ জন প্রার্থীর মধ্যে সর্বোচ্চ ভোট পেয়েছেন বামপন্থী জোট পিপলস লিবারেশন ফ্রন্টের (জেভিপি) নেতা দিশানায়েকেই (৪২.৩১ শতাংশ)।
অন্যদিকে, দেশের বিদায়ী প্রেসিডেন্ট রনিল বিক্রমসিংহে পেয়েছেন মাত্র ১৭.২৭ শতাংশ ভোট। ভোট শতাংশের নিরিখে তিনি হয়েছেন তৃতীয়। শ্রীলঙ্কার পার্লামেন্টের বিরোধী দলনেতা সাজিথ প্রেমদাসা ৩২.৭৬ শতাংশ ভোট পেয়ে দ্বিতীয় হয়েছেন।
শ্রীলঙ্কার নতুন প্রেসিডেন্ট দিশানায়েকে অভিনন্দন জানিয়েছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ ও মার্কিন পররাষ্ট্র দফতর।
২০১৯ সালে হওয়া শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে মাত্র তিন শতাংশ ভোট পেয়েছিল দিশানায়েকের নেতৃত্বাধীন বামজোট। মাত্র পাঁচ বছরে দেশের মানুষের মনোভাবের এই আমূল বদলের কারণ হিসেবে শ্রীলঙ্কার অর্থনৈতিক টালমাটাল পরিস্থিতির কথা বলছেন অনেকে। ২০২২ সালে প্রবল বিক্ষোভের মুখে ক্ষমতাচ্যুত হয়ে দেশ ছাড়েন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপক্ষে এবং তার ভাই প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপক্ষে। পার্লামেন্ট সদস্যদের ভোটাভুটিতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব নিয়েছিলেন রনিল। কিন্তু যে অর্থনৈতিক সংকটট রাজাপক্ষের বিরুদ্ধে গণবিক্ষোভকে উস্কে দিয়েছিল, তা খুব বেশি নিয়ন্ত্রণে আনতে পারেননি রনিল। তাই রনিলের নেতৃত্বে অনাস্থা জ্ঞাপন করে ৫৬ বছরের দিশানায়েককে লঙ্কাবাসী প্রেসিডেন্ট হিসেবে বেছে নিলেন বলে মনে করা হচ্ছে।
কে এই দিশানায়েকে?
শ্রীলঙ্কার রাজধানী কলম্বো থেকে ১৭৭ কিলোমিটার দূরের অনুরাধাপুরা জেলার থামবুত্তেগামা গ্রামে জন্ম দিশানায়েকের। গ্রামীণ মধ্যবিত্ত এক পরিবারে জন্ম নেওয়া দিশানায়েকে কেলানিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিজ্ঞানে স্নাতক করেছেন। ছাত্রজীবন থেকে জেভিপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন তিনি।
দেশটির সংসদে প্রথমবারের মতো আইনপ্রণেতা হিসেবে নির্বাচিত হন ২০০০ সালে। পরে ২০০৪ থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত দেশটির কৃষি, প্রাণিসম্পদ, ভূমি ও সেচমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন তিনি।
২০১৪ সালে জেভিপির নেতা হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন তিনি। পরবর্তীতে ২০১৫ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত দেশটির সংসদে প্রধান বিরোধীদলীয় হুইপ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন দিশানায়েকে।
জেভিপির বিরুদ্ধে দেশটিতে সহিংস রাজনীতিতে জড়ানোর ইতিহাস রয়েছে। দায়িত্ব নেওয়ার পর দলের ভাবমূর্তি ফেরানোর চেষ্টায় বিভিন্ন ধরনের পদক্ষেপ নেন তিনি। ১৯৭১ সাল এবং ১৯৮০-এর দশকের শেষ দিকে দলটি মার্ক্সবাদী রাজনীতিতে অনুপ্রাণিত হয়ে বিদ্রোহ শুরু করে। তবে সেই বিদ্রোহ ব্যাপক সহিংস হয়ে ওঠে। গণগ্রেফতার, নির্যাতন, অপহরণ ও গণহত্যায় দলটির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অন্তত ৬০ হাজার মানুষের প্রাণহানি ঘটে। বিদ্রোহে দলটির প্রতিষ্ঠাতা রোহানা উইজেবিরাসহ বেশির ভাগ জ্যেষ্ঠ নেতা মারা যান।
এদিকে নির্বাচনে জিতে দেশবাসীর প্রতি দেশের ইতিহাস নতুন করে লেখার আহ্বান জানিয়েছেন শ্রীলঙ্কার নতুন এই প্রেসিডেন্ট। ৫৫ বছর বয়সী দিশানায়েকে আনুষ্ঠানিক ফল ঘোষণার পর এক বিবৃতিতে বলেন, ‘শতবর্ষ ধরে আমরা যে স্বপ্ন লালন করেছি তা অবশেষে সত্যি হচ্ছে। এই বিজয় আমাদের সবার। আশা এবং প্রত্যাশায় ভরা লাখো চোখ আমাদের এগিয়ে নিয়ে যাবে। একসঙ্গে আমরা শ্রীলঙ্কার ইতিহাস নতুন করে লিখতে প্রস্তুত।
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post