কুয়েত প্রবাসী শ্রমিকদের ভোরের আলো ফোটার আগেই বের হতে হয় কাজের জন্য। ডিউটি ড্রেস পরে খাবারের ব্যাগ হাতে নিয়ে রাস্তায় নির্দিষ্ট স্থানে লাইনে দাঁড়াতে হয় গাড়ির জন্য। তারপর গাড়ি এসে নিয়ে কর্মস্থলে বুঝিয়ে দেওয়া হয় যার যার কাজ।
কাজের ব্যস্ততার ফাঁকেই প্রবাসীরা নেন পরিবার, প্রিয়জন ও স্বজনদের খবর। কাজে কাজে চলে যায় দিন। এরই মধ্যে সুযোগ করে সকালের এবং দুপুরের খাবার খেয়ে নেন ঝুলে থাকা পলিথিন থেকে। আর কাজ শেষে সন্ধ্যায় থাকেন গাড়ির অপেক্ষায়। এভাবেই কেটে যায় প্রবাসীর দিন, এভাবেই ঝুলে থাকে স্বপ্ন।
প্রবাসী শ্রমিকদের একজন সিরাজগঞ্জের রহমত উল্লাহ। পরিবারের আর্থিক সচ্ছলতা ও সুখের জন্য পাঁচ বছর আগে পাড়ি জমান মধ্যপ্রাচ্যের দেশ কুয়েতে। কেমন আছেন? কেমন কাটছে কাজকর্ম? জানতে চাইলে তিনি শত কষ্টের মাঝেও মহান সৃষ্টিকর্তার শুকরিয়া আদায় করে বললেন “এখন সুস্থ আছি এটাই বড় পাওয়া।”
রহমত উল্লাহ বলেন, মাস শেষ হয়ে ১০ দিন হয়ে যাওয়ায় দেশ থেকে বারবার ফোন আসছে টাকার জন্য। পরিবারের লোকজন বিভিন্ন খরচ আর ধার দেনার কথা বলে। দেশের মানুষ মনে করে বিদেশ মানেই চাকচিক্যময় জীবন, উন্নত থাকা-খাওয়া, চলাফেরা, উন্নত জীবনযাপন।
তিনি আক্ষেপ প্রকাশ করে বলেন, বাস্তবতা কী? কেউ একবারও ভেবে দেখে না যে আমার সন্তান, বাবা, ভাই, স্বামী কেমন আছে? একটা লোক পরিবারের মায়া ত্যাগ করে একাকী জীবন পার করছে বছরের পর বছর। আসলে আমরা প্রবাসীরা আজব এক প্রাণী যে কি না নিজের সুখ-আনন্দ বিসর্জন দিয়ে মোমবাতির মতো আলো দিয়ে চলছি।
এ প্রবাসী বলেন, আমরা এটা ভাবি না যে আলো দিতে দিতে একটা নির্দিষ্ট সময় শেষে নিবে যাবে প্রবাসী নামের সেই মোমবাতিটা। প্রবাসীরা মোমবাতির মতো নিজে জ্বলে পরিবারের জন্য আলো দিতে গিয়ে নেভে যান। তাও আপনজনদের কাছ থেকে শেষ শব্দটা শুনতে হয়, কী করেছি এত বছর প্রবাস জীবনে? এই বলেই তিনি আবেগে আপ্লূত হয়ে পড়েন।
আরো পড়ুনঃ
ওমান রুটে বিমানের এ কি হাল!
বাংলাদেশে আসছেন ওমানের সুলতান!
প্রবাসীদের পাসপোর্ট নিয়ে দারুণ সুখবর
পাসপোর্ট নিয়ে চরম ভোগান্তিতে ওমান প্রবাসীরা
ফেসবুক প্রতারণা থেকে প্রবাসীদের সতর্ক থাকার আহ্বান
মাইগ্রেশন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, একজন প্রবাসী সবচেয়ে বেশি মানুষিক নির্যাতনের স্বীকার হন তার পরিবার থেকে। যে কারণে প্রবাসে দিনদিন হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃতের সংখ্যা বেড়েই চলছে! মধ্যপ্রাচ্যে মৃত প্রবাসীদের অধিকাংশের বয়সই ২৫ থেকে ৩৫ এর মধ্যে।
দালালের মাধ্যমে অতিরিক্ত খরচে বিদেশ যেয়ে কথামত কাজ ও বেতন না পাওয়া, সেইসাথে অনেক পরিবারের উচ্চ আকাঙ্ক্ষা পূরণ করতে যেয়ে অকালেই ঝরে যাচ্ছে রেমিট্যান্স যোদ্ধা। এর থেকে উত্তরণে দক্ষ হয়ে বৈধ পথে বিদেশ গমন এবং পরিবারের সাপোর্টের ব্যাপারে পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post