দেশের আলোচিত আট ব্যাংকে টাকা রেখে চরম বিপদে পড়েছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। ব্যাংকগুলো অর্থ সংকটের কারণে বন্দর কর্তৃপক্ষের টাকা ফেরত দিতে পারছে না। এই অবস্থায় টাকা ফেরত পেতে অর্থ মন্ত্রণালয় ও নৌপরিবহন উপদেষ্টাকে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য অনুরোধ জানিয়ে সম্প্রতি চিঠি দিয়েছে বন্দর কর্তৃপক্ষ। অর্থ মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা এ তথ্য জানিয়েছেন।
বেসরকারি খাতের এই আটটি ব্যাংকের মধ্যে সাতটিরই মালিকানায় ছিল এস আলম গ্রুপ। এগুলো হলো ইউনিয়ন ব্যাংক পিএলসি, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক পিএলসি, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক পিএলসি, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক পিএলসি, ন্যাশনাল ব্যাংক পিএলসি, পদ্মা ব্যাংক পিএলসি ও বেসিক ব্যাংক পিএলসি। এই সাতটি ব্যাংকে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের রাখা টাকার পরিমাণ ১ হাজার ২৮১ কোটি ৫৩ লাখ। এ ছাড়া ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশে (আইসিবি) রয়েছে ৭২ কোটি ৪৯ টাকা। সব মিলিয়ে ১ হাজার ৩৫৪ কোটি ২ লাখ টাকা। এসবই বন্দর কর্তৃপক্ষের স্থায়ী আমানত বা এফডিআর। যদিও কেন্দ্রীয় ব্যাংক সম্প্রতি এসব ব্যাংকের পরিচালনা পর্যদ ভেঙে দিয়ে নতুন পর্যদ গঠন করা শুরু করেছে।
গত ২৯ আগস্ট চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল সৈয়দ মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ এবং নৌ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টার কাছে পাঠানো এক চিঠিতে আট ব্যাংকে থাকা বন্দর কর্তৃপক্ষের টাকা ফেরত পেতে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ করেন। চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, ‘ব্যাংকসমূহের বিভিন্ন শাখায় চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের তহবিল, পেনশন তহবিল ও ভবিষ্য তহবিল বিভিন্ন সময়ে স্থায়ী আমানতে বিনিয়োগ করা হয়। বর্তমান সময়ে উল্লিখিত ব্যাংকসমূহের আর্থিক দুরবস্থা, অনিয়ম ও তারল্য সংকটের বিষয়গুলো নিয়মিতভাবে গণমাধ্যম ও পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত হওয়ার দরুন উক্ত ব্যাংকসমূহে চবকের (চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ) স্থায়ী আমানতসমূহ ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে প্রতীয়মান হচ্ছে। ব্যাংকসমূহের আর্থিক সক্ষমতা না থাকায় চবকের বিনিয়োগকৃত টাকার আসল ও সুদ বারবার পত্রের মাধ্যমে চবকের অনুকূলে পরিশোধের জন্য অনুরোধ জানানো হলেও সংশ্লিষ্ট ব্যাংকসমূহ থেকে আদায় করা সম্ভব হচ্ছে না। ফলশ্রুতিতে চবকের সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য চলমান গুরুত্বপূর্ণ উন্নয়ন প্রকল্পে অর্থ ব্যয়সহ অন্যান্য ব্যয় নির্বাহ দুরূর হয়ে পড়ছে। এতে চবক আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে এবং সরকার রাজস্ব আয় হতে বঞ্চিত হচ্ছে।’
এই আট ব্যাংকের মধ্যে ইউনিয়ন ব্যাংকের কাছে বন্দর কর্তৃপক্ষের আমানতের পরিমাণ ৪২১ কোটি ৭ লাখ টাকা, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকের কাছে ১১৫ কোটি, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের কাছে ২১২ কোটি ১৫ লাখ, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের কাছে ১৯১ কোটি ৭৬ লাখ, ন্যাশনাল ব্যাংকের কাছে ২৫ কোটি, বেসিক ব্যাংকের কাছে ১৩৭ কোটি ২৪ লাখ, আইসিবির কাছে ৭২ কোটি ৪৯ লাখ এবং পদ্মা ব্যাংকের কাছে ১৭৯ কোটি ৩১ লাখ টাকা।
অর্থ মন্ত্রণালয় ও নৌ-উপদেষ্টাকে দেওয়া বন্দর কর্তৃপক্ষের চিঠিতে আরও বলা হয়, ‘ইতোপূর্বে পদ্মা ব্যাংক পিএলসি, ন্যাশনাল ব্যাংক পিএলসি, বেসিক ব্যাংক পিএলসি, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক পিএলসি এবং ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশে রক্ষিত চবকের সকল স্থায়ী আমানত নগদায়নে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য কয়েক দফায় পত্র প্রেরণ করা হলেও সংশ্লিষ্ট ব্যাংক অদ্যাবধি নগদায়নের ব্যপারে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। গত ২৭ আগস্ট ইউনিয়ন ব্যাংক পিএলসি, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক পিএলসি, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক পিএলসি, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক পিএলসির বিভিন্ন শাখায় রক্ষিত চবকের সকল স্থায়ী আমানত নগদায়ন সংক্রান্ত বিষয়ে বন্দর চেয়ারম্যানের সভাপতিত্বে চবক বোর্ড রুমে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত সভায় সংশ্লিষ্ট ব্যাংকসমূহকে চবকের এফডিআর নগদায়নের জন্য অনুরোধ করা হলে ব্যাংকগুলো এফডিআরসমূহ নগদায়নের ক্ষেত্রে দেশের চলমান পরিস্থিতি, ব্যাংকগুলোর পরিচালনা পর্ষদে পরিবর্তনসহ বিভিন্ন কারণে এই মূহূর্তে আমানত নগদায়ন করা সম্ভব নয় মর্মে জানান। তবে ব্যাংকগুলো আগামী কয়েক মাসের মধ্যে তারল্য সংকট উত্তরণ সাপেক্ষে চবকের আমানতসমূহ ধাপে ধাপে পরিশোধ করা সম্ভবপর হবে মর্মে জানান। এ মতাবস্থায়, দেশের সমৃদ্ধির স্বর্ণদ্বার খ্যাত জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সার্বিক কার্যক্রম পূর্বের ধারাবাহিকতায় অক্ষুণ্ন রাখার স্বার্থে ইউনিয়ন ব্যাংক পিএলসি, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক পিএলসি, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক পিএলসি, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক পিএলসি, ন্যাশনাল ব্যাংক পিএলসি, বেসিক ব্যাংক পিএলসির বিভিন্ন শাখায় এবং ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশে রক্ষিত চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের স্থায়ী আমানতসমূহ যথাশীঘ্র পরিশোধের ব্যাপারে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকসমূহকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রদানের অনুরোধ জানানো হয়।
এ বিষয়ে কথা বলতে চট্টগ্রাম বন্দর চেয়ারম্যানের সঙ্গে যোগাযোগ করলেও তাকে পাওয়া যায়নি।
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post