শেখ হাসিনা সরকারের শতাধিক প্রভাবশালী এমপি-মন্ত্রী ও দলীয় নেতাকর্মীর পর এবার দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) জালে ফেঁসে যাচ্ছেন ১০টি দেশের দূতাবাসে কর্মরত অন্তত ৩৮ কর্মকর্তা ও কর্মচারী। সরকারি বিপুল পরিমাণ অর্থ অপচয়ের অভিযোগে ইতোমধ্যেই তাদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু করেছে দুদক। গতকাল মঙ্গলবার এসব কর্মকর্তার বিষয়ে তথ্য চেয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং মিশন অডিট অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বরাবর চিঠি দিয়েছেন দুদকের ঢাকা ডিভিশন-১-এর উপপরিচালক সৈয়দ নজরুল ইসলাম।
চিঠিতে আগামী ১০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে ওই কর্মকার্তাদের আগের কর্মস্থল, দায়িত্বপ্রাপ্ত শাখা ও তৎকালীন পদবি, বর্তমানে তাদের কর্মস্থল, পদবি, স্থায়ী ও বর্তমান ঠিকানা দিতে বলা হয়েছে। চিঠিতে বলা হয়েছে, মালয়েশিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, সৌদি আরব, চীন, দুবাই, ইতালি, সুইজারল্যান্ড, কানাডা, ফিলিপাইনে বাংলাদেশি দূতাবাস/হাইকমিশনে কর্মরত রাষ্ট্রদূত, হেড অব চ্যান্সেলর/প্রধান কনস্যুলার, মন্ত্রণালয়ের সচিব ও অন্যান্য কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে বিভিন্ন দুর্নীতি, ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে অর্থ আত্মসাৎ এবং সরকারের আর্থিক ক্ষতিসাধনের অভিযোগ রয়েছে। অভিযোগটি সুষ্ঠু সন্ধানের স্বার্থে বর্ণিত অভিযোগের বিষয়ে এসব কর্মকর্তার বর্তমান কর্মস্থল, পদবি, স্থায়ী ঠিকানা এবং বর্তমান ঠিকানা সংগ্রহ করা প্রয়োজন।
যেসব কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে, তারা হলেন মো. হালিমুজ্জামান (প্রথম সচিব), মো. আব্দুল কাদের (গাড়ি চালক), জাকির হোসেন খন্দকার (কাউন্সিলর) জসিম উদ্দিন (উপসচিব, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়) কাজী মুনতাসির মোর্শেদ (সহকারী সচিব), আব্দুল লতিফ ফকির (পিও, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়) আতিকুর রহমান (এমএলএসএস, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়) ইব্রাহিম খলিল (স্টেনোটাইপিস্ট, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়), আসগার হোসেন (সচিব, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়) লুৎফর রহমান (প্রশাসনিক কর্মকর্তা, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়), কামাল হোসেন (পিও, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়), আকরামুল কাদের (রাষ্ট্রদূত, ওয়াশিংটন), কামরুল আহসান (রাষ্ট্রদূত, অটোয়া, কানাডা), ইয়াকুব আলী (সাবেক রাষ্ট্রদূত) মোহাম্মদ জিয়াউদ্দিন (রাষ্ট্রদূত,
ওয়াশিংটন) সামসুল আলম (কনস্যুলার, ওয়াশিংটন ডিসি), ড. এ কে এম আব্দুল মোমেন (কনস্যুলার, নিউইয়র্ক), শামীম আহসান (কনস্যুলার জেনারেল), সুলতানা লায়লা হোসাইন (কনস্যুলার জেনারেল, লস এঞ্জেলস), আব্দুল হান্নান (রাষ্ট্রদূত, যুক্তরাজ্য), খন্দকার এম তালহা (ডেপুটি রাষ্ট্রদূত), সরিফা খান (কনস্যুলার জেনারেল, বাণিজ্যিক), ফয়সাল আহম্মেদ (সহকারী রাষ্ট্রদূত, বাকিংহাম), শহিদুল ইসলাম (রাষ্ট্রদূত, রিয়াদ, সৌদি আরব), এ কে এম শহিদুল করিম (কনস্যুলার জেনারেল, জেদ্দা, সৌদি আরব), এ কে এম মোকাম্মেল হোসেন (কনস্যুলার লেবার উইং), সরোয়ার হোসেন (কনস্যুলার, লেবার উইং, রিয়াদ, সৌদি আরব), এম ফজলুল করিম (রাষ্ট্রদূত, চীন), এম দেলেয়ার হুসাইন, তারেক আহম্মেদ (কনস্যুলার), রোজিনা আহমেদ (কনস্যুলার জেনারেল, ইতালি), নাফিসা মনসুর (ভাইস কনস্যুলার, ইতালি), শাহাদাত হোসেন (রাষ্ট্রদূত, ইতালি), শহিদুল ইসলাম (রাষ্ট্রদূত, ফ্রান্স), হযরত আলী খান (কনস্যুলার এবং হেড অব চ্যান্সেরি, ফ্রান্স), শামিম আহসান (রাষ্ট্রদূত, সুইজারল্যান্ড), নজরুল ইসলাম (মিনিস্টার অ্যান্ড এইচওসি, সুইজারল্যান্ড) এবং আলিমুজ্জামান (কনস্যুলার, সুইজারল্যান্ড)।
জানতে চাইলে দুদকের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, আমাদের তালিকায় বিভিন্ন দেশের অন্তত অর্ধশতাধিক কর্মকর্তা রয়েছেন। প্রাথমিক পর্যায়ে এই ৩৮ জনের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু হয়েছে। পর্যায়ক্রমে বাকি কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধেও তদন্ত শুরু হবে।
তিনি আরও বলেন, এসব কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার, দুর্নীতি ও বিভিন্ন অনিয়মের মাধ্যমে দেশে-বিদেশে নিজ এবং পরিবাবের নামে বিপুল পরিমাণে অবৈধ সম্পদ অর্জনের তথ্য রয়েছে। এ ছাড়াও তারা বিদেশে মিশনে অপ্রয়োজনীয় অর্থ ব্যয় ও অপচয় করে সরকারের বিপুল পরিমাণে আর্থিক ক্ষতি সাধন করেছেন।
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post