নিজের স্ত্রীকে প্রথমে নেশা করাতেন, এরপর অন্য পুরুষ দিয়ে তাঁকে ধর্ষণ করাতেন। একবার–দুবার নয়, এমন ভয়ংকর ও অমানবিক ঘটনা ঘটেছে ৯২ বার। আর এ জন্য অনলাইনে লোক ঠিক করতেন তিনি। এমনই ভয়ংকর অভিযোগ উঠেছে ফ্রান্সের অবসরপ্রাপ্ত প্রবীণ এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে। সোমবার তাঁর বিচার শুরু হয়েছে। এ মামলা ফ্রান্সে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
প্রধান অভিযুক্ত ব্যক্তির বয়স ৭১ বছর। তিনি ফ্রান্সের রাষ্ট্রায়ত্ত বিদ্যুৎ কোম্পানি ইডিএফে কাজ করতেন। আর তাঁর স্ত্রীর বয়স এখন ৭২ বছর। তাঁদের বাড়ি ফ্রান্সের দক্ষিণাঞ্চলের অ্যাভিগনোনে।
নেশা করানোর পর নিজের স্ত্রীকে অন্য পুরুষ দিয়ে ধর্ষণ করানোর জন্য অনলাইনে যোগাযোগমাধ্যমে ৫০ জন ব্যক্তিকে জড়ো করার অভিযোগ উঠেছে অভিযুক্ত ওই ব্যক্তির বিরুদ্ধে। পুলিশ বলছে, এসব মানুষের মাধ্যমে ধর্ষণের ৯২টি ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় অভিযুক্ত মোট ৭২ জন। ৫১ জনকে শনাক্ত করা হয়েছে।
ভুক্তভোগীর আইনজীবী বলেন, প্রায় এক দশক ধরে ধর্ষণের এসব ঘটনা ঘটেছে। ধর্ষণের আগে তাঁর মক্কেলকে কড়া ডোজের মাদক দিয়ে নেশা করানো হতো। তাই তাঁর মক্কেল এসব ঘটনার বিষয়ে সচেতন ছিলেন না। অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বয়স ২৬ থেকে ৭৪ বছরের মধ্যে।
ভুক্তভোগীর আইনজীবী দলের এক সদস্য স্টিফেন বাবোন্যু বলেন, ভুক্তভোগী নারী পুরো বিচারপ্রক্রিয়াটি প্রকাশ্যে করার অনুরোধ করেছেন, যাতে মানুষ এমন অপরাধ সম্পর্কে সচেতন হতে পারে। তাঁর অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে বিচারক রজার আরাতা প্রকাশ্য শুনানির ঘোষণা দিয়েছেন।
তিন সন্তানের সহায়তায় অভিযুক্ত নারী আদালতে এসেছিলেন জানিয়ে তাঁর আরেকজন কৌঁসুলি আন্তোনি কামুস বলেন, অভিযুক্তের তিন সন্তানও চান না যে পুরো বিচারপ্রক্রিয়া গোপনে দরজার অন্তরালে চলুক।
তদন্তের শুরু যেভাবে
সময়টা ২০২০ সালের সেপ্টেম্বর মাস। প্রধান আসামি একটি শপিং মলে নিরাপত্তা প্রহরীদের কাছে ধরা খান। ওই সময় তিনি সেখানে তিনজন নারীর আপত্তিকর ছবি তুলেছিলেন। তাঁর বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু হয়। এরপর যেন কেঁচো খুঁড়তে সাপ বেরিয়ে আসে।
পুলিশ জানায়, তাঁরা ওই ব্যক্তির কম্পিউটারে এক নারীর শত শত আপত্তিকর ছবি ও ভিডিও খুঁজে পান। সেসব দেখে বোঝা যায়, ছবি–ভিডিওগুলো ওই নারীর সম্মতিতে তোলা হয়নি। আর ওই নারী ছিলেন অভিযুক্তের স্ত্রী।
ছবি ও ভিডিওগুলো বিশ্লেষণ করে পুলিশ জানতে পারে, নিজের বাড়িতে ওই নারী দিনের পর দিন ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। তা–ও নিজের স্বামী তাঁকে নেশা করিয়ে এসব ঘটনা ঘটিয়েছেন। ফ্রান্সের অ্যাভিগনোনের মাজান শহরে তাঁদের বাড়ি।
কৌঁসুলিরা বলেন, ধর্ষণের ঘটনার শুরু ২০১১ সালে। তখন ওই দম্পতি রাজধানী প্যরিসের পাশে বসবাস করতেন। পরে তাঁরা মাজান শহরে চলে আসেন। সেখানে আসার পর বছর দুয়েক পর্যন্ত এসব ঘটনা ঘটে। ভুক্তভোগীর স্বামী ধর্ষণের সময় ছবি তুলে, ভিডিও করে রাখতেন। পরে সেসব দেখিয়ে অন্যদেরও একই কাজে উৎসাহিত করে ডেকে আনতেন।
অভিযুক্তদের মধ্যে গাড়িচালক, দমকল কর্মকর্তা, একটি কোম্পানির শীর্ষকর্তা, এমনকি সাংবাদিকও রয়েছেন। তাঁদের কেউ কেউ বিবাহিত, কেউ অবিবাহিত, কেউবা তালাকপ্রাপ্ত। বেশির ভাগই একবার ধর্ষণ করেছিলেন। তবে কেউ কেউ ছয়বার পর্যন্ত এই অপরাধে জড়িয়েছিলেন।
একজন বিশেষজ্ঞ বলেন, ধর্ষণের ঘটনার সময় ভুক্তভোগীকে কড়া ডোজের নেশা করানো হতো। তাঁর অবস্থা ছিল ঘুমানোর চেয়েও বেশি। অনেকটা কোমায় চলে যাওয়ার মতো।
আগেও অভিযোগ ছিল প্রধান অভিযুক্ত ব্যক্তির বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ এবারই প্রথম নয়। এর আগে ১৯৯১ সালে তাঁর বিরুদ্ধে হত্যা ও ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছিল। তবে তিনি তা অস্বীকার করেন। পরে ১৯৯৯ সালে আবারও ধর্ষণচেষ্টার অভিযোগ ওঠে তাঁর বিরুদ্ধে। তখন ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে শনাক্ত হন তিনি।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রধান অভিযুক্ত ব্যক্তি মানসিকভাবে স্থিতিশীল নন, এমনটাও বলা যাবে না। তবে এএফপির হাতে আসা নথিতে তাঁরা বলেছেন, ওই ব্যক্তি নারীর শরীরের ওপর নিজেকে ‘সর্বশক্তিমান’ অনুভব করার তাড়না বোধ করতেন।
আগামী ২০ ডিসেম্বর পর্যন্ত বিচার কার্যক্রম চলবে। গতকাল শুনানি চলাকালে আদালতের বাইরে কালো পোশাক পরে নারীরা বিক্ষোভ করেন।
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post