প্রিয় মানুষ মারা যাওয়ার পর আত্নীয় স্বজনদের প্রথম চাওয়া থাকে মৃত মানুষটির কবরের যেন চিহ্ন থাকে। যাতে ভবিষ্যতে প্রিয় মানুষটির কবরটি অন্তত জিয়ারত করা যায়। কিন্তু প্রিয় মানুষকে মাটির অভাবে কবর দিতে না পেরে কলাগাছের ভেলায় ভাসিয়ে দেওয়ার যে কষ্ট তা কি ভুলা যাবে। তেমনি এক ঘটনা ঘটেছে ফেনীর সাতসতী গ্রামের বাসিন্দা ওমান প্রবাসী আলীম উল্লাহ’র পরিবারের সাথে।
শুক্রবার (২৩ আগস্ট) ভোরে মারা যান বৃদ্ধ আলীম উল্লাহ (৭৩)। পুরো এলাকা পানিতে তলিয়ে গেছে। মৃতদেহটি দাফন করার জন্য সাড়ে তিন হাত শুকনো জায়গাও পাওয়া যায়নি। আলীম উল্লাকে অন্তত দূরে কোথাও কবর দেওয়ার ব্যবস্থা করা যায় কিনা তার জন্য জরুরি পরিস্থিতিতে যোগাযোগও করেছিলেন পরিবারের সদস্যরা। কেউ হয়তো আসবে সেই আশায় দুইদিন মরদেহ নিয়ে অপেক্ষাও করেছিলেন।
কিন্তু কেউ আর আসলো না। তাই বাধ্য হয়ে শনিবার (২৪ আগস্ট) কলাগাছের ভেলায় বাসিয়ে দেওয়া হলো আলীম উল্লাহ’র মরদেহ। সাথে লিখে দেওয়া হলো একটি চিঠি। সেই চিঠিতে যা লিখা ছিল তা হুবুহু তুলে ধরা হলো।
‘এই মৃতদেহটি অতিরিক্ত বন্যার কারণে আমরা দাফন করিতে পারিনি। দুইদিন অতিবাহিত হওয়ার পরে আমরা পানিতে ভাসিয়ে দিয়েছি। সাথে আমাদের এলাকার নাম-ঠিকানাসহ ফোন নম্বর দেওয়া হয়েছে। যদি কেউ শুকনো জায়গা পান, তাকে কবর দিয়ে দিবেন এবং আমাদের ওই ঠিকানা যোগাযোগ করবেন।
আপনাদের কাছে আমরা চির কৃতজ্ঞ থাকবো। ঠিকানা—নাছির ভূঁইয়া বাড়ি, ৬ নম্বর ওয়ার্ড, গ্রাম সাতসতী, ১১ নং মোটবী ইউনিয়ন, ফেনী সদর, ফেনী।’
পরিবারের সদস্যরা জানান, আলীম উল্লাহ চার দিন অসুস্থ থাকার পর শুক্রবার (২৩ আগস্ট) ভোরে মারা যান । তখন পুরো ইউনিয়নের চারপাশেই অথৈ পানি। একটু শুকনো জায়গা নেই কবর দেওয়ার জন্য।
তারা আরও জানান, দুইদিন ধরে সেনাবাহিনী ও স্বেচ্ছাসেবকদের মাধ্যমে ফেনীতে যোগাযোগের চেষ্টা করেন। কিন্তু কারো কাছ থেকে কোনো সাড়া পাননি। তাই বাধ্য হয়ে কলাগাছের ভেলায় মরদেহটি ভাসিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।
এদিকে আলীম উল্লাহ’র ছেলে ওমান প্রবাসী মাসুদ খান বাবাকে কবর না দিয়ে ভাসিয়ে দেওয়ায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক আক্ষেপ করে পোস্ট দেন।
পোস্টে তিনি লিখেন, ‘আমার বাবাকে গতকাল বিকালে কলা গাছের ভেলা দিয়ে বন্যার পানিতে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। আপনারা যারা ওইখানে উপস্থিত ছিলেন কিভাবে পারলেন এটা। দরকার হলে বাইরে ভেলা তে রেখে আরেকটা দিন অপেক্ষা করতেন।আপনাদের কেউ মরতো তাহলে ছেড়ে দিতে পারতেন না কোনো উপায় বের করে পানি নামা পর্যন্ত অপেক্ষা করতেন। কার আদেশে এত তাড়াহুড়ো করতে হলো? একটা মানুষ যখন মারা গেলো পরিস্থিতি অনুযায়ী নরমালি ৩ দিন দেখা উচিৎ ছিলো।কেউ বোট বা কোনো উদ্ধার কর্মী আসেনি,একটা বোট নিয়ে কেউ আসলে আমার বাবাকে ফ্রিজিং করে রাখা যেত, মনের ভিতর আগুন জলছে কিভাবে কোথায় আছে। আল্লাহ আমার বাবাকে জান্নাতুল ফেরদৌস নসিব করো।’
তার আগে বাবার কবর জিয়ারত সুযোগ পাওয়ার জন্য আল্লাহর সাহায্য প্রার্থনা করেন। পোস্টে লিখেন, ‘হে আল্লাহ আমার বাবা যেন একটু মাটি পায়।আল্লাহ তুমি সব কিছুর মালিক,তুমি এই দুরদিনে আশ্রয় দাও। অন্তত তার কবর জেয়ারত করতে পারি ওই সুযোগ করে দাও।’
এছাড়াও বাবার মরদেহ কবর দেওয়ার বিষয়ে সাহায্য চেয়েও পোস্ট দেন মাসুদ। সেখানে তিনি লিখেন, ’সাতসতি নাছির বাড়িতে এখনও একটা স্পিড বোট আসলোনা। সেনাবাহিনী ঢুকতে দিচ্ছে না, উদ্ধার করতে না পারেন ওন্য রিস্কিও টিমদের ও কেনো ঢুকতে দিচ্ছেন না। আমার বাবার লাশ পড়ে আছে, বাচ্চা সহ সবাই না খেয়ে আছে। উদ্ধার করতে না পারলে উদ্ধার এর নামে নাটক করার ও প্রয়োজন নাই।’
প্রসঙ্গত কত কয়েকদিন ধরে পাহাড়ি ঢল ও অতিবৃষ্টির পানিতে তলিয়ে আছে ফেনী জেলা। এতে পানিবন্দি হয়ে আছে কয়েক লাখ মানুষ। তাদের উদ্ধারে সাধারণ মানুষ সহ বিভিন্ন বাহিনী কাজ করে যাচ্ছে।
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post