রাজনৈতিক অস্থিরতা, ক্ষমতার পালাবদল, দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের ভয়াবহ বন্যার মতো ঘটনা পরিক্রমার ভেতর দিয়ে যাওয়ার মাঝে রাওয়ালপিন্ডি থেকে এসেছে গৌরবময় জয়ের সুখবর।
টেস্ট মর্যাদা পাওয়ার পর প্রথমবার সাদা পোশাকের ক্রিকেটে পাকিস্তান বধের স্বাদ পেল টাইগাররা। ১০ উইকেটের ঐতিহাসিক জয়ে দুই ম্যাচ সিরিজে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে গেল বাংলাদেশ।
স্বাগতিকদের প্রথম ইনিংসে ৬ উইকেটে ৪৪৮ রানে ইনিংস ঘোষণার জবাবে বাংলাদেশের ৫৬৫ রানে অলআউট হয়। পাকিস্তানের চেয়ে ১১৭ রানে এগিয়ে থেকে সফরকারীরা ফিল্ডিংয়ে নামে। এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত দ্বিতীয় ইনিংসে পাকিস্তান ১৪৬ রানে অলআউট হয়। ৩০ রানের জয়ের লক্ষ্যে নামা সফরকারীরা বিনা উইকেটেই বিজয়ের বন্দরে পৌঁছে যায়।
শাহিন শাহ আফ্রিদির প্রথম ওভারেই ৭ রান তুলে নেয় টিম টাইগার্স, বাউন্ডারি মারেন জাকির হাসান। চতুর্থ ওভারে নাসিম শাহর শেষ বলটিতে চার হাঁকান সাদমান ইসলাম। এর আগের বলটিতে লেগ বাইয়ের মাধ্যমে চার রান আসে।
পঞ্চম ওভারের দ্বিতীয় বলটিতেও চারের মার খান শাহিন আফ্রিদি। ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্ট ও এক্সট্রা কভারের মাঝামাঝি জায়গা দিয়ে জাকির বল সীমানা ছাড়া করেন। নাসিমের করা ষষ্ঠ ওভারে আসে তিন রান, বাংলাদেশ তখন জয় থেকে মাত্র ৫ রান দূরে।
বাংলাদেশের স্থানীয় সময় ঘড়ির কাটায় তখনো বিকেল ৪টা বাজতে মিনিট চারেক বাকি। সপ্তম ওভারের দ্বিতীয় বলে এক রানের জন্য প্রান্ত বদল করেন সাদমান। তৃতীয় বলে আসে সেই মাহেন্দ্রক্ষণ।
জাকির প্যাডেল সুইপে বাউন্ডারি মেরে টাইগারদের ঐতিহাসিক জয়ের আনন্দের উপলক্ষ এনে দেন। জাকির ২৬ বলে ৩ চারে ১৫ ও সাদমান ১৩ বলে এক চারে ৯ রানে অপরাজিত থাকেন।
এর আগে এক উইকেটে ২৩ রান নিয়ে পাকিস্তান পঞ্চম দিনের খেলা শুরু করে। দিনের দ্বিতীয় ওভারেই পাকিস্তান অধিনায়ক শান মাসুদ ১৪ রান করে লিটন দাসের ক্যাচে পরিণত হন। বোলার ছিলেন হাসান মাহমুদ। তবে মাসুদের ক্যাচ নেওয়া লিটন পরের ওভারে শরীফুল ইসলামের বলে বাবর আজমের সহজ ক্যাচ ছেড়ে দেন।
জীবন পেয়েও বাবর ইনিংসটাকে বড় করতে পারেননি। ব্যক্তিগত ২২ রানে পেসার নাহিদ রানার বলে বোল্ড হয়ে ড্রেসিংরুমে ফিরেছেন। খানিক পর সাকিব আল হাসানের বলে শূন্য রানে স্টাম্পিংয়ের ফাঁদে পড়েন সৌদ শাকিল।
পঞ্চম উইকেটে আবদুল্লাহ শফিক ও রিজওয়ান ৩৭ রানের জুটি গড়েন। আক্রমণাত্মক ব্যাটিংয়ে অল্প সময়ের মাঝে চারটি বাউন্ডারি মারেন রিজওয়ান।
দলীয় স্কোর একশ পেরোনোর পর সাকিব আল হাসানের ফ্লাইটেড ডেলিভারিতে উড়িয়ে মারতে গিয়ে ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্টে সাদমান ইসলামের হাতে ধরা পড়েন ৩৭ রান করা শফিক।
আর তাতেই সাকিব গড়েন বিশ্বরেকর্ড। বাঁহাতি স্পিনার হিসেবে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সর্বাধিক উইকেট শিকারি বোলার হিসেবে নিজেকে সবার উপরে নিয়ে গেলেন মি. অলরাউন্ডার।
ভেট্টোরিকে ৩০৫ ওয়ানডে, ৩৬২ টেস্ট আর ৩৮ টি-২০ উইকেট পেয়েছিলেন। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তার মোট উইকেট সংখ্যা ৭০৫। রাওয়ালপিন্ডি টেস্ট শুরুর আগে সাকিবের ঝুলিতে ৭০৩ উইকেট ছিল। পাকিস্তানের প্রথম ইনিংসে তার শিকার ছিল একটি। শাকিলের পর শফিকের উইকেট পাওয়া মাত্র গড়েন ইতিহাস।
শফিকের বিদায়ের পর কোনো রান না করেই মেহেদী হাসান মিরাজের বলে স্লিপে থাকা সাদমানের তালুবন্দি হন আঘা সালমান।
লাঞ্চ বিরতির পর মেহেদী হাসান মিরাজের নিচু হয়ে যাওয়া বল ঠেকাতে চেয়েছিলেন শাহিন শাহ আফ্রিদি। বল আঘাত করে তার প্যাডে, লেগ বিফোরে কাটা পড়ে ফেরেন। দলীয় ১১১ রানে সপ্তম উইকেট হারায় পাকিস্তান।
এরপর সাকিবের বলে উড়িয়ে মারতে গিয়ে মুশফিকুর রহিমের ক্যাচে পরিণত হন নাসিম শাহ। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে বাঁহাতি বোলার হিসেনে নিজের উইকেট সংখ্যাকে ৭০৭-এ নিয়ে যান টাইগার কিংবদন্তি।
নবম ব্যাটার হিসেবে ফিফটি পাওয়া মোহাম্মদ রিজওয়ান ৫১ রানে মিরাজের বলে বোল্ড হন। শেষ ব্যাটার হিসেবে মেহেদী হাসান মিরাজের বলে এলবিডব্লিউ হয়ে ফেরেন মোহাম্মদ আলী, তাতেই গুটিয়ে যায় পাকিস্তানের ইনিংস। খুররাম শাহজাদ ৭ রানে অপরাজিত থাকেন।
বাংলাদেশি বোলারদের পক্ষে মিরাজ ২১ রানে ৪ উইকেট পান। রেকরড গড়া সাকিব ৪৪ রানে ৩টি উইকেট দখল করেন। একটি করে উইকেট নেন শরিফুল ইসলাম, নাহিদ রানা ও হাসান মাহমুদ।
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post