শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ ছাড়ার পরই মিছিলের নগরীতে পরিণত হয় সারাদেশ। বিজয় উল্লাসে ফেটে পড়েন সাধারণ ছাত্র-জনতা। এর মাঝেও কিছু জায়গাতে সহিংসতা হয়। সোমবার (৫ আগস্ট) বিকেলে কুমিল্লা-৬ আসনের সংসদ সদস্য আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহারের বাড়ি ও আওয়ামী লীগের অফিসসহ কয়েকটি স্থাপনা ভাঙচুর করেন বিক্ষুব্ধ জনতা।
বিশেষ করে কয়েকটি মন্দিরের সামনে আচমকাই জড়ো হয় কিছু মানুষ। তারা কিছু মন্দিরে ঢিলও ছোড়ে। এরপর থেকেই দেশের মন্দিরগুলোর নিরাপত্তায় কড়া নজরদারি করছে মাদরাসা ছাত্র ও সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
মঙ্গলবার (৬ আগস্ট) কুমিল্লা নগরী ও আশপাশের এলাকার মন্দিরগুলো ভাঙচুর থেকে বাঁচাতে মন্দিরের সামনে অবস্থান নেন তারা। মধ্যরাতেও কুমিল্লার বিভিন্ন মন্দিরের সামনে তাদের দেখা যায়।
মাদরাসা ছাত্র ও সাধারণ শিক্ষার্থীরা বলছেন, নতুন স্বাধীনতার ফাঁকে কেউ যেন সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করতে না পারে সেজন্যই এই আন্দোলন। এভাবে আমাদের ভাইদের জান ও মালের রক্ষা করাও স্বাধীনতার অংশ। এটাও আমাদের আন্দোলনকে ধারণ করার অর্থ।
এদিকে মন্দির রক্ষার্থে বিভিন্ন স্থানে মাইক, মৌখিক ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও পাহারা বসানোর জন্য আন্দোলনকারীদের বসানোর জন্য বলা হচ্ছে।
কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের ছাত্র ও বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে আন্দোলন করা শিক্ষার্থী অভিষেক কর বলেন, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সূত্র ধরেই আজকের এই মুহূর্ত। যে নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখে আমাদের ভাইয়েরা এত রক্ত দিয়েছে সেই নতুন বাংলাদেশে যেন বৈষম্যটা না থাকে। এখনও কুমিল্লার কোনও মন্দিরে হামলার খবর পাইনি।
আমরা বিশ্বাস করি, কুমিল্লার শান্তিপ্রিয় মানুষ স্বাধীনতার আনন্দে সবাইকে নিয়ে শান্তিতে বাঁচবেন। অনেক স্থানে শুনেছি, অনেক ছাত্র-শিক্ষক মন্দির পাহারা দিচ্ছেন। এটা শান্তির লক্ষণ। এটা আমাদের অনুকরণীয় ও শিক্ষণীয়।
ইসলামী যুব আন্দোলন বাংলাদেশের কুমিল্লার সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশ সম্প্রীতির দেশ। এখানে সুখ আর সমৃদ্ধি আছে। এ দেশের কোনও ভাইয়ের জানমালের ক্ষতি হোক চাই না। তাছাড়া এটা ধর্মের স্পষ্ট বক্তব্য। শান্তির স্বার্থে সারা বাংলাদেশে ইসলামী আন্দোলনের ছাত্ররা পাহারা দিচ্ছে। এটা আমরা দায়িত্ব হিসেবে দেখি।
সুনামগঞ্জের মন্দির পাহারায় মাদরাসা ছাত্ররা
দেশের বিভিন্ন জায়গায় সনাতন ধর্মালম্বীদের মন্দিরে হামলার খবর ছড়িয়ে পড়লে সুনামগঞ্জের সচেতন নাগরিক ও মাদরাসার ছাত্ররা শহরের বিভিন্ন মন্দিরে অবস্থান নিয়ে পাহারা দিতে থাকে। মঙ্গলবার (৬ আগস্ট) ফজর নামাজের পর থেকেই কওমি মাদরাসার ছাত্ররা সুনামগঞ্জের বিভিন্ন মন্দিরের সামনে বসে পাহারার ব্যবস্থা করে।
ছাত্রদের পক্ষ থেকে জানানো হয়, ফজরের পর থেকে কওমি মাদরাসার ছাত্ররা সুনামগঞ্জের সব মন্দিরের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করেছে। যদিও সুনামগঞ্জের কোথাও কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।
মন্দির পাহারা দেওয়া স্বেচ্ছাসেবক আম্মার আহমদ বলেন, ‘সুনামগঞ্জ অসাম্প্রদায়িক শহর। এই শহরে সব ধর্মের মানুষ মিলেমিশে থাকি। হিন্দুরাও আমাদের ভাই-বোন। তাই তাদের নিরাপত্তা ও তাদেরকে অভয় দিতে মন্দিরের সামনে আমরা অবস্থান নিয়েছি।’
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post