বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শান্তিপূর্ণ সমাবেশে হামলা ও হত্যার প্রতিবাদে নওগাঁয় সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন শিক্ষার্থীরা। এ সময় তাদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটেছে। এর জেরে আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে ভাঙচুর চালানো হয়েছে। সাংবাদিক, পুলিশসহ আহত হয়েছেন অন্তত ১৮জন।
আজ শনিবার (০৩ আগস্ট) বেলা সাড়ে ১১টায় শহরের কাজীর মোড়ে সমবেত হয়ে এ কর্মসূচি শুরু করেন বিভিন্ন স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের একাংশ।
বিক্ষোভ মিছিলটি কাজীর মোড় হয়ে শহরের ব্যস্ততম সড়ক মুক্তির মোড়ের দিকে অগ্রসর হলে পুলিশ বাঁধা দেওয়ার চেষ্টা করে। তবে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা পুলিশের বাঁধা অতিক্রম করে মুক্তির মোড় পেরিয়ে নওযোয়ান মাঠের সামনে অবস্থান নিয়ে প্রথম দফায় সড়ক অবরোধ করেন।
এ সময় সড়কে অবস্থানরত পুলিশ সদস্যদের লক্ষ্য করে ‘ভুয়া’, ‘ভুয়া’ বলে স্লোগান দেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। একই সাথে তাদের সমস্বরে ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’ বলে স্লোগান দিতেও দেখা যায়।
প্রায় ২০ মিনিট সড়ক অবরোধ করার পর মিছিলটি আবারো কাজীর মোড়ের দিকে অগ্রসর হয়। কাজীর মোড়ে মিছিলটি পৌঁছানোর পর তাঁদের সাথে যুক্ত হয় উকিল পাড়া এবং ডিগ্রির মোড় হয়ে আসা বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীদের বড় দুইটি অংশ। এরপর সবাই একত্রিত হয়ে কাজীর মোড় সড়কে বসে দ্বিতীয় দফায় আরও ১৫ মিনিট অবরোধ করেন কয়েক হাজার শিক্ষার্থী।
এসময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের সামনে তাঁরা সমস্বরে ‘আমার ভাই কবরে, খুনি কেনো বাহিরে’, ‘জাস্টিস জাস্টিস, উই ওয়ান্ট জাস্টিস’, ‘দিয়েছি তো রক্ত, আরও দেবো রক্ত’, ‘জ্বালোরে জ্বালো, আগুন জ্বালো’-সহ সরকারবিরোধী নানা স্লোগান দিতে থাকেন। এ সময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা কোনো প্রতিক্রিয়া দেখাননি।
পরে সেখান থেকে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে শিক্ষার্থীরা শহরের মুক্তির মোড় হয়ে বাটার মোড়ের দিকে রওয়ানা হলে শুরু হয় গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি। তবে বৃষ্টিকে উপেক্ষা করেই আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা সামনে এগোতে থাকে।
দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে মিছিলটি সরিষাহাটির মোড়ে জেলা আওয়ামীলীগের দলীয় কার্যালয়ের সামনে পৌঁছালে ভেতর থেকে শিক্ষার্থীদের লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছোঁড়েন আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা।
শিক্ষার্থীরাও পাল্টা জবাবে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছুঁড়তে শুরু করেন। এসময় ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা ভাঙচুর করেন জেলা আওয়ামীলীগের দলীয় কার্যালয়। এরপরই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে শিক্ষার্থীদের ছত্রভঙ্গ করতে টিয়ারশেল ও র্যাবার বুলেট ছোঁড়ে পুলিশ।
এ সময় সংঘর্ষে আহত হয়েছেন জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) গাজিউর রহমান, অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজের কন্ট্রিবিউটিং প্রতিনিধি মনিরুল ইসলাম শামীমসহ অন্তত ১৮ জন।
সংঘর্ষের পর শিক্ষার্থীরা আবারো জমায়েত হয়ে মুক্তির মোড়ে অবস্থান নিয়ে সেখানে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন। এ সময় শিক্ষার্থীরা রাস্তার ওপর বসে প্রায় এক ঘন্টা সড়ক অবরোধ করে রাখেন। দুপুর দেড়টার দিকে পরবর্তী দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করে নিজ নিজ গন্তব্যে ফিরে যান শিক্ষার্থীরা।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নওগাঁয় নেতৃত্ব দেওয়া ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী আরমান হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, বেলা সাড়ে ১১টার পর আমরা শান্তিপূর্ণভাবে নিজেদের কর্মসূচি পালন করছিলাম। অথচ প্রশাসনের সামনেই আমাদের কর্মসূচিতে হামলা চালিয়েছে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা।
এতে আমাদের বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। যখন আহত শিক্ষার্থীদের চিকিৎসা দিতে আমরা ব্যস্ত, ঠিক সেই মুহুর্তে হেলমেট পরে প্রকাশ্যে অস্ত্র হাতে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা পুরো শহরে ধ্বংসযজ্ঞ চালাচ্ছে। অথচ প্রশাসন নীরব ভূমিকায় আছে। যতক্ষণ পর্যন্ত আমাদের ভাই-বোনদের হত্যাকারীদের বিচার না হচ্ছে, এই কর্মসূচি চলবে।
নওগাঁ জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (অতিরিক্ত দায়িত্ব) ডা. আবু আনছার আলী ঢাকা পোস্টকে বলেন, সংঘর্ষের ঘটনায় আহত হয়ে দুপুর ২টা পর্যন্ত ১৮জন রোগী হাসপাতালে এসেছেন। দুইজন র্যাবার বুলেটে আঘাতপ্রাপ্ত ছিলেন। বাকীদের বেশিরভাগই মাথায় ইটের আঘাত লেগে আহত হয়েছেন। র্যাবার বুলেটে আহত একজনের অবস্থা গুরুতর হওয়ায় তাকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়েছে। দুইজনকে ভর্তি রেখে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। বাকীরা চিকিৎসা নিয়ে চলে গেছেন।
নওগাঁর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) গাজিউর রহমান বলেন, মিছিলের শুরু থেকেই পুলিশ সহনশীল আচরণ করেছে। শিক্ষার্থীদের যাতে কোনো ক্ষতি না হয় সেজন্য তাদেরকে নিরাপত্তা দিয়ে যাচ্ছিল পুলিশ।
তবে মিছিলটি আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয়ের কাছে পৌঁছালে মিছিল থেকে কিছু দুষ্কৃতিকারী আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছোঁড়ে। এরপরই উত্তেজনাকর পরিস্থিতি তৈরি হয়। ইটের আঘাতে আমি নিজেও হাতে গুরুতর আঘাত পেয়েছি। পরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ৫ রাউন্ড র্যাবার বুলেট ও টিয়ারশেল ছোঁড়া হয়। বর্তমানে পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে।
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post