যুক্তরাজ্যের সাউথপোর্টে ছুরি হামলার ঘটনার পর দেশটির বিভিন্ন অংশে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে। এসব বিক্ষোভ থেকে শতাধিক গ্রেফতার করা হয়েছে। খবর বিবিসির।
প্রতিবেদন মতে, বুধবার (৩১ জুলাই) সন্ধ্যায় মধ্য লন্ডনে বিক্ষোভকালে ১০ নং ডাউনিং স্ট্রিটের কাছেই হোয়াইটহলে পুলিশ ও বিক্ষোভকারীদের মধ্যে সংঘর্ষ ঘটে। এ সময় শতাধিক মানুষ গ্রেফতার করা হয়।
হার্টলপুল এলাকাতেও বিক্ষোভ ও সংঘর্ষ হয়। এতে কয়েকজন পুলিশ আহত হয়। পুলিশের একটা গাড়িও জ্বালিয়ে দেয়া হয়। এখান থেকে আরও অন্তত ৮ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
পরিস্থিতি মোকাবিলায় আজ বৃহস্পতিবার (১ আগস্ট) প্রধানমন্ত্রী কেয়ার স্টারমারের সিনিয়র পুলিশ কর্মকর্তাদের সাথে বৈঠকে বসার কথা রয়েছে।
গত সোমবার (২৯ জুলাই) স্থানীয় সময় বেলা ১১টার দিকে মার্সিসাইড জেলার সাউথপোর্ট শহরে শিশুদের নাচের কর্মশালায় ছুরি হামলার ঘটনা ঘটে। হামলা করে ১৭ বছর বয়সী এক তরুণ।
আকস্মিক ওই হামলায় ঘটনাস্থলেই নিহত হয় এলিস ডি’সিলভা আগুইয়ার (৯) ও এলসি ডট স্ট্যানকম্ব (৭) নামের দুই শিশু। এছাড়া গুরুতর আহত অবস্থায় হাসপাতালে নেয়ার পর মারা যায় বেবি কিং (৬) নামে আরও এক শিশু। আরও ৮ শিশু গুরুতর আহত হয়। এর মধ্যে পাঁচজনের অবস্থা মারাত্মক।
হামলার পরপরই ওই তরুণকে গ্রেফতার করা হয়। বৃহস্পতিবার তার বিরুদ্ধে হত্যা হত্যা, হত্যাচেষ্টা ও ধারালো বস্তু রাখার অভিযোগে মামলা দায়ের করা হয়েছে। তবে বয়স আঠার বছরের কম হওয়ায় তার নাম-পরিচয় প্রকাশ করেনি পুলিশ।
মার্সিসাইড পুলিশ নিশ্চিত করেছে যে, ওই তরুণ কার্ডিফে রুয়ান্ডার পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। ইসলামের সাথে তার কোনো যোগসূত্র নেই। এই হামলাটিকে সন্ত্রাস-সম্পর্কিত হিসাবে তদন্ত করা হচ্ছে না।
ঘটনার পরদিন মঙ্গলবার (৩০ জুলাই) থেকে সাউথপোর্ট শহরে বিক্ষোভ শুরু হয়। বিক্ষোভের সময় সাউথপোর্টের একটি মসজিদ ভাঙচুর করে বিক্ষোভকারীরা, মসজিদের কাছাকাছি দোকানগুলোতেও লুটপাট চালায়। যুক্তরাজ্যের উগ্র ডানপন্থি রাজনৈতিক দল ইংলিশ ডিফেন্স লীগ এ বিক্ষোভের নেতৃত্ব দেয়।
এ সময় বিক্ষোভকারীদের ছোড়া ইট-পাটকেলে সাউথপোর্টে আহত হন ৩৯ জন পুলিশ-কর্মকর্তা ও সদস্য। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, বিক্ষোভকারীদের সবাই সাউথপোর্টের বাসিন্দা নন। আশপাশের বিভিন্ন এলাকা থেকে সেখানে গিয়েছিলেন তারা। তবে মঙ্গলবার দিনব্যাপী বিক্ষোভ চলার পর সন্ধ্যার দিকে খানিকটা শান্ত হয় সাউথপোর্টের পরিস্থিতি।
কিন্তু বুধবার আবারও বিক্ষোভ শুরু হয় এবং তা ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে। বিবিসির প্রতিবেদন মতে, লন্ডনে বিক্ষোভকারীদের ডাউনিং স্ট্রিটের গেটের দিকে এবং উইনস্টন চার্চিলের একটি মূর্তির দিকে আগুনের শিখা ছুড়ে মারতে দেখা গেছে।
বিক্ষোভকারীদেরকে ‘নৌকা বন্ধ করুন’ ও ‘আমাদের বাচ্চাদের বাঁচান’ এর মতো অভিবাসনবিরোধী স্লোগান দিতে শোনা যায়। বিক্ষোভকারীরা পুলিশ অফিসারদের দিকে বোতল ও ক্যান ছুড়ে মারে। পুলিশ বলেছে, প্রতিবাদের শর্তাবলী লঙ্ঘন করা হয়েছে।
বুধবার লন্ডনের বিভিন্ন এলাকায় বিক্ষোভকারী ও পুলিশের মধ্যকার সংঘর্ষে আহত হয়েছেন ৫৩ জন পুলিশ সদস্য। সাউথপোর্ট পুলিশের মুখপাত্র ও হেড কনস্টেবল সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘অস্থিতিশীলতার এই চিত্র দেখে আমি হতবাক ও বিমর্ষ। বিক্ষোভকারীরা যেভাবে আমাদের পুলিশ কর্মকর্তা ও সদস্যদের ওপর হামলা করছেন- আমার দীর্ঘ ক্যারিয়ারে এমন অবস্থা আমি দেখিনি।’
যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কেয়ার স্টারমার এক বিবৃতিতে বলেছেন, উদ্ভূত পরিস্থিতিকে ঘিরে ফায়দা লোটার চেষ্টায় রয়েছে উগ্রবাদীরা। তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ পদক্ষেপ নেয়া হবে। সেই সঙ্গে জনগণকে শান্ত থাকার আহ্বানও জানিয়েছেন তিনি।
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post