বিশ্বের ১৭২ দেশে সোয়া কোটির বেশি প্রবাসী বাংলাদেশি আছেন। যাদের সেবা দিতে ৫৮ টি দেশে ৭৭ টি মিশন কাজ করছে। যে রেমিট্যান্স যোদ্ধাদের শ্রম আর ঘামের যুদ্ধে করোনার মধ্যেও বাংলাদেশের অর্থনীতি শক্তিশালী অবস্থানে, সেই রেমিট্যান্স যোদ্ধাদের সেবায় বিদেশের মাটিতে বাংলাদেশি দূতাবাসগুলো কেমন ভূমিকা রাখে?
প্রবাসীদের অভিযোগ, দূতাবাসে সেবার বদলে নানারকম হয়রানি মেলে। মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা হয়ে আছে দালাল চক্রের দৌরাত্ম। তবে দূতাবাসের হয়রানি বন্ধে ইতিমধ্যেই কাজ শুরু করেছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
রেকর্ড ভেঙে একের পর এক নতুন রেকর্ড গড়েই চলেছে রেমিট্যান্স। করোনা মহামারিতেও গেল বছরের চেয়ে ৪১ শতাংশ বেশি টাকা পাঠিয়েছেন প্রবাসী শ্রমিকরা। বিদেশের মাটিতে কর্মীদের রাষ্ট্রীয় অভিভাবক সে দেশে থাকা বাংলাদেশি দূতাবাস।
বাংলাদেশি নাগরিকদের সেবা দেয়ার পাশাপাশি সে দেশের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক জোরদার, শিল্প-বাণিজ্যে সহায়তা তাদের মূল দায়িত্ব। কিন্তু সেবার মান নিয়ে অসন্তোষ রয়েছে প্রবাসীদের।
সলিমুল্লাহ নামে ওমানের এক প্রবাসী জানান, “দূতাবাসের অনিয়ম নিয়ে কথা বলার কারণে আমাকে ওমান থেকে দেশে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। প্রথমে আমার বিরুদ্ধে ওমান সিআইডি অফিসে মিথ্যা অভিযোগ দিয়ে আমার পাসপোর্ট জব্দ করে, এরপর আমার মালিককে নানাভাবে চাপ প্রয়োগ করে তারা আমাকে ওমান থেকে বের করে দেয়।”
সলিমুল্লাহ দীর্ঘদিন সপরিবারে ওমানে ছিলেন এবং ব্যবসা বাণিজ্য করে বেশ ভালো রেমিট্যান্স পাঠাতেন দেশে। অথচ হঠাত তাকে দেশে পাঠিয়ে দেওয়ায় বর্তমানে তিনি অর্থনৈতিকভাবে খুবই মানবেতর জীবন পার করছেন।
গত কয়েকমাসে ওমান থেকে একাধিক প্রবাসীকে বিভিন্ন অজুহাতে দেশে পাঠিয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে ওমানে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসের বিরুদ্ধে। ওমানে বর্তমানে রয়েছেন এমন অনেককে চাপের মধ্যে রেখেছে দূতাবাস। নিজেদের ব্যবসা বাণিজ্যের কথা চিন্তা করে তারাও নিশ্চুপ হয়ে দূতাবাসের অনিয়মের বিরুদ্ধে এখন আর মুখ খুলেন না।
ভুক্তভোগী সলিমুল্লাহ’র লিখিত অভিযোগ
দূতাবাসের সেবা নিতে অনৈতিক ঘুষ লেনদেন, ক্ষমতার অপব্যবহার, বাংলাদেশ থেকে পালিয়ে ওমান যাওয়া দাগী অপরাধীদের সাথে দূতাবাসের কিছু কর্মকর্তা কর্মচারীর সম্পর্ক সহ নানা অভিযোগ উঠে এসেছে।
সেইসাথে পাসপোর্ট ভোগান্তি এবং দালালের মাধ্যমে হয়রানি তো রয়েছেই। প্রবাসীদের এইসব অভিযোগের বিষয়ে কথা বলতে ওমানে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসে যোগাযোগের চেষ্টা করেও কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
চাকরির পাশাপাশি অনেক প্রবাসীই ব্যবসা করতে চান। করতে চান বাংলাদেশি বিভিন্ন পণ্যের ব্র্যান্ডিং। কিন্তু অন্যান্য দেশের দূতাবাসের মত বাংলাদেশের দূতাবাসের সহযোগিতা না পাওয়ার অভিযোগ তাদের।
ওমান ছাড়াও সৌদি আরবে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাস এবং মালয়েশিয়া দূতাবাসের বিরুদ্ধেও প্রবাসীদের রয়েছে নানা অভিযোগ। মালয়েশিয়ায় ব্যবসা করা এক প্রবাসী বাংলাদেশি বলেন, আমরা যারা বাংলাদেশি ও মালয়েশিয়ার সঙ্গে এক্সপোর্ট ও ইমপোর্টের ব্যবসার সঙ্গে জড়িত, কোন ধরনের সাহায্য ও সহযোগিতার জন্য গেলে নানা ধরনের হয়রানির শিকার হই।
প্রবাসী শ্রমিকদের নিয়ে কাজ করা সংগঠন-রামরুর জরিপ বলছে, ১৯ ভাগ মানুষ বিদেশে যাওয়ার আগে প্রতারিত হন। বিদেশে যাওয়ার পর প্রতারণার শিকার হন ৩১ ভাগ। সরকারি বেসরকারি মাধ্যমে প্রতি বছর যান ২০ লাখের মতো। অনেকেই ফিরেও আসেন নানা জটিলতায়।
আরো পড়ুনঃ ওমান সুপ্রিম কমিটির জরুরী বৈঠক
রামরুর পরিচালক মেরিনা সুলতান বলেন, প্রবাসীরা দেশের জন্য যে অবদান রাখছে তার ভিত্তিতে তাদেরকে মূল্যায়ন করার সময় এসেছে। দূতাবাসের সেবার মান বাড়াতে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে বলে জানান পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম।
তিনি বলেন, কিছু জায়গায় আমরা অভিযোগ পেয়েছি। দূতাবাস কেন্দ্রিক কিছু চক্র গড়ে ওঠে। এর আগে তাদের বিরুদ্ধে আমরা কঠোর ব্যবস্থা নিয়েছি। গত কয়েক বছর আমরা দেখেছি। আমাদের এ কাজগুলো অব্যাহত থাকবে।
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post