দেশত্যাগের আগে ৮ দিনে কমিউনিটি ব্যাংক ও সোনালী ব্যাংক থেকে ১২ কোটি ৭৩ লাখ টাকা তুলেছেন সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদ ও তার পরিবারের সদস্যরা। হাইকোর্টের জন্য তৈরি দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) অগ্রগতি প্রতিবেদনে এ তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে।
সোমবার বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি কাজী ইবাদত হোসেনের হাইকোর্ট বেঞ্চে এ প্রতিবেদন দাখিল করার কথা রয়েছে দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খানের।
দুদক গত ২২ এপ্রিল বেনজীর আহমেদ ও তার পরিবারের দেশে-বিদেশে সম্পদের অনুসন্ধান শুরু করে। এই অনুসন্ধানে দেখা গেছে, গত ২৩ থেকে ৩০ এপ্রিল ৮ দিনে কমিউনিটি ব্যাংক ও সোনালী ব্যাংক থেকে ১২ কোটি ৭৩ লাখ টাকা তোলেন বেনজীর ও তার পরিবারের সদস্যরা।
বেনজীর আহমেদ, তার স্ত্রী জীশান মীর্জা, মেয়ে ফারহীন রিশতা বিনতে বেনজীর, মিজ তাহসীন রাইসা বিনতে বেনজীর ও যাহরা যারীন বিনতে বেনজীর গত ৩ মে পর্যন্ত দেশে ছিলেন। পরদিন তারা সিঙ্গাপুর চলে যান।
দুদকের অগ্রগতি প্রতিবেদনে বলা হয়, বেনজীর ও তার পরিবারের সদস্যদের নামে ১১৬টি ব্যাংক হিসাবে কোটি কোটি টাকা লেনদেনের তথ্য পাওয়া যায়। এর মধ্যে অনেক অস্বাভাবিক লেনদেনের তথ্যও রয়েছে। ব্যাংক হিসাবগুলোর মধ্যে চলতি, সঞ্চয়ী, স্থায়ী আমানত, বৈদেশিক মুদ্রার হিসাব রয়েছে।
অনুসন্ধানে কমিউনিটি ব্যাংকের কর্পোরেট শাখায় বেনজীর ও তার পরিবারের সদস্যদের হিসাব পর্যালোচনা করা হয়। এতে দেখা গেছে, দুদক অনুসন্ধান শুরুর পরদিন থেকে দ্রুত ঐসব হিসাব থেকে বিপুল পরিমাণ টাকা উত্তোলন করা হয়েছে। কমিউনিটি ব্যাংক ও সোনালী ব্যাংকে চলতি হিসাব থেকে গত ২৩ থেকে ৩০ এপ্রিল আট দিনে ১২ কোটি ৭৩ লাখ ৭৮ হাজার ৯৬৮ টাকা তুলেছেন বেনজীর ও তার পরিবারের সদস্যরা।
এর মধ্যে কমিউনিটি ব্যাংক কর্পোরেট শাখার তিনটি হিসাব থেকে ২৩ থেকে ২৯ এপ্রিল সময়ে ৬ কোটি ৫২ লাখ ৭৮ হাজার ৯৬৮ টাকা তোলা হয়। এই ব্যাংকে বেনজীর আহমেদের একটি, তার স্ত্রীর একটি ও বড় মেয়ের একটি হিসাব থেকে এই টাকা তুলে নেয়া হয়।
এছাড়া সোনালী ব্যাংকের স্থানীয় শাখা থেকে সাউদার্ন বিজনেস ইনিশিয়েটিভের চলতি হিসাব থেকে ২৯ এপ্রিল ৩ কোটি ও ৩০ এপ্রিল ৩ কোটি ৭ লাখ টাকা উত্তোলন করা হয়। বেনজীরের মালিকানাধীন সাভানা ফার্ম প্রডাক্টসের চলতি হিসাব থেকেও ৩০ এপ্রিল তোলা হয় ১৪ লাখ টাকা।
দুদকের অনুসন্ধান অনুযায়ী, ঢাকা জেলা, ঢাকা মহানগর, নারায়ণগঞ্জ, গোপালগঞ্জ, মাদারীপুর, গাজীপুর, কক্সবাজার, খুলনায় বেনজীর আহমেদ, তার স্ত্রী ও তিন মেয়ের নামে জমি, বাড়ি, ফ্ল্যাট, প্লট, রিসোর্ট ও বাংলো রয়েছে। দুদকের অনুসন্ধান কর্মকর্তার আবেদনে ঢাকা মহানগর সিনিয়র স্পেশাল জজ চার দফায় তাদের ৪৩ কোটি ৪৬ লাখ ৭২ হাজার ১৫২ টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ জব্দ ও অবরুদ্ধের আদেশ দিয়েছেন।
অগ্রগতি প্রতিবেদনে বলা হয়, বেনজীর আহমেদ চাকরিজীবনে বেতন-ভাতা বাবদ ১ কোটি ৮৪ লাখ ৮৯ হাজার টাকা আয় করেছেন। কিন্তু চাকরিকালে ক্ষমতার অপব্যবহার, অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে হাজার কোটি টাকার মালিক হয়েছেন।
বেনজীর ও তার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ অনুসন্ধান করছে দুদকের একটি বিশেষ টিম। দুদক প্রধান কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মো. হাফিজুল ইসলামের নেতৃত্বে টিমের অন্য দুই সদস্য হলেন- সহকারী পরিচালক মুহাম্মদ জয়নাল আবেদীন ও মোহাম্মদ নেয়ামুল আহসান গাজী। এ অনুসন্ধান তদারক করছেন দুদক পরিচালক (মানি লন্ডারিং) গোলাম শাহরিয়ার চৌধুরী।
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post