রাজধানীর মগবাজারের একটি মেসে থাকেন বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া শিক্ষার্থী মহিবুল আলম। ঐ মেসে তার সঙ্গে আরও সাত/আট জন থাকেন। শনিবার রাত ১০ টার দিকে পুলিশ ঐ বাড়ি ঘেরাও করে। তারা মেসে অভিযান চালিয়ে সবাইকে আটক করে নিয়ে যায় রমনা থানায়। মহিবুল আলম পুলিশকে তার নিজের পরিচয় দিলেও পুলিশ কর্ণপাত করেনি।
মুহিবুল আলম একজন বীর মুক্তিযোদ্ধার নাতি। এরপর পরিবারের সদস্যরা থানায় গিয়ে বীর মুক্তিযোদ্ধার পরিবারের সদস্যকে এভাবে আটক করার কারণ জানতে চায়। রাতভর রমনা থানায় মুহিবুল আলমকে আটক রাখার পর রবিবার দুপুরে মুচলেকা দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয় তাকে।
রমনা ছাড়াও শনিবার রাতে ঢাকার শাহবাগ, কলাবাগান, তেজগাঁও, বাড্ডা, মিরপুর, শাহ আলী, কাফরুল, লালবাগ, হাজারীবাগ, রামপুরা, খিলগাঁও, উত্তরা পূর্ব ও উত্তরা পশ্চিম থানায় হাজতখানায় শত শত ব্যক্তি আটক করা ছিল।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ বলছে, কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে সহিংসতায় বিএনপি-জামায়াত-ছাত্রদল-ছাত্রশিবিরের নাশকতামূলক কর্মকাণ্ডে যারা জড়িত রয়েছে, তাদেরকে গ্রেপ্তারের অভিযান চলছে। পুলিশ বাসাবাড়ি, মেস ও আবাসিক হোটেলে ব্লক রেইড দিচ্ছে। এই ব্লক রেইডে রাজধানী জুড়ে চালানো হচ্ছে।
ব্লক রেইডে পুলিশের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তার বাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছে। অনেক নিরীহ ব্যক্তি আটক হচ্ছেন। তাদের কাছ থেকে ঘুষ নেওয়ার জন্য পুলিশ তাদেরকে আটক করছে।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, সহিংসতা চলাকালে অনেক শিক্ষার্থী তাদের বাড়ি যেতে পারেনি। পরিস্থিতির কারণে মেসেই থাকতে হয়েছে। পুলিশ মেসে মেসে তল্লাশি চালানোয় আতঙ্ক বাড়ছে। কখন যে পুলিশ আসে এই আতঙ্কে অনেকে বাসা থেকেই বের হচ্ছেন না।
মোবাইলে সহিংসতার ভিডিও ছবি পেলেই গ্রেপ্তার: মেসে ও বাসাবাড়িতে অভিযানের সময় যাদের মোবাইলে সহিংসতার ভিডিও ও ছবি পাওয়া যাচ্ছে তাদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। কাঁঠালবাগান বাজারের একটি মেসে থাকেন বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানের চাকরিজীবী শফিকুর রহমান। কারফিউ চলাকালে সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ায় তিনি মেসে উঠেছেন।
পুলিশের ব্লক রেইডের বিষয়টি তিনি এভাবেই বলেছেন, ‘গত বুধবার রাতে ঘুমানোর সময় হঠাৎ পুলিশ এসে হাজির। তার কক্ষে আরও তিন জন ছিলেন। পুলিশ তাদেরকে কক্ষে আটকে রেখে পুরো বাড়িতে অভিযান চালায়। এরপর তাদের নাম-ঠিকানা নেয়। পরে প্রত্যেকের মোবাইল ফোন নিয়ে পুলিশ যাচাই-বাছাই করে। মোবাইল ফোনে সম্প্রতি সহিংসতা-নাশকতার ছবি ও ভিডিও পাওয়ায় ঐ তিন জনকে আটক করে নিয়ে যায়।’
মিরপুর এলাকার একটি মেসের শিক্ষার্থী আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, শনিবার রাতে পুলিশ হঠাৎ করে তাদের মেসে অভিযান চালায়। পুলিশ মেসে ঢুকেই প্রত্যেকের মোবাইল ফোন নিয়ে নেয়। মোবাইল ফোন পুলিশ তল্লাশি করে। এসময় প্রত্যেকের নাম পরিচয় ও বাড়ির ঠিকানা নেয়। তবে মোবাইল ফোনে কিছু না পাওয়ায় পুলিশ চলে যায়। যাবার সময় বলে যায় যে, তাদের নাম পরিচয় ও বাড়ির ঠিকানা দিয়ে এলাকায় যাচাই বাছাই করা হবে।
২২৯ মামলায় গ্রেপ্তার ২৭৬৪: ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন শাখার অতিরিক্ত উপ-কমিশনার জানান, গতকাল রবিবার পর্যন্ত রাজধানীতে ২২৯টি মামলায় ২ হাজার ৭৬৪ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এর মধ্যে রবিবার ২২৮ জনকে আটক করা হয়েছে। তাদেরকে কোটা সংস্কার আন্দোলনে সহিংসতায় দায়ের করা বিভিন্ন মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।
এদিকে র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের সিনিয়র সহকারী পরিচালক এএসপি আ ন ম ইমরান খান জানান, সাম্প্রতিক সময়ে নাশকতার অভিযোগে রবিবার পর্যন্ত ঢাকায় ৭৭ জন ও ঢাকার বাইরে ২২৭ জনসহ মোট ৩০৪ জনকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব। তবে গ্রেপ্তারের বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেছেন, চিহ্নিত অপরাধীদের গ্রেপ্তারে দেশের বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চলছে।
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post