প্রতারণার হাত থেকে বাচতে ওমানের নাগরিক এবং প্রবাসীদের সতর্ক করলো দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এক বিবৃতিতে ওমানের কেন্দ্রীয় ব্যাংক (সিবিও) জানিয়েছে, ওমানের লাইসেন্সধারী ব্যাংকের কাছে কোনো ব্যক্তিগত তথ্য প্রকাশের প্রয়োজন নেই।
বিবৃতিতে বলা হয়, ওমানে পরিচালিত সকল লাইসেন্সধারী ব্যাংক বা এক্সচেঞ্জ সংস্থাগুলি বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কল বার্তা প্রেরণ করে গ্রাহকের পাসওয়ার্ড, কার্ড নম্বর বা অ্যাকাউন্ট নম্বর জাতীয় কোনও ব্যাংকিংয়ের তথ্য জানতে চাইলে তাকে কোনো তথ্য দিবেন না।
বা কোনো ফিশিং লিঙ্কে গ্রাহকের ব্যাংকিং তথ্য জানতে অথবা লটারি জাতীয় কোনো লিংকে ক্লিক না করতে বলা হয়েছে। ব্যাংকের অথবা ব্যক্তিগত তথ্য চেয়ে কোনো কল অথবা মেসেজ আসলে তা সাথে সাথে রয়্যাল ওমান পুলিশকে জানানোর জন্য নির্দেশ দিয়েছে সিবিও।
সাইবার বিশেষজ্ঞরা বলছে, অনলাইন প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে যতরকম অপরাধ হয়, তার মধ্যে অর্থনৈতিক অপরাধের সংখ্যা দিন দিন অনেক বাড়ছে। বেশির ভাগ সময়ই ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিরা অভিযোগ জানাতে আসেনা, যে কারণে এসব ঘটনা থেকে যায় আইনি ব্যবস্থার বাইরে।
সাইফুল আলম নামে এক ওমান প্রবাসী বলেন, “১৫-জানুয়ারি দুপুরে আমার কাছে অপরিচিত নম্বর থেকে একটি ফোন আসে। নিজেকে ব্যাংক মাস্কাটের একজন কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে কথা বলেন এক ব্যক্তি। তিনি আমাকে ৫০ হাজার ওমানি রিয়াল লটারি পেয়েছি এমন কথা বলে এই টাকা উঠানোর জন্য ৫০০ রিয়াল দাবী করেন।” আদতে ঐ ব্যক্তি ছিলেন একজন প্রতারক, যিনি ফাঁদে ফেলে সাইফুল আলমের টাকা হাতিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন।
এদিকে আরেক ওমান প্রবাসী ছুটিতে দেশে এসে এই ধরণের অনলাইন প্রতারনার শিকার হয়েছেন। আলমগির নামে এই ওমান প্রবাসী বলেন, একটা নাম্বার থেকে কল দিয়ে নিজেকে ডাচ বাংলা ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন অফিসার পরিচয় দিয়ে আমার সাথে কথা বলে।
সে আমাকে বললো যে ঐদিনের মধ্যেই আমার অ্যাকাউন্ট নতুন করে রেজিস্টার করতে হবে, অন্যথায় একাউন্ট ব্লক হয়ে যাবে, আমি ব্রাঞ্চে গিয়েও এই সমস্যার সমাধান করতে পারবো অথবা চাইলে তাদের সাথে মোবাইলে কথা বলেও সমাধান করা যাবে এমন কথা আমাকে বলা হয়।
আরো পড়ুনঃ প্রবাসীদের ভিসার ফি বাড়ালো ওমান
আমার হাতে সময় ছিল না, তাই তাদের নির্দেশনা মত স্টেপ ফলো করি। প্রসেস যখন শেষ হলো, আমার কাছে মেসেজ আসলো যে আমার অ্যাকাউন্ট থেকে পঞ্চাশ হাজার টাকা অন্য অ্যাকাউন্টে ট্রান্সফার হয়ে গেছে।”
ডাচ বাংলা ব্যাংকের সঙ্গে যোগাযোগ করে তিনি পরে জেনেছেন, ব্যাংকের পক্ষ থেকে এ ধরণের কোন যোগাযোগ করা হয়নি। এর পরে তিনি পুলিশের কাছেও যাননি, কারণ তার মনে হয়েছে তার নিজের বোকামির জন্যই এমনটি হয়েছে।
ওমান সোহারের রহিম উদ্দিন নামে আরেক প্রবাসীর গল্পটি প্রায় একই রকম। লটারীর লোভ দেখিয়ে তাকে ফাঁদে ফেলা হয়েছিল। কিন্তু একেবারে শেষ মূহুর্তে বন্ধুদের হস্তক্ষেপে তিনি বেঁচে যান।
রহিম উদ্দিন বলেন, “আমাকে বলা হয়েছিল, আপনার মোবাইল নম্বরটি বেশ পুরনো, এমন পুরনো নম্বরের মালিকদের আমরা পুরস্কৃত করছি। তার অংশ হিসেবে লটারী, যাতে আপনি টিভি, ফ্রিজ, ওভেন অনেক কিছু জিতে নিতে পারেন। কেবল একশো রিয়াল খরচ করলেই মিলবে এক হাজার রিয়ালের পুরষ্কার। আমি তাদের কথায় কনভিন্সড হয়ে যাচ্ছিলাম টাকা দিতে। কিন্তু বিষয়টি আমার বন্ধুদের জানালে তারা আমাকে নিষেধ করে এবং এইসব প্রতারনার বিষয়ে আমাকে অবগত করে।
আরো পড়ুনঃ ইমো-হোয়াটসঅ্যাপের ভয়ঙ্কর ফাঁদে প্রবাসীরা
আবার অনেক প্রবাসী বিভিন্ন ইমু অথবা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অপরিচিত মানুষের সাথে বন্ধুত্ব করেও প্রতারিত হচ্ছেন। বিশেষকরে ইমুতে নিজেকে মেয়ে পরিচয় দিয়ে একান্ত ভিডিও কলের কথা বলে পরবর্তীতে সেই ভিডিও স্ক্রিন রেকর্ড করে ব্ল্যাকমেইল করা হয়।
সেক্ষেত্রে মোটা অংকের টাকা দাবী করে প্রতারক চক্র, টাকা না দিলে ভিডিও ভাইরাল করার হুমকি দেওয়া হয়। এইসব প্রতারনা থেকে বাঁচতে সবাইকে সতর্ক থাকার অনুরোধ জানিয়েছেন বাংলাদেশ সিভিলিয়ান ফোর্সের সিইও আদিল হাসান।
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post