ধরুন আপনি মধ্যপ্রাচ্য থেকে দেশে ফিরছেন, সঙ্গে পরিবারের জন্য এনেছেন কিছু স্বর্ণালংকার। কিন্তু বিমানবন্দরে আপনি এই স্বর্ণালংকারের জন্যই পরতে পারেন বিরাট ঝামেলায়। কারণ কতটুকু স্বর্ণ বহন করা বৈধ, আর কতটুকু বহন করা অবৈধ, এই তথ্য আপনার জানা না থাকলে বিপদ শুধু নয়, কারাভোগের মতো বড় বিপদেও পড়তে পারেন আপনি।
অনেকসময়ই দেখা যায় পরিবার বা বন্ধুদের জন্য শখ করে কিনে আনা বা নিজের প্রয়োজনীয় কোনো একটি পণ্য আইনি অনুমোদন না থাকায় আটক করেছে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। আবার প্রায় সময়ই দেখা যায় স্বর্ণের বার সহ এয়ারপোর্টে প্রবাসীরা আটক হচ্ছেন।
সম্প্রতি হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে স্বর্ণের বার ও অলংকারসহ এক প্রবাসী আটক। এই প্রবাসী পেটের ভেতরে করে সোনার বার লুকিয়ে আনতে গিয়ে ধরা পড়েন। তাই লোভে পড়ে অন্যের স্বর্ণ বহন না করে জেনেনিন বিদেশ থেকে কতটুকু স্বর্ণ বার ও অলংকার আনতে পারবেন। একজন প্রবাসী বিদেশ থেকে দেশে ফেরার সময় শর্ত সাপেক্ষে একসাথে ২৩৪ গ্রাম স্বর্ণ বার ও ১০০ গ্রাম স্বর্ণালংকার আনতে পারবেন।
স্বর্ণ বার
প্রতি ১১.৬৭ গ্রাম এর জন্য ২০০০ টাকা শুল্ক-কর পরিশোধ করতে হবে। এটি এক গ্রাম আনলেও শুল্ক দিতে হবে। এভাবে শুল্ক পরিশোধ সাপেক্ষে একজন প্রবাসী বৈধভাবে ২৩৪ গ্রাম পর্যন্ত আনতে পারবেন। এর বেশি আনলে কাস্টমস তা আটক করবে।
আটকের রশিদ (Detention Memo) বুঝে নিবেন। আটককৃত স্বর্ণ বার পরবর্তীতে Adjudication প্রক্রিয়ায় আমদানি ও রপ্তানি নিয়ন্ত্রক দপ্তরের ছাড়পত্র উপস্থাপন, শুল্ক-করাদি এবং অর্থদণ্ড পরিশোধ সাপেক্ষে ফেরত পেতে পারেন। আর চোরাচালান বলে মনে হলে কাস্টমস সরাসরি ফৌজদারি মামলা করবে।
অলংকার
একই ধরণের অলংকার নয় এমন অলঙ্কার যদি ১২ টির অধিক না হয় তাহলে ১০০ গ্রাম পর্যন্ত শুল্কমুক্ত হিসেবে আনতে পারবেন। অর্থাৎ একজন প্রবাসী ১০০ গ্রাম পর্যন্ত অলঙ্কার আনতে পারবেন বিদেশ থেকে। এর বেশি আনলে অতিরিক্ত প্রতি গ্রাম এর জন্য প্রায় ১,৫০০ টাকা শুল্ক পরিশোধ করতে হবে।
অর্থাৎ শুল্ক-কর পরিশোধ সাপেক্ষে সর্বোচ্চ ২০০ গ্রাম পর্যন্ত স্বর্ণ বার বা স্বর্ণখণ্ড সঙ্গে আনা যাবে। প্রতি ১১.৬৭ গ্রামে ২ হাজার টাকা শুল্ক-কর পরিশোধ করতে হবে।
বিধিমালায় বলা আছে, যাত্রীর সঙ্গে সোনার বার বা স্বর্ণখণ্ড থাকলে সেটা অবশ্যই যাত্রীকে ঘোষণা করতে হবে। তথ্য গোপন করলে কিংবা স্বর্ণ বার বা খণ্ডের মোট পরিমাণ ২০০ গ্রামের বেশি হলে ওপরে বর্ণিত একই নিয়ম প্রযোজ্য হবে। তবে এই ক্ষেত্রে সাধারণত ২৩৪ গ্রাম পর্যন্ত ডিএম নিয়মের সুযোগ দেওয়া হয়। এর অতিরিক্ত হলে স্মাগলিং-এর দায়ে মামলা হতে পারে।
এখানে একটা বিষয় খেয়াল রাখতে হবে, মধ্যপ্রাচ্যে দুই ধরনের সোনার বার পাওয়া যায়- ১০০ ও ১১৭ গ্রাম প্রতিটি। একাধিক (দুটি) সোনার বার ক্রয়ের ক্ষেত্রে ঝামেলা এড়াতে ১০০ গ্রাম ওজনের সোনার বার কিনলে যাত্রীরা ঝামেলামুক্তভাবে তা বহন করতে পারবেন।
এ ক্ষেত্রে স্বর্ণালংকার ও সোনার বার বা খণ্ডের হিসাব সম্পূর্ণরূপে আলাদা। যেমন, একজন যাত্রী চাইলে ১০০ গ্রাম শুল্কমুক্ত অলংকার এবং ২০০ গ্রাম শুল্কযুক্ত বার বা খণ্ডসহ মোট ৩০০ গ্রাম স্বর্ণ বৈধভাবে আনতে পারেন।
এ ছাড়া বিধিমালার ৭ নম্বর ধারায় গ্রিন চ্যানেল ও রেড চ্যানেল ব্যবহারের বিষয়ে নির্দেশনা দেওয়া আছে। সেখানে বলা হয়েছে, কোনো যাত্রী শুল্ক ও কর আরোপযোগ্য পণ্য বহন না করলে তিনি বিমানবন্দরের গ্রিন চ্যানেল (যদি থাকে) ব্যবহার করতে পারবেন।
এতে আরো বলা আছে, গ্রিন চ্যানেল অতিক্রমকারী সর্বোচ্চ ৫ শতাংশ যাত্রীর ব্যাগেজ দ্বৈবচয়নের ভিত্তিতে শুল্ক কর্মকর্তা কর্তৃক স্ক্যানিং ও পরীক্ষা করা যাবে। তবে কোনো শুল্ক কর্মকর্তা যুক্তিসংগত সন্দেহের বশে গ্রিন চ্যানেল অতিক্রমকারী যে কোনো যাত্রীর ব্যাগেজ স্ক্যানিং ও পরীক্ষা করতে পারবেন।
আরো পড়ুনঃ বিনা শুল্কে প্রবাসীরা যা আনতে পারবেন
বাণিজ্যিক পরিমাণ বলে মনে হলে কাস্টমস তা আটক করবে। আটক রশিদ (detention memo) বুঝে নিবেন। আটককৃত স্বর্ণালংকার পরবর্তীতে Adjudication প্রক্রিয়ায় আমদানি ও রপ্তানি নিয়ন্ত্রক দপ্তরের ছাড়পত্র উপস্থাপন, শুল্ক-করাদি এবং অর্থদণ্ড পরিশোধ সাপেক্ষে ফেরত পেতে পারেন। আর চোরাচালান বলে মনে হলে কাস্টমস সরাসরি ফৌজদারি মামলা করবে।
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post