দেশে কোনো বাড়িতে সন্তান প্রসব করেছে বা নতুন কোনো ব্যবসা প্রতিষ্ঠান-শো রুম উদ্বোধন করা হয়েছে। এমন সংবাদ পেলেই তৎক্ষণাৎ মোটা অঙ্কের ‘বকশিস’ দাবিতে ছুটে যায় হিজড়া বা তৃতীয় লিঙ্গের লোকজন। না পেলে বা আশাতীত না হলে মুহূর্তেই সৃষ্টি করেন অরাজকতা। রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে এমন ঘটনা হরহামেশাই ঘটছে।
এদিকে এমন ঘটনা সামাজিকভাবে যেমন বিব্রত কর, তেমনি অস্বস্তিরও বটে। তাই এসব ঘটনা থেকে পরিত্রাণ পেতে বাড়িওয়ালা, ফ্ল্যাট মালিক, ভাড়াটিয়া, দোকান মালিকসহ সংশ্লিষ্টরা করেছেন বকশিসের চুক্তি!
রাজধানীর বনশ্রী আবাসিক এলাকায় নেয়া হয়েছে এই ব্যবস্থা। সেখানকার কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে এর সত্যতা নিশ্চিত হওয়া গেছে।
যদিও এ বিষয়টি বনশ্রী আবাসিক এলাকা কর্তৃপক্ষ ও ঐ হিজড়া গ্রুপগুলোর কোনো সদস্যই স্বীকার করেননি। তবে বনশ্রী আবাসিক এলাকা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, তারা হিজড়াদের অত্যাচারে অতিষ্ট হয়ে উঠেছেন।
বনশ্রী আবাসিক এলাকা কর্তৃপক্ষ সভা করে ৫টি ক্যাটাগরিতে বকশিস নির্ধারণ করেছে এমন একটি পত্র পাওয়া গেছে। এতে বলা হয়েছে, গত ৮ জুন সোসাইটির কার্যালয়ে ওই এলাকার হিজড়াদের ৪টি গ্রুপ এবং তাদের গ্রুপ প্রধান ময়নার সঙ্গে সোসাইটির কার্যনির্বাহী পরিষদের নেতাদের বিভিন্ন কার্যক্রম ও বকশিস উঠানো বিষয়ে আলোচনা হয়।
পরে উভয় পক্ষের মধ্য আলোচনা শেষে শর্ত সাপেক্ষে ও নির্ধারিত হারে এলাকার বাড়ি/ফ্ল্যাট মালিক, ভাড়াটিয়া এবং দোকাদারদের পক্ষ থেকে হিজড়াদের বকশিস দেওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
চুক্তিতে যা যা রয়েছে:
১. কোনো হিজড়া বনশ্রী আবাসিক এলাকায় বসবাসকারী বাড়িওয়ালা, ফ্ল্যাট মালিক, ভাড়াটিয়া, দোকান মালিক, ব্যবসায়ী, হোটেল মালিক ও ভ্যান দোকানদারের কাছ থেকে সোসাইটি নির্ধারিত বকশিসের বাইরে কারো কাছ থেকে জোর করে নিজেদের ইচ্ছামতো কোনো বকশিস বা চাঁদা তুলতে পারবে না।
২. পত্রে উল্লিখিত ৪ জন হিজড়া ছাড়া অন্য কেউ বনশ্রী আবাসিক এলাকায় (এ থেকে এন-ব্লক পর্যন্ত) বকশিস তুলতে পারবে না।
৩. কাউকে কোনো প্রকার চাপ সৃষ্টি করা, অকথ্য গালিগালাজ করা, অশালিন অঙ্গভঙ্গী প্রকাশ করা, বাজে পরিবেশ সৃষ্টি করা, হাতে তালি দেওয়া অথবা ভয়ভীতি প্রদর্শনসহ কোনো প্রকার ঝগড়া-ঝাটি করতে পারবে না। এ ছাড়া সোসাইটির নিরাপত্তাকর্মীদের সঙ্গে কোনো ধরনের খারাপ ব্যবহার করতে পারবে না। এমন ধরনের কর্মকাণ্ড পরিলক্ষিত হলে তাদের বিরুদ্ধে নেয়া হবে আইনগত ব্যবস্থা।
যেসব খাতে যত টাকা নিতে পারবে হিজড়ারা—
পত্রে বলা হয়েছে, মানবিক দিক বিবেচনা করে খাতওয়ারি বকশিসের হার নির্ধারণ করা হলো। যদি কোন বাড়িওয়ালা, ভাড়াটিয়া, দোকানদারের কাছে নির্ধারিত টাকার চেয়ে বেশি দাবি করেছে— এমন কোনো তথ্য প্রমাণ পাওয়া গেলে তাদের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি মামলাসহ আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। উল্লেখ্য যে, এ সিদ্ধান্ত সোসাইটি যেকোনো সময় পরিবর্তন বা বাতিল করার ক্ষমতা রাখে।
হিজড়ারা বিয়ের অনুষ্ঠান ও কোনো পরিবারে নতুন বাচ্চা জন্মগ্রহণ করলে সেখান থেকে ১০০০ টাকা বকশিস নিতে পারবে, শুধু রমজানে ঈদে বাড়ির মালিক থেকে ২০০ টাকা নিতে পারবে, বনশ্রী আবাসিক এলাকার দোকানদারদের থেকে শুধু রমজান ঈদে ১০০ টাকা এবং দোকান থেকে মাসে একবার (১ থেকে ১০ তারিখের মধ্যে) ৪০ টাকা নিতে পারবে।
এদিকে, বিষয়টি জানতে গ্রুপ প্রধান ময়না হিজড়ার মোবাইল নম্বরে যোগাযোগের চেষ্টা করলেও বন্ধ পাওয়া যায়। তবে সংযোগ পাওয়া যায় তালিকায় দুই নম্বরে হিরা হিজড়ার মোবাইল নম্বরে। সবকিছু শোনার পর তিনি ‘আমি জানি না’ বলে কলটি কেটে দেন।
দক্ষিণ বনশ্রী প্লট মালিক সমিতির সভাপতি ফরিদ উদ্দিন খন্দকার বলেন, হিজড়াদের অত্যাচারে না থাকার মতো অবস্থা আমাদের। আমরা কোনো ফি নির্ধারণ করিনি। আমরা কেন টাকা দেবো তাদের? তারা কি আমাদের কোনো ওয়েল উইশার, যে তাদের আমরা টাকা দেব।
তিনি বলেন, পুলিশ কনভেনশন হলে দুই-তিন থানা মিলে একটি মিটিং হয়েছিল। ঐ মিটিংয়ে আমরা বলেছি, আমাদের অসুবিধার কথা। তাদের ধরে সরাসরি থানায় জানাতে ও কোর্টে চালান করে দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন ডিসি ও ওসিরা।
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post