একজন মুমিনের সবচেয়ে বড় সম্পদ তার ঈমান। কোনো মুসলিমের যদি ঈমান না থাকে তাহলে তার কিছুই নেই। এজন্য একজন মুসলিমকে অবশ্যই ঈমানদার হতে হবে। আর ঈমান কোন কোন কারণে নষ্ট হয় তা জানাও আবশ্যক।
নবী করিম সাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘তোমরা সাতটি ধ্বংসাত্মক জিনিস থেকে বেঁচে থাক। সাহাবায়ে কিরাম জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রসুলসল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! ঐ ধ্বংসাত্মক জিনিসগুলো কি? তিনি জবাবে বললেন, ১. আল্লাহর সঙ্গে শিরক করা, ২. যাদু করা, ৩. অন্যায়ভাবে এমন কোন ব্যক্তিকে হত্যা করা, যাকে আল্লাহ হারাম করেছেন, ৪. সূদ খাওয়া, ৫. ইয়াতীমের ধন-সম্পদ ভক্ষণ করা, ৬. ধর্মযুদ্ধ কালীন সময়ে (রণক্ষেত্র) থেকে পৃষ্ঠ প্রদর্শন করে পলায়ন করা, ৭. সতী-সাধ্বী উদাসীনা মুমিন নারীদের প্রতি মিথ্যা অপবাদ আরোপ করা’। (বুখারি ৬৮৫৭, মুসলিম ৮৯)
হজরত আবু বকর (রা.) হতে বর্ণিত তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ সল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, أَلاَ أُنَبِّئُكُمْ بِأَكْبَرِ الْكَبَائِرِ؟ قُلْنَا بَلَى يَا رَسُوْلَ اللهِ. قَالَ الإِشْرَاكُ بِاللهِوَعُقُوْقُ الْوَالِدَيْنِ ‘আমি কি তোমাদেরকে সবচেয়ে বড় গুনাহ সমূহের কথা বলব না? সাহাবিগণ বললেন, নিশ্চয়ই বলুন, হে আল্লাহর রসুল সল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! রাসুলুল্লাহ সল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তখন বললেন, ‘আল্লাহর সাথে শরীক স্থাপন করা, পিতা-মাতার অবাধ্য হওয়া’। (বুখারি ৬৯৭৬, মুসলিম ৮৭)
হজরত জাবির (রা.) হতে বর্ণিত তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ সল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, مَنْ لَقِىَ اللهَ لاَ يُشْرِكُ بِهِ شَيْئًا دَخَلَ الْجَنَّةَ وَمَنْ لَقِيَهُ يُشْرِكُ بِهِ دَخَلَ النَّارِ ‘যে ব্যক্তি কোন শিরক করা ব্যতীত আল্লাহর সাথে সাক্ষাৎ করবে (মৃত্যুবরণ করবে) সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। আর যে ব্যক্তি শিরক করা অবস্থায় মৃত্যু বরণ করবে সে জাহান্নামে প্রবেশ করবে’। (মুসলিম ৯৩)
আল্লাহ তাআলা নবী করীম সল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকেও শিরক থেকে সতর্কতা অবলম্বন করতে বললেন এভাবে, لَئِنْ أَشْرَكْتَ لَيَحْبَطَنَّ عَمَلُكَ وَلَتَكُوْنَنَّ مِنَ الْخَاسِرِيْنَ ‘যদি তুমি শিরক কর, তবে তোমার সমস্ত আমল অবশ্যই বাতিল হয়ে যাবে এবং নিশ্চিত ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হবে’ (সুরা যুমার ৬৫)।
হজরত আবু হুরায়রাহ (রা.) হতে বর্ণিত তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ সল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, আল্লাহ তাআলা বলেন, مَنْ عَمِلَ عَمَلاً أَشْرَكَ فِيْهِ مَعِىْ غَيْرِىْ تَرَكْتُهُ وَشِرْكَهُ ‘যে ব্যক্তি এমন আমল করে যে আমলে আমার সাথে অন্যকে শরীক করেছে, এমন আমল ও যাকে সে শরীক স্থাপন করেছে, আমি উভয়ই প্রত্যাখ্যান করি। (মুসলিম৭৬৬৬; মিশকাত ৫৩১৫)
ঈমান নষ্ট হওয়ার দশ কারণ
১. الشرك في عبادة الله তথা আল্লাহর ইবাদতে শরিক বা অংশীদার স্থাপন করা।
২. যে ব্যক্তি আল্লাহ এবং বান্দার মাঝে কাউকে মাধ্যম তৈরি করে তাদেরকে ডাকে এবং তাদের নিকট শাফাআত কামনা করে।
৩. যদি কোন মুসলিম ব্যক্তি মুশরিকদেরকে কাফির মনে না করে অথবা তাদের কুফরির ব্যাপারে সন্দেহ পোষণ করে অথবা তাদের মতবাদসমূহ সঠিক মনে করে।
৪. যদি কোন মুসলিম নবী করিম সল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দেখানো পথ ব্যতীত অন্য কোন পথ পরিপূর্ণ অথবা ইসলামি হুকুমাত বা বিধান ব্যতীত অন্য কারো তৈরি হুকুমাত উত্তম মনে করে, তবে সে ইসলাম থেকে খারিজ হয়ে যাবে।
৫. যদি কোন মুসলমান আল্লাহর নবী সল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আনিত বিধানের কোন অংশকে অপছন্দ করে তবে সে ইসলাম থেকে খারিজ হয়ে যাবে, যদিও সে ঐ বিষয়ে আমল করে।
৬. যদি কোন মুসলিম মুহাম্মাদ সল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আনিত ধর্মের কোন বিষয়ে অথবা ধর্মীয় ছওয়াব বা শাস্তির ব্যাপারে ঠাট্টা-বিদ্রূপ করে তবে সেও কাফির হয়ে যাবে।
৭. যদি কেউ যাদুর মাধ্যমে ভাল কিছু অর্জন বা মন্দ কিছু বর্জন করতে চায় অথবা স্বামী-স্ত্রীর মাঝে সম্পর্ক স্থাপন বা ভাঙ্গন ধরাতে গোপন, প্রকাশ্য, মন্ত্র-তন্ত্র করতে চায় অথবা কারো সাথে (ছেলে-মেয়ে) সম্পর্ক স্থাপন বা বন্ধুত্বে ফাঁটল ধরাতে চায়।
৮. মুসলমানদের বিরুদ্ধে মুশরিকদেরকে সাহায্য-সহযোগিতা করা।
৯. যে ব্যক্তি মনে করে মুহাম্মাদ সল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের শরিয়ত ব্যতীত অন্য কোন ধর্মে জীবন পরিচালনা করলেও জান্নাত পাওয়া যাবে বা আল্লাহর সন্তুষ্টি পাওয়া সম্ভব, সে ব্যক্তি কাফির হয়ে যাবে।
১০. আল্লাহ মনোনীত দীন ইসলাম থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়াও ঈমান হারানোর অন্যতম ও প্রধান কারণ।
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post