রাজধানীর সবচেয়ে ব্যস্ত হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর গোলচত্বরে দেশের বৃহত্তম আন্ডারপাস নির্মাণের কাজ দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলছে। আগামী বছরের মধ্যে নির্মাণকাজ সম্পন্নের লক্ষ্য নিয়ে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ২৪ ইঞ্জিনিয়ার কনস্ট্রাকশন ব্রিগেড এবং সড়ক ও জনপথ অধিদফতর যৌথভাবে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে।
এই প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে বিমানবন্দরের সামনের নিত্যদিনের বিপজ্জনক ঝঞ্জাট দূর হবে। যানজটের দৌরাত্ম্যে ফ্লাইট মিস হবে না যাত্রীদের। ওপরে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে ও নিচে আন্ডারপাশ দিয়ে দ্রুত বিমানবন্দরে পৌঁছাতে ও বেরোতে পারবেন যাত্রীরা।
বিমানযাত্রীদের ঢাকা এয়ারপোর্টের কাছাকাছি পৌঁছলেই সরাসরি আন্ডারপাসে যেতে হবে। আবার বিদেশ থেকে এলেও বেরোতে হবে আন্ডারপাস দিয়ে। এয়ারপোর্ট থেকে বের হয়ে সরাসরি আন্ডারপাস দিয়েই চলে যাওয়া যাবে রেলস্টেশন, হজ ক্যাম্প, বিআরটি, এমআরটি স্টেশন ও এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে। আন্ডারপাস দিয়েই চলাচল করতে হবে ওই এলাকায়।
যানজটের দুঃসহ যন্ত্রণা আর কখনোই যাত্রীদের ভোগাবে না। এমনই অত্যাধুনিক ও সহজ যাত্রার নিশ্চয়তা নিয়ে দেশের বৃহত্তম আন্ডারপাস তৈরি হচ্ছে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের গোল চত্বরে। এটি বিমানবন্দর রেলস্টেশন, এমআরটি, বিআরটি, কাওলায় এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে ও নবনির্মিত তৃতীয় টার্মিনালকে একসঙ্গে সংযুক্ত করবে।
এই আন্ডারপাস নির্মাণ শেষ হলে ওই এলাকায় যানজটের ভোগান্তির অবসান ঘটবে। বিদেশফেরত ও বিদেশগামী যাত্রীরা হেঁটেই আন্ডারপাস ব্যবহার করে সহজে গন্তব্যে পৌঁছতে পারবেন। হজযাত্রীরা হজক্যাম্প থেকে সহজে বিমানবন্দরে যেতে পারবেন। আবার যাত্রীরা রেলস্টেশনেও পৌঁছতে পারবেন কোনো ঝক্কিঝামেলা ছাড়াই। ব্যক্তিগত গাড়ি ব্যবহারকারীরা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে দিয়ে বিমানবন্দরে ঢুকতে বা বেরোতে পাবেন। এমন সহজ ও নিরাপদ যাত্রার আন্ডারপাস নির্মাণকাজ শুরু হয়েছে বিমানবন্দর এলাকায়।
হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর পথচারী আন্ডারপাস নির্মাণ প্রকল্পের পরিচালক সড়ক ও জনপথ বিভাগের প্রকৌশলী মুহাম্মদ সাইফউদ্দিন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, প্রকল্পের মূল কাজটি করছে সেনাবাহিনীর ২৪ ইঞ্জিনিয়ার কনস্ট্রাকশন ব্রিগেড। গত ডিসেম্বরে আন্ডারপাসের কাজ শুরু হয়েছে। প্রকল্প এলাকায় বর্তমানে পুরোদমে কাজ চলছে।
প্রকল্প প্রস্তাবনায় জানা গেছে, আন্ডারপাস নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে ১ হাজার ১৮৩ কোটি ৯৬ লাখ ৯৪ হাজার টাকা। এর মধ্যে ১ দশমিক ৭ কিলোমিটার টানেল নির্মাণে সর্বাধিক ৫৮৪ কোটি ৫৯ লাখ টাকা এবং মাটি কাটা ও সেগুলো শক্তিশালী করতে ২২৭ কোটি ৮৫ লাখ টাকা ব্যয় করা হবে। এর পুরোটাই সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে মেটানো হবে। সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়, সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ প্রকল্পটি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ২৪ ইঞ্জিনিয়ার কনস্ট্রাকশন ব্রিগেডের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করছে।
সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, ২০১৮ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শাহজালাল বিমানবন্দর থেকে বিমানবন্দর রেলওয়ে স্টেশন পর্যন্ত আন্ডারপাস নির্মাণের নির্দেশনা দেন। ২০১৯ সালের ২০ ফেব্রুয়ারিতে সড়ক যোগাযোগ ও সেতু মন্ত্রণালয় পথচারী আন্ডারপাস অ্যালাইনমেন্ট চূড়ান্ত করতে একটি কমিটি গঠন করে। কমিটি পুনরায় পরিদর্শন করে ২০১৯ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি অ্যালাইনমেন্ট চূড়ান্ত করে। ২০১৯ সালের মার্চে বেসামরিক বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয় আন্ডারপাস নির্মাণের জন্য ভূমি ব্যবহারের অনুমোদন দেয়।
গত বছর আন্ডারপাসের নকশা প্রধানমন্ত্রীর সামনে উপস্থাপন করা হলে তিনি তাতে সম্মতি জানান। জানা গেছে, বর্তমানে ঘণ্টায় সর্বোচ্চ প্রায় ১৪ হাজার ৭৭৭ জন পথচারী ও যাত্রী এয়ারপোর্ট গোলচত্বরের একটি মাত্র ফুটওভার ব্রিজ দিয়ে এই মহাসড়ক পারাপার হন। ডিপিপিতে আরও বলা হয়েছে, প্রস্তাবিত এলাকায় নতুন রেলওয়ে ট্র্যাক সম্প্রসারণের কাজ চলছে। খুব শিগগিরই এর সঙ্গে যুক্ত হবে বিআরটি বাস সুবিধা।
এ ছাড়া এমআরটি ১-এর বাস্তবায়ন হলে এ এলাকায় যাত্রী চাপ বাড়বে। এসব প্রকল্পের বাস্তবায়ন কাজ শেষ হলে প্রতিদিন প্রায় ৩ লাখ ৬০ হাজার যাত্রী এ এলাকায় চলাচল করবে। এর একটি বড় অংশ আন্ডারপাসের সুবিধা নেবে।
প্রকল্প সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানিয়েছে, দুই বছরের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ করা হবে। এই আন্ডারপাসে ৯টি প্রবেশ ও বহির্গমন পথ থাকবে। এগুলো হচ্ছে- হজক্যাম্প, আশকোনা, বিমানবন্দর রেলওয়ে (বিআরটি) স্টেশন, হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর টার্মিনাল-১, ২ ও ৩, বিমানবন্দর উত্তর গেট, দক্ষিণ গেট ও এমআরটি স্টেশন। আন্ডারপাস ব্যবহার করে হজক্যাম্প থেকে সরাসরি বিমানবন্দরের টার্মিনালে যাওয়া যাবে। আবার বিমানবন্দর টার্মিনাল থেকে সরাসরি এমআরটি স্টেশনে যাওয়া যাবে। যাত্রী ও পথচারীরা এর মাধ্যমে নিরাপদে বাস, বিমানবন্দর ও রেলস্টেশনে পৌঁছাতে পারবেন।
সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় সচিব এ বি এম আমিন উল্লাহ নুরী জানিয়েছেন, দুই বছরের মধ্যে অর্থাৎ ২০২৫ সালের জুনে প্রকল্পের কাজ শেষ করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
তিনি বলেন, বর্তমানে গাজীপুর হয়ে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের সঙ্গে যুক্ত বিমানবন্দর সড়কে প্রতিনিয়ত তীব্র যানজট দেখা যায়। ফুটওভার ব্রিজ অপ্রতুল হওয়ায় বিপুলসংখ্যক যাত্রী ও পথচারী এর নিচ দিয়েই ঝুঁকি নিয়ে রাস্তা পার হওয়ার চেষ্টা করে বলে এ জায়গায় প্রায়ই তীব্র যানজট হয়। ঘটে দুর্ঘটনা। আন্ডারপাসটি তৈরি হলে যানজট ও দুর্ঘটনা কমবে বলে আশা করা হচ্ছে। আন্ডারপাসটি হবে শতভাগ শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত।
এতে থাকবে আটটি লিফট, ২৮টি এসকেলেটর ও ২৫টি ট্রাভেলেটর। প্রকল্প প্রস্তাবে বলা হয়েছে, ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক দেশের ৩২ জেলাকে সংযুক্ত করেছে। ব্যস্ততম এই মহাসড়কের একপাশে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ও বিপরীত পাশে বিমানবন্দর রেলওয়ে স্টেশন।
বাস্তবায়নাধীন বিমানবন্দর টার্মিনাল-৩, এমআরটি লাইন-১, ঢাকা-আশুলিয়া এক্সপ্রেসওয়ে এবং বিআরটি প্রকল্পের চলমান কাজ এখন বিশাল কর্মযজ্ঞে পরিণত হয়েছে। সবগুলো প্রকল্পের অপারেশন শুরু হলে বিমানবন্দর গোলচত্বর আরও ব্যস্ত ও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠবে। পথচারী আন্ডারপাস নির্মাণ শেষ হলে যাত্রীদের বেশির ভাগ চাপ নিচে চলে যাবে। উপরিভাগে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক ব্যবহারে যাত্রীদের স্বস্তি মিলবে।
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post