বরিশালের বানারীপাড়া উপজেলার বিশারকান্দি ইউপির চৌমুহনী বাজারের ওয়ার্কশপ মিস্ত্রি গোলাম মোস্তফা দুই বছরের বেশি সময় ব্যয় করে তিনি তৈরি করেছেন অভিনব এক বাহন। যা দেখতে অনেকটা বিমানের মতো। দূর থেকে বিমান মনে হলেও এটি আসলে অবসর কাটানোর নৌযান। নাম সুবর্ণা এক্সপ্রেস-২।
প্রকৌশল শাস্ত্রে গোলাম মোস্তফার কোনো একাডেমিক জ্ঞান নেই। ওয়ার্কশপে কাজ করতে গিয়েই যতটুকু শিখেছেন। লোহা-লক্করের সঙ্গেই তার বন্ধুত্ব প্রায় ২৭ বছরের।
অজোপাড়া গাঁয়ের এই মিস্ত্রি গতানুগতিক কাজে যখন হাঁপিয়ে ওঠেন তখন নিজের মতো করে নতুন কিছু তৈরি করেন। কখনো কৃষকের জন্য, কখনো জেলের জন্য, কখনো নিছক আনন্দের জন্য।
বিশারকান্দিতে গোলাম মোস্তাফার চেয়ে মোস্তাফা ফিটার বা ফাইন্ডার নামেই বিখ্যাত তিনি। ইঞ্জিনের দক্ষ মেকানিককে ফিটার বা ফাইন্ডার বলা হয়।
গোলাম মোস্তাফা বলেন, ‘আমরা গ্রামের খেটে খাওয়া মানুষ। চাইলেইতো আর বিমানে উঠতে পারতেছি না। বিমানে ঘুরে বেড়ানো ব্যয়বহুল। অনেক টাকা-পয়সা দরকার। এতো টাকা পাব কোথায়?
চিন্তা করলাম বিমানে উঠার সক্ষমতা না থাকলেও নিজে একটা বিমানের মতো কিছু একটা তৈরি করি। যেটি নদীতে চলবে। নিজেও চড়তে পারলাম আর লোকজন বলবে বিমান আসছে। একেবারেই খেয়ালখুশিতে এটি তৈরি করেছি।’
তিনি বলেন, এক সময় অন্যের ওয়ার্কশপে কাজ করতাম। এখন চৌমুহনী বাজারে নিজের ওয়ার্কশপ আছে। কাজের চাপ না থাকলে স্টিল বা লোহা দিয়ে নিজের মনের মতোই কিছু তৈরি করি।
এর আগে স্টিলের লাঙল বানিয়েছি। সাধারণত কৃষকরা ভালো ও মজবুত লাঙলের সংকটে থাকেন। তাছাড়া বছরে বছরে কাঠের লাঙল বদলাতে হয়। স্টিলের লাঙল দীর্ঘস্থায়ী। ধারালো হওয়ায় সহজেই গভীরভাবে জমি চাষ করা যায়।
গোলাম মোস্তাফা বলেন, দক্ষিণাঞ্চল নদী প্রধান হওয়ায় নৌকা এখনো জনপ্রিয় পরিবহন। কিন্তু দেখা যায় অধিকাংশ নৌকা কয়েক বছরের মধ্যে নষ্ট হয়ে যায়।
নৌকা যদি কাঠের বডি না হয়ে লোহার বডি হয় তাহলে দীর্ঘদিন ব্যবহার করা যায়। এই কথা চিন্তা করে লোহার নৌকাও তৈরি করেছি।
তিনি বলেন, অনেক অঞ্চলে ধানের জমিতে পানির উচ্চতা বেশি হওয়ায় সাধারণ ট্রাক্টর চাষ দিতে পারে না। সঠিক সময়ে চাষ না দিলে ফসল উঠাতেও দেরি হয়। ভালো ফসলও পাওয়া যায় না। নিম্নাঞ্চলের কথা চিন্তা করে ভাসমান ট্রাক্টর বানিয়েছি। তারই ধারাবাহিকতায় নদীর প্লেন তৈরি করি।
২০২২ সালে মাথায় চিন্তা আসে বিমান বানালে কেমন হয়? কিন্তু আকাশে উড়তে পারবে এমন বিমানতো আমার দ্বারা বানানো সম্ভব না। বিকল্প হিসেবে বায়ুর জগত বাদ দিয়ে পানির জগতে বিমান তৈরির পরিকল্পনা করি। একটু একটু করে প্রায় দুই বছর কাজ করে বিমানটির কাজ শেষ করি।
প্রথমে মানুষ অনেক প্রশ্ন করতো, কী বানাচ্ছি? পূর্ণাঙ্গ করার আগ পর্যন্তও মানুষ ধারণা করতে পারেনি আসলে কী হচ্ছে। বিমানটি চলাচল উপযোগী করতে দুই লাখ ৭০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। আমি মনে করি সঠিকভাবে পৃষ্ঠপোষকতা পেলে মানুষের উপকারে আসে এমন টেকসই বাহন উদ্ভাবন করতে পারব।
১৮ জন যাত্রী নিয়ে ২৪ ঘণ্টাই নৌপথে চলাচলের সক্ষমতা রয়েছে গোলাম মোস্তাফার বিমানের। ইঞ্জিনচালিত এই বাহনটি এখন পর্যন্ত নিজেই পরিচালনা করছেন তিনি।
সদ্য সমাপ্ত বানারীপাড়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে উড়োজাহাজ প্রতীকের প্রার্থী মোস্তাফা ফিটারের তৈরি বাহনটি ব্যবহার করেন।
বাইশারী ইউপির ৫ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য নান্না তালুকদার বলেন, মরিচবুনিয়ার বাসিন্দা মোস্তাফার বানানো নদীর বিমানটি এলাকায় খুবই জনপ্রিয়। অনেকেই বিমানটি দেখতে আসে। চড়ে ঘুরে বেড়াতে আসে। মোস্তফা গ্রামের ছেলে হলেও তার মধ্যে উদ্ভাবনী প্রচেষ্টা আছে। এর আগে আরো কয়েকটি জিনিস উদ্ভাবন করেছিল, যা উপকারী।
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post