গাজীপুরের কালিয়াকৈরে সাপের কামড়ে মৃত সাইফুল ইসলাম (৪০) নামের এক যুবককে ঝাড়ফুঁকের মাধ্যমে জীবিত করার আয়োজন করেন এক ভুয়া কবিরাজ। পরে কড়ি (ছোট শামুকের খোল) আনার কথা বলে ১৫ হাজার টাকা নিয়ে পালিয়ে যান।
রোববার (৩০ জুন) দিবাগত রাতে তার দফন সম্পন্ন হয়।
সাইফুল ইসলাম পেশায় একজন রাজমিস্ত্রি ছিলেন। তিনি কালিয়াকৈর উপজেলার বাসুরা গ্রামের ইউনুছ আলীর ছেলে।
এলাকাবাসী ও নিহতের স্বজনরা জানান, সাইফুল শুক্রবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে হাতে টেঁটা নিয়ে প্রতিবেশীদের সঙ্গে মাছ ধরতে বাড়ির পাশের একটি বিলে যান। যাওয়ার পথে হঠাৎ সাইফুলের বাম পায়ে বিষধর একটি সাপ কামড় দেয়। এরপর সঙ্গে থাকা অন্য ব্যক্তি টেঁটা দিয়ে সাপটি মেরে ফেলেন। পরে মৃত সাপটি নিয়ে সাইফুল বাড়িতে ফিরে স্বজন ও এলাকাবাসীকে ঘটনাটি জানান। পরে স্বজনরা তাকে কবিরাজের কাছে নিয়ে যান।
ঝাড়ফুঁক শেষে কবিরাজের বাড়ি থেকে রাতেই তাকে টাঙ্গাইলের মির্জাপুরের কুমুদিনী হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শনিবার সকালে তার মৃত্যু হয়। হাসপাতাল থেকে অ্যাম্বুলেন্সে মরদেহ বাড়িতেও নিয়ে আসেন স্বজনরা। দুপুর দুইটাই জানাজার সময় নির্ধারণ করা হয়। এমনকি দাফনের জন্য কাফনের কাপড়ও পরানো হয়।
এমন সময় এক কবিরাজ তাদের বাড়িতে আসেন। পরে তিনি বলেন, এই লাশ এখনো মরেনি। মৃত ব্যক্তিদের শরীর শক্ত হয়ে যায় কিন্তু তার শরীর শক্ত হয়নি। ঘুমন্ত মানুষের মতো নড়াচড়া করছে। কড়ি নিয়ে এসে ঝাড়ফুঁক করলে তাকে সুস্থ করা সম্ভব।
কবিরাজের এমন কথার পর মরদেহ দাফন বন্ধ করা হয়। পরে কবিরাজের কথামতো খোলা মাঠের মধ্যে কলা গাছ, দুধ, মহিষের শিংসহ বিভিন্ন আয়োজন করা হয়। কবিরাজের চিকিৎসার খবর চারদিকে ছড়িয়ে পড়লে আশপাশ থেকে শতশত লোক তাদের বাড়িতে ভিড় করতে থাকেন। এমন সময় কবিরাজ তাদের জানায় তার চিকিৎসার জন্য কড়ি প্রয়োজন। এটি সাভারে পাওয়া যেতে পারে, এর জন্য কমপক্ষে ১৫ হাজার টাকা লাগবে। কবিরাজের কথা মতো তাকে ১৫ হাজার টাকা দিয়ে পাঠানো হয় সাভারে। বিকেল পেরিয়ে সন্ধ্যা হতে থাকে। সন্ধ্যা গড়িয়ে রাত বারোটা বেজে গেলেও সেই কবিরাজ আর ফিরে আসেনি।
নিহতের ভাই আলী হোসেন বলেন, কলাগাছ, দুধ, নতুন সিলভারের কলসিসহ অনেক কিছু ব্যবস্থা করেছি। পরে ওঝা বলে তার চিকিৎসার জন্য কড়ি লাগবে। ভালো কড়ি নাকি পাওয়া যায় সাভারে। কড়ি আনতে গিয়ে সে আর ফিরে আসেনি। পরে গ্রামবাসী ও সবার পরামর্শে রাতে জানাজা শেষে দাফন সম্পন্ন করা হয়।
কালিয়াকৈর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এ এফ এম নাসিম গণমাধ্যমকে বলেন, শনিবার সন্ধ্যায় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক ওই বাড়িতে গিয়েছিলেন। কিন্তু মৃত ব্যক্তির স্বজনেরা লাশ ধরতে দেননি। ওঝা নাকি তাদের বলে গেছেন, চিকিৎসা শেষ করার আগপর্যন্ত এই লাশ ধরা যাবে না। ওই ওঝা কড়ি আনার কথা বলে আর ফিরে আসেননি। পরে স্বজনেরা লাশ দাফন করেছেন।
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post