দেশের মোট অভিবাসীর মধ্যে ৫৮ দশমিক ২৪ শতাংশ ঋণ করে প্রবাসে যান। এর মধ্যে গ্রামের ৬০ দশমিক শূন্য ৭ শতাংশ আর শহরের ৫১ দশমিক ৮৩ শতাংশ মানুষ রয়েছেন।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) আর্থসামাজিক ও জনমিতিক জরিপ প্রতিবেদন সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, ঋণ করে প্রবাসে যাওয়া কর্মীদের মধ্যে ৫৮ দশমিক ৭৪ শতাংশ পুরুষ রয়েছেন। আর নারীর হার ৩৭ দশমিক ৯৮ শতাংশ।
এ ক্ষেত্রে বরিশাল বিভাগের অভিবাসীদের মধ্যে ঋণ করে অভিবাসন বাবদ ব্যয় নির্বাহের হার সর্বোচ্চ, ৬৮ দশমিক ৫১ শতাংশ। অন্যদিকে সিলেটে সর্বনিম্ন ৪৬ দশমিক ৩৭ শতাংশ।
জরিপে দেখা গেছে, জাতীয় পর্যায়ে ৫৮ দশমিক ২৪ শতাংশ, গ্রামে ৬০ দশমিক ০৭ শতাংশ এবং শহর এলাকার ৫১ দশমিক ৮৩ শতাংশ তাদের অভিবাসন ব্যয় মেটানোর জন্য ঋণ গ্রহণ করেছেন।
প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, বিদেশ যাওয়ার আগে এনজিও, ব্যাংক, জমি বন্ধক ও চড়া সুদে ঋণ করেন প্রবাসীরা। এতে প্রকারভেদে জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি, জমির দলিল, ভিসা ও পাসপোর্টের ফটোকপি জমা দিতে হয়। তার বিনিময়ে মেলে লাখ টাকা। সেই টাকায় দালালদের মাধ্যমে বিদেশে যান প্রবাসীরা। এরপরই শুরু হয় ঝামেলা।
এদিকে নির্দিষ্ট সময়ে টাকা দিতে ব্যর্থ হলে বাড়ির গরু-ছাগল, গহনা ও জমি বিক্রির চাপ দেওয়া হয়। এ ছাড়া নানা ভয়ভীতি দেখানো হয়। বাধ্য হয়ে ভুক্তভোগীরা নিজের শেষ সম্বল বিক্রি করে টাকা পরিশোধ করেন। এলাকার প্রভাবশালীরা এসব কাজে জড়িত বলে জানিয়েছেন একাধিক ভুক্তভোগী। বিদেশগামী মানুষদের স্বপ্নকে কাজে লাগিয়ে চড়া সুদে টাকা দিয়ে থাকে কারবারিরা।
অভিবাসন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ঋণ করে হলেও বিদেশে যেতে পারলেই বদলাবে ভাগ্যের চাকা, অল্প দিনেই হওয়া যাবে বিত্তবৈভবের মালিক। সচ্ছলতা ফিরবে সংসারে, হওয়া যাবে বাড়ি-গাড়ির মালিক। এমন রঙিন স্বপ্নে বিভর হয়ে প্রতি বছর হাজার হাজার মানুষ বিদেশে পাড়ি জমান। তবে অনেকের স্বপ্নই দুঃস্বপ্নে পরিণত হয়।
মাদারীপুর ও শরীয়তপুরের একাধিক যুবকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিদেশযাত্রায় মোটা অঙ্কের টাকা জোগাড়ে বিভিন্ন পন্থা অবলম্বন করেন অভিবাসনপ্রত্যাশীরা। জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি, ভিসা বা পাসপোর্টের ফটোকপি, জমির দলিল জমা ও স্ট্যাম্পে সই দিলেই প্রথম পর্যায়ে চড়া সুদে মিলে ৪-৫ লাখ টাকা।
জানা গেছে, মাদারীপুরের পাঁচটি উপজেলার মধ্যে সুদে টাকা লেনদেনের শীর্ষে রয়েছে ডাসার। নতুন উপজেলা হওয়ায় সেখানে এনজিওর সংখ্যা তুলনামূলক কম। আর জেলার সদর, রাজৈর ও কালকিনি উপজেলায় এনজিওর সংখ্যা বেশি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক সুদ কারবারি বলেন, এটা আমার ব্যবসা, নিজের টাকা দিয়ে ব্যবসা করি। আমরা এনজিওর মতো শর্ত দিয়ে টাকা দিই না। টাকা দেওয়ার সময় শুধু একটা ব্যাংক চেক, সাক্ষী কিংবা স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর নেয়া হয়। মানুষের সামর্থ্য অনুযায়ী টাকা দিয়ে থাকি। আর এ তালিকায় অগ্রাধিকার দিই বিদেশগামীদের।
ঋণের সহজলভ্যতার বিষয়ে জানতে চাইলে মাদারীপুরের মোস্তফাপুর ইউনিয়নের একটি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা (এনজিও) সোসাইটি ফর সোশ্যাল সার্ভিসের (এসএসএস) ব্যবস্থাপক মো. মুকুল দেশ বলেন, আমরা ক্ষুদ্র ঋণে সর্বোচ্চ ১ লাখ টাকা দিয়ে থাকি। তবে বিদেশগামীদের ক্ষেত্রে বৈধ কাগজপত্র দেখে ৫ লাখ পর্যন্ত ঋণ দিই।
মাদারীপুর সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ওবায়দুল রহমান খান বলেন, জেলার বহু তরুণ ঋণ করে বিদেশে পাড়ি জমায়। এতে প্রভাবক হিসেবে কাজ করে সুদ কারবারিরা। তারা শুরুতে তরুণদের অর্থের নিশ্চয়তা প্রদান করে প্রলোভন দেখায়। এতে উৎসাহিত হয়ে অনেক তরুণ বিদেশে যাওয়ার জন্য বাবা-মাকে চাপ দেয়। বাধ্য হয়ে অভিভাবকরা সুদ কারবারিদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে তা সন্তানদের হাতে তুলে দেয়।
তিনি বলেন, এ সংক্রান্ত থানায় অনেক মামলা রয়েছে। আবার কিছু ঘটনা স্থানীয় সালিশের মাধ্যমেও সমাধান করা হয়। অনেক সুদকারবারি জেল খেটে এসে একই কাজের সঙ্গে ফের জড়িত হয়।
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post