দেশে বিষধর রাসেলস ভাইপারের সংখ্যা বাড়ছে। সাপটি দংশনের সময় সর্বোচ্চ পরিমাণে বিষ ঢেলে দেয়। তাই দ্রুততম সময়ে চিকিৎসা নিতে না পারলে প্রাণহানির ঝুঁকি বাড়ে। গত বছর ২০টি জেলায় ভয়ঙ্কর রাসেল’স ভাইপার পাওয়া গেলেও বর্তমানে এ সাপ ছড়িয়ে পড়েছে আরো ১০টি জেলায়। দেশে এখন ২৮ জেলায় ছড়িয়ে পড়েছে রাসেল’স ভাইপার।
দেশের বিভিন্ন জেলার নদীকেন্দ্রিক এলাকা ও চরাঞ্চলে মূর্তিমান আতঙ্ক হিসাবে ধরা দিয়েছে বিষধর সাপ রাসেল’স ভাইপার (চন্দ্রবোড়া)। কয়েক সপ্তাহে এ সাপের কামড়ে কৃষকসহ কয়েকজনের মৃত্যু হয়েছে। সাপটির কামড়ে ইতোমধ্যে পঙ্গু হয়েছেন অনেকে। অনেকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছেন। রাসেল’স ভাইপারের ভয়ে কয়েকটি এলাকায় কৃষক পাকা ধান কাটতে যাচ্ছেন না।
এসব জেলায় মূলত নদী অববাহিকা ও নদীতীর থেকে দেড় কিলোমিটারের ভেতরে এদের পাওয়া গেলেও আশঙ্কা করা হচ্ছে, সাপটি ধীরে ধীরে তার বিস্তৃতি ও প্রজনন বাড়িয়ে আরও ছড়িয়ে পড়তে পারে। দেশে জন্ম নেয়া রাসেল’স ভাইপারের মধ্যে ৭৮ শতাংশই স্ত্রী প্রজাতির। এখনই যথাযথ ব্যবস্থা না নিলে আগামী দিনে রাসেল’স ভাইপারের কামড়ে মানুষের মৃত্যু বেড়ে যাবে। এ সাপের কামড়ে সবচেয়ে বেশি মৃত্যুর দুই দেশ ভারত ও শ্রীলংকার চেয়েও বেশি হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। কারণ, দেশে অনেক এলাকায় জনসংখ্যার ঘনত্ব এ দুই দেশের চেয়ে বেশি।
এখন পর্যন্ত দেশের ২৮টি জেলায় রাসেল’স ভাইপারের অবস্থান, কামড়, মৃত্যু ও হতাহতের খবর পাওয়া যায়। জেলাগুলো হলো নওগাঁ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, রাজশাহী, নাটোর, পাবনা দিনাজপুর, কুষ্টিয়া, মেহেরপুর, চুয়াডাঙ্গা, ঝিনাইদহ, যশোর, খুলনা, সাতক্ষীরা, রাজবাড়ী, ফরিদপুর, মাদারীপুর, শরীয়তপুর, মানিকগঞ্জ, ঢাকা, মুন্সীগঞ্জ, বরিশাল, ভোলা, পটুয়াখালী, ঝালকাঠি, চাঁদপুর, লক্ষ্মীপুর, নোয়াখালী ও চট্টগ্রাম।
ধারণা করা হয়, ২০০৯ সালে ফারাক্কার সব বাঁধ খুলে দেয়ায় বিহারসহ ভারতের বিভিন্ন এলাকার নদী অববাহিকা ধরে বাংলাদেশে রাসেল’স ভাইপার নতুন করে প্রবেশ করে। সেসময় চাঁপাইনবাবগঞ্জ, গোদাগাড়ি (যে অংশে পদ্মা নদীর প্রবেশ) এবং বরেন্দ্র অঞ্চলে সাপটির দেখা মেলে। সাপটির কামড়ে কয়েকজন মারাও যান তখন। রাসেল’স ভাইপার নিয়ে শুরু থেকেই গবেষণা করছেন রাজশাহীর সাপ বিশেষজ্ঞ বোরহান বিশ্বাস রোমন।
তিনি বলেন, দেশে রাসেলস ভাইপারের বিস্তৃতি দিনদিন বেড়েই চলেছে। এখন পর্যন্ত সাপটি মূলত নদী অববাহিকায় নদীর দুই তীর থেকে এক-দেড় কিলোমিটারের মধ্যে পাওয়া যাচ্ছে। নদীর চরাচঞ্চলেও এদের অবাধ বিচরণ। এরা আগামী দিনে ধীরে ধীরে আরও ছড়িয়ে যাবে বলে মনে করি। খাবারের খোঁজে বা প্রজননের তাগিদে প্রতিবছর যদি আধা কিলোমিটার বা এক কিলোমিটার করেও নদী অববাহিকা থেকে ভেতরে প্রবেশ করতে থাকে, তাহলে আগামী ১০ বছরে বিস্তৃত এলাকায় ছড়িয়ে যাবে।
এই গবেষক বলেন, আমরা পদ্মাকেন্দ্রিক ৭-৮ বছরের ডেটা কালেক্ট করেছি। দেখা যাচ্ছে, রাসেল’স ভাইপারের জুভেনাইল বেবিদের (দেশে জন্ম নেওয়া এবং বছরের বাচ্চা বা গত বছরের বাচ্চা) মধ্যে ৭৮ ভাগই স্ত্রী প্রজাতির। এতে বোঝা যায়, এ সাপের প্রজনন দেশে আরও বাড়বে। এরা পদ্মার বিভিন্ন চরে কাশবন, ছায়ায় থাকত। সাম্প্রতিক বছরগুলোয় এ কাশবন কেটে কৃষিজমির আওতায় আনা হয়েছে। এ কারণেও সাপগুলো ধানখেত, কৃষিজমিতে বাসা বেঁধেছে, খাবার খোঁজ করছে। বিশেষ করে ধান কাটতে গিয়ে রাসেল’স ভাইপারের কামড়ের শিকার হচ্ছেন কৃষক।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশে প্রায় ১০৪ প্রজাতির সাপ পাওয়া যায়। এরমধ্যে ৩০ প্রজাতির সাপ বিষধর। সবচেয়ে বিষধর হলো রাসেলস ভাইপার। চট্টগ্রামের ভেনম রিসার্চ সেন্টার তাদের ওয়েবসাইটে জানিয়েছে, শুধু বাংলাদেশ নয়, ভীষণ রকমের বিষাক্ত রাসেলস ভাইপার আছে ভারত, ভুটান, থাইল্যান্ড, কম্বোডিয়া, চীন ও মিয়ানমারে। এ সাপ সাধারণত ঘাস, ঝোপ, বন, ম্যানগ্রোভ ও ফসলের খেতে বাস করে।
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন news@probashtime.com মেইলে।
Discussion about this post