‘প্রতিটি দিন আমরা উন্নতি করতে চাই। ভালো করতে চাই। স্কিল তো আছে, সেটা সমস্যা নয়। তবে নিবেদনটা ব্যাপার! আর শেখার ইচ্ছাটা। কখনো শেখা থামাবো না।’
অ্যান্টিগা রিক্রিয়েশন গ্রাউন্ড থেকে ক্রিকেট বিদায় নিয়েছে আগেই। দেশটির মূল ভেন্যু এখন স্যার ভিভিয়ান রিচার্ডস স্টেডিয়াম। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ওমানের ম্যাচের সময় সেখানে ক্রমাগত ঢাকঢোল বেজে চলেছে, তার মধ্যে কার্টলি অ্যামব্রোসের বলা ওপরের কথাগুলো শুনতে একটু কান খাড়া করতে হয়। আইসিসির পোস্ট করা ভিডিওতে অবশ্য সাবটাইটেল থাকায় সুবিধা।
অ্যামব্রোসের বলা কথাগুলোর শ্রোতা ওমান পেসার কলিমউল্লাহ। ৩৩ বছর বয়সী পেসারের জন্ম পাকিস্তানের গুজরানওয়ালাতে। সেখানে বয়সভিত্তিক ক্রিকেট খেলেছিলেন, এরপর পাড়ি জমান ওমানে। সাত বছর ধরে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলছেন ওমানের হয়ে। অ্যামব্রোস যে নতুন কিছু বলেছেন, তা নয়। তবু তাঁর মুখ থেকে এমন কিছু শোনা নিশ্চয়ই সামনে কাজে দেবে কলিমউল্লাহর। মনোযোগ দিয়ে তাই ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও ক্রিকেট-বিশ্বের অন্যতম সেরা ফাস্ট বোলারের কথা শুনছিলেন। আর একটু পরপর তাকাচ্ছিলেন পাশে থাকা একজনের দিকে। ভিডিও দেখেই বোঝা যায়, অ্যামব্রোস ও কলিমউল্লাহর মাঝখানে দোভাষী হয়ে কাজ করছিলেন টিম স্টাফের ওই সদস্য।
ওমানের মতো দেশ ক্রিকেটে উপমহাদেশ থেকে যাওয়া ‘প্রবাসী ক্রিকেটার’দের ওপর নির্ভরশীল। মূলত পাকিস্তান ও ভারতের ক্রিকেটাররাই আছেন বিশ্বকাপ দলে। তবে একেকজন একেক অঞ্চল থেকে। দলটিতে তাই আছে ভাষার বৈচিত্র্যও। আইসিসির আরেক ভিডিওতে সাবেক অধিনায়ক জিশান মাকসুদ যেমন বলেছেন দলের খেলোয়াড়দের মধ্যে প্রচলিত পাঁচটি ভাষার কথা—পশতু, পাঞ্জাবি, উর্দু, ইংরেজি ও আরবি। জিশান আবার মোটামুটি পাঁচটি ভাষাই পারেন, ওই ভিডিওতে এসব ভাষায় একটু করে কথাও শুনিয়েছেন। ‘বহুজাতিক’ দল তো ক্রিকেটে অনেকগুলোই আছে। তবে ওমান আদতে বহু ভাষার দল!
ওমান যে এবারই বিশ্বকাপ প্রথম খেলল, তা নয়। ২০১৬ ও ২০২১ সালেও খেলেছে দলটি, এবার তো বিশ্বকাপে এসেছিল বাছাইপর্বে এশিয়ার চ্যাম্পিয়ন হয়েই। গত দুই আসরে একটি করে জয় থাকলেও এবার সেটি শূন্যই থাকছে দলটির। অন্তত শেষটি ইতিবাচক হোক, এমন আশা থাকলেও ইংল্যান্ডের কাছে শেষে এসে স্রেফ উড়ে যেতে হয়েছে তাদের। অবশ্য সব কটি ম্যাচই যে এমন একপেশে ছিল, তা নয়। নামিবিয়ার সঙ্গে প্রায় জেতা ম্যাচটি টাই হওয়ার পর সুপার ওভারে গিয়ে হারে তারা। অস্ট্রেলিয়াকে চাপে ফেলেছিল, স্কটল্যান্ডের সঙ্গেও সুযোগ হারানোর আক্ষেপ সঙ্গী তাদের। তাতে ব্যাটিংয়ের বড় দায় দেখলেও ইতিবাচক দিকও খুঁজে পেয়েছেন ওমান অধিনায়ক আকিব ইলিয়াস, ‘বোলাররা সত্যিই অনেক ভালো করেছে। তবে আমরা ফিল্ডিং নিয়ে আরও কাজ করতে পারি। তিন ম্যাচে বোধ হয় আট-নয়টি ক্যাচ ফেলেছি।’
ইংল্যান্ডের বিপক্ষে মার্ক উড ও জফরা আর্চারের গতি সামলাতে হিমশিম খেয়েছে ওমান। এমন গতির বল খেলার অভ্যাস যে নেই, আকিব সেটি স্বীকার করেছেন নিজেই, ‘সহযোগী দেশ হিসেবে তো আমরা ঘণ্টায় ১৪০ কিলোমিটার গতির বল নিয়মিত খেলি না। তবে আমরা অনেক ইতিবাচক দিক খুঁজে পেয়েছি। আমরা অনেক খেলোয়াড়ের সঙ্গে কথা বলেছি, আরও ভালো কী করতে পারি, সেটি জেনেছি। আমরা কোথায় দাঁড়িয়ে, আমাদের শারীরিক ও মানসিক শক্তির কোন জায়গা নিয়ে কাজ করতে হবে।’
আইসিসির পূর্ণ সদস্যদেশগুলোর মধ্যে এর আগে শুধু আফগানিস্তান, বাংলাদেশ ও আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে খেলার অভিজ্ঞতা ছিল ওমানের। ফল যেমনই হোক, এবার সে অভিজ্ঞতা হলো দুই বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষেও। সে শিক্ষা এখন ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় যে ভাষা, সেই ব্যাট-বলে অনূদিত করার পালা বহু ভাষার দল ওমানের।
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post